সোমবার সকাল থেকেই বৃষ্টি। কখনও মুষুলধারে।কখনও আবার থেমে থেমে। সোনাতলায় দুপুর পর্যন্ত চলে এমন অবস্থা। বৈরি এ আবহাওয়ার মধ্যেই চলছে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ, সরবরাহ এমনকি নিরাপত্তাকর্মীদের ডিডটি বন্টন। বন্যা ও করোনার প্রার্দুভাব এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া মাথায় নিয়ে ও ভোটারদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি।
Advertisement
নির্বাচন নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সোমবার সকালে নির্বাচনী কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রত্যেকটি কেন্দ্র স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, হ্যান্ডগ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন জানান, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোটের ব্যালট যাবে নির্বাচনের দিন সকালে। ১০টি পয়েন্ট থেকে ভোটের দিন অন্যান্য কেন্দ্রে ব্যালট বিতরণ করা হবে। নির্বাচনে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সময়সীমা উর্ত্তীণ হওয়ার পর বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন বয়কট করেছেন।
বর্তমানে ৫ জন প্রার্থী উপনির্বাচনে লড়ছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত সাংসদ আব্দুল মান্নানের সহধর্মিণী সাহাদারা মান্নান (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোকছেদুল আলম (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ (ট্রাক), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী প্রভাষক নজরুল ইসলাম (বটগাছ) ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের মো. রনি (বাঘ)।
ভোটকেন্দ্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য সোমবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের ব্রিফিং করেন গাবতলি সার্কেলের এএসপি সাবিনা ইয়াসমিন। এসময় সারিয়াকান্দি থানা পুলিশের ওসি আল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
এদিকে নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে আইনানুগ দিক নির্দেশনা প্রদানের জন্য সারিয়াকান্দিতে ১৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও ৫৯৭ পুলিশ সদস্য, ৮ প্লাটুন বিজিবি ও ৭৭০ জন আনসার সদস্যদের নিয়োগ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৭০টি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চরাঞ্চলে ভোট কেন্দ্র ১৭টি। পুলিশের হিসাব অনুয়ায়ী বগুড়া-১ আসনের ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) এবং ২৭টি সাধারণ হিসেবে চিন্তিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে সবমিলিয়ে ১ হাজার ২০০ পুলিশ এবং দুই হাজার আনসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ আসনে মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৯২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দি ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫২ জন এবং সোনাতলায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫৬ জন।
সোনাতলা থানা পুলিশের ওসি আবদুল্লাহ আল মাসউদ চৌধুরী জানান, নির্বাচনে উপলক্ষে তিন স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর আলম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রাসেল মিয়া জানান, নির্বাচনে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
Advertisement
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জানুয়ারি সাংসদ আবদুল মান্নানের মৃত্যুর কারণে আসনটি শূন্য হয়। নির্বাচন কমিশন ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণা করে। ৯মার্চ প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থীরা। মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়ায় প্রার্থীদের প্রচারে ভাটা পড়ে। ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
বগুড়া-১ আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এএসএম জাকির হোসেন জানান, ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ হয়েছে। এ আসনে ১০টি কেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই নির্বাচনী সামগ্রী কেন্দ্রে পাঠানো শুরু হয়েছে। শুধু ব্যালট পেপার যাবে ভোটের দিন। আর বন্যার পানিতে ডুবে থাকা কেন্দ্রগুলো অপেক্ষাকৃত উঁচুস্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এমএএস/পিআর