দেশজুড়ে

গুদামের ভালো চালের সঙ্গে ২০ টন পচা চাল মেশালেন সরকারি কর্মকর্তা

সরকারি খাদ্যগুদামের ভালো চালের সঙ্গে ২০ টন পচা চাল মিশিয়েছেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ একরাম হাসান খান।

Advertisement

শ্রমিক দিয়ে খাদ্যগুদামে রাখা ভিজিডির চালের সঙ্গে পচা চাল মিশিয়ে বস্তায় ভরছিলেন স্থানীয় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ একরাম হাসান। তিনদিন ধরে খাদ্যগুদামে ভালো চালের সঙ্গে পচা চাল মেশানোর খবর পেয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জাহিদ ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে খাদ্যগুদামের ভালো চালের সঙ্গে পচা চাল মিশিয়ে বস্তায় ভরার ঘটনার সত্যতা পান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

এ সময় পচা ৪২ বস্তা চাল খাদ্যগুদামের ভেতরে ছিল। আরও বেশকিছু পচা চালের সঙ্গে ভালো চাল মেশানো অবস্থায় মেঝেতে পড়েছিল। সেগুলো বস্তায় ভরা হচ্ছিল। উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে নিম্নমানের ওই সব চাল বস্তাভর্তি করতে পারেননি শ্রমিকরা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের বিষয়টি জানান।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ একরাম হোসেন খান বলেন, চলতি বছর ৩৮৫ মেট্রিক টন চাল কেনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০২ মেট্রিক টন চাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাই নূরুজ্জামানের মালিকানাধীন কুসুমদি গ্রামে অবস্থিত ‘নূর অ্যান্ড ব্রাদার্স রাইসমিল’ এবং ফজলুর রহমানের ‘বিসমিল্লাহ রাইসমিল’ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

Advertisement

খাদ্যগুদামের বাকি চাল কোথা থেকে কেনা হয়েছে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ একরাম হোসেন।

সরকারি গোডাউনে ভালো চালের সঙ্গে পচা চাল মেশানোর প্রসঙ্গে এই খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় মিলারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত চাল সব বস্তা পরীক্ষা করা হয় না। এই কারণে এমনটি হয়েছে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুর রহমান বলেন, ভালো চালের সঙ্গে পচা চাল মেশানোর খবর পেয়ে গোডাউনে যাই। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে ইউএনওকে জানাই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ একরাম হোসেন খান ২০ টন পচা চাল ভালো চালের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। তিনি কেন মানুষকে এভাবে ঠকিয়ে যাচ্ছেন তা স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে।

Advertisement

ফরিদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো সাহিদার রহমান বলেন, খবর পেয়েই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত টিম গঠন করা হবে। ভালো চালের সঙ্গে পচা চাল মেশানোর প্রমাণ পেয়েছি আমরা। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা দোষী প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হেবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকার বলেন, খাবার চালে ভেজাল বা পচা চাল মেশানো ঘটনার সত্যতা মিললে ছাড় দেয়া হবে না; সে যেই হোক। সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে পার পাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বি কে সিকদার সজল/এএম/পিআর