দেশজুড়ে

সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহী শিশু পরিবার

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রাজশাহী শিশু পরিবার। এখন নানান সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। নিবাসীদের আবাসিক ভবন পরিত্যক্ত হলেও নতুন ভবন নেই। পরিত্যক্ত ওই ভবনেই গাদাগাড়ি করে থাকছে ৭৭ শিশু। এছাড়াও জনবল কাঠামোতে ২৭ জনের বিপরীতে আছেন ১৭ জন। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক না হলেও ভাড়া জটিলতা আছে ঠিকই। কিন্তু নেই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ট্রেডের শেড, সংযোগ নেই বিদ্যুতের। অভিভাবকহীন শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৪৪ সালে ‘বঙ্গীয় এতিম ও বিধবা সদন’ আইনের মাধ্যমে সরকারি এতিমখানা ব্যবস্থা চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮১ সালে এগুলোর নাম পরিবর্তন করে শিশুসদন ও শিশু পরিবার করা হয়। এ প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে সারা দেশে ৮৫টি শিশুসদন ও শিশু পরিবার রয়েছে। এগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার অনাথ বা এতিম শিশু থাকার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে আসন ফাঁকা থাকে অধিকাংশ সদনে। রয়েছে জনবল কাঠামোতেও।রাজশাহী শহর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তরে পবা উপজেলার বায়া বাজার এলাকায় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের কোল ঘেঁষে রাজশাহী শিশু পরিবার অবস্থিত। ১৯৫৮ সালে ৩০ বিঘা জমির ওপর এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। ঊষালগ্ন থেকেই বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত আসন সংখ্যা ৪৫০। বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা ১৭৫ থাকলেও বর্তমানে নিবাসী রয়েছে মাত্র ৭৭ জন। এ সময়ে এমন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৯৮টি আসন শুন্য রয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে চৌকস শিক্ষকমণ্ডলী থাকলে হয়তো এখানেও ভর্তি যুদ্ধ চলতো বলে মনে করেন অভিজ্ঞজনরা।এই শিশু পরিবারে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক-কর্মচারীরা নানা সমস্যা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখে পড়েছেন। বিভিন্ন পদ শুন্য থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে না। এতে শিশুদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আবার এখানে কোনো ধরনের আবাসিক ভবন নেই। কিন্তু শুভংকরের ফাঁকিতে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মন্ত্রণালয়ের খাতা-কলমে আবাসিক ভবন আছে মর্মে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা ভাড়া সংক্রান্ত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জাগাে নিউজকে জানান, আবাসিক ভবনের কথা যেহেতু উল্লেখ আছে, সেহেতু ভবন তৈরির আগেই বরাদ্দকৃত অর্থলোপাটের ঘটনা থাকতে পারে। নইলে এত বছর পরেও এ সমস্যা থাকবে কেন?এখানে প্রাক বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। হাঁস, মুরগি পালন ট্র্রেডে শেড নেই। কক্ষ না থাকায় ইলেক্ট্রিক, সেলাই প্রশিক্ষণ ও ওয়েল্ডিং প্রশিক্ষণের যন্ত্রপাতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অকাজেই পড়ে থাকে।সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে, নিবাসীদের আবাসিক ভবনে। ১৯৭০ সালে নির্মিত ভবনটি পরিত্যক্ত হয়েছে অনেক আগেই। ভবনের ছাদের প্লাস্টার খসে পড়েছে। এরই মধ্যে চলছে ক্লাস। ওই ভবনেই চলছে প্রতিষ্ঠানের দাফতরিক কার্যক্রম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বারবার পরিদর্শন করেছেন। সম্প্রতি মহাপরিচালক গাজী নুরুল কবিরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। পরিপ্রেক্ষিতে ভবন ধ্বসের আতঙ্ক নিয়েই শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দিন পার করছেন। বর্তমানে শিশুরা থাকছেন অন্য ভবনের শ্রেণিকক্ষে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।এছাড়াও অনুমোদিত আসন ৪৫০টি হলেও বর্তমানে সেখানে ১০৫ শিশু রয়েছে। সমাজসেবা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, শিশুদের বসবাসের মাত্র দুটি কক্ষে ১শ এর বেশি শিশুকে থাকতে হয়। এখানে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসকারী শিশুর সংখ্যা কম। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশিরভাগের পদ শুন্য। শিশুসদনে তত্ত্বাবধায়ক, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক, একজন কারিগরি প্রশিক্ষক, মেট্রোন-কাম নার্স ও এমএলএসএসের পদ দীর্ঘদিন ধরে শুন্য। শিশুসদন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কোনো সুইপার বা ঝাড়ুদার নেই। গোপন সূত্রে জানা গেছে, অফিসে পিয়নের কাজ থেকে শুরু করে রান্নার কাজসহ সদনের বেশিরভাগ কাজ এখানকার শিশুদের দিয়েই করানো হয়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিশু পরিবারের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জাগো নিউজকে জানান, একই সময়ে ৩৫টি শিশু পরিবারের আবাসিক ভবন পরিত্যক্ত হয়। রাজশাহী ছাড়া খুলনা, দিনাজপুরসহ সকল স্থানে নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। রাজশাহী শিক্ষা নগরী হলেও এ প্রতিষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ সবসময়ই থেকেছেন উদাসীন। এখন জেলা শহরগুলোতে ছেলেদের শিশু পরিবারের পাশাপাশি মেয়েদের শিশু পরিবার রয়েছে। কিন্তু বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে তা নেই। কত কিছুর জন্য মানববন্ধন হয়। কিন্তু এই ভালো কাজের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ কেউ নিচ্ছেন না।এ ব্যাপারে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক (এডি) কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, রাজশাহী শিশু পরিবারের বেশকিছু বিষয়ে সমস্যা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তারা পরিদর্শন করেছেন। শীঘ্রই এই শিশু পরিবারের সমস্যা দূর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/পিআর

Advertisement