আন্তর্জাতিক

করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার ১৬ সপ্তাহ পর যা বললেন প্রথম স্বেচ্ছাসেবী

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে তৈরিকৃত যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি মডার্নার একটি ভ্যাকসিন প্রথমবারের মতো মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর ১৬তম সপ্তাহ চলছে। মডার্নার সেই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন দেশটির নাগরিক জেনিফার হলার।

Advertisement

১৬ সপ্তাহ পর এসে তিনি ওই ভ্যাকসিনের ব্যাপারে আশাব্যাঞ্জক তথ্য দিয়েছেন। জেনিফার হলার বলেছেন, আমার প্রথম ডোজ নেয়ার ১৬ সপ্তাহ পার হয়েছে। আমি চমৎকার বোধ করছি। ওয়াশিংটন রাজ্যের এই নারী দেশটির একটি প্রযুক্তিবিষয়ক স্টার্টআপের অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কোমো-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ভ্যাকসিনটির প্রথম ডোজ নেয়ার পর থেকে তিনি এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হননি।

চলতি বছরের ১৬ মার্চ ৪৩ বছর বয়সী জেনিফার হলার দেশটিতে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে করোনার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। বিশ্বখ্যাত মার্কিন ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি মডার্না এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ এমআরএনএ-১২৩৩ নামের ভ্যাকসিনটি প্রস্তুত করে।

হলার বলেন, ভ্যাকসিনটিতে আরএনএ মেসেঞ্জার ব্যবহার করা হয়েছে। আমার ধারণা এটি একেবারে নতুন এবং অনন্য। অন্যান্য ট্রায়ালে ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। করোনার অপর একটি ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন নীল ব্রাউনিং নামের এক স্বেচ্ছাসেবী। তিনি বলেন, মডার্না যেটি করেছে সেটি হলো আরএনএ মেসেঞ্জার। আপনার শরীর কারখানা হয়ে ওঠে। সেখানে এমন একটি কণা তৈরি হয়; যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। প্রায় এক মাসের মধ্যে সিয়াটলে ৪৫ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কাইসার পারমানেন্টে ওয়াশিংটন হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউট এই পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

Advertisement

হলার বলেন, মডার্না কয়েক সপ্তাহ প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিনটি গ্রহণকারী প্রথম ৮ জনের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ফলে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটি কার্যকর হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভ্যাকসিনটি হলারের শরীরে নতুন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু তিনি কোনও ধরনের সুযোগ নিচ্ছেন না জানিয়ে বলেন, আমিও বাইরে বের হলে অন্যদের মতো মাস্ক পরাসহ অন্যান্য সতর্কতা অবলম্বন করছি। আমি মনে করছি না যে, আমার বিশেষ ইমিউনিটি গড়ে উঠছে।

মার্কিন এই কোম্পানি চলতি মাসের শেষের দিকে ভ্যাকসিনটির তৃতীয় তথা শেষ ধাপের পরীক্ষা শুরু করবে। এবারে এই পরীক্ষায় ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং তার ফল আসার আগেই মার্কিন এই কোম্পানি দেশটির আরেক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ক্যাটালেন্টের সঙ্গে ইতোমধ্যে উৎপাদনের চুক্তি করেছে। প্রথম ১০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করা হবে বলে জানিয়েছে ক্যাটালেন্ট।

চলতি মাসের শুরুর দিকে মডার্নার সিইও স্টিফেন বান্সেল বলেছিলেন, তাদের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল আগামী নভেম্বরের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisement

এদিকে, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ছাড়াও বিশ্বের আরও বেশি কয়েকটি কোম্পানি করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ২০০ টি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চালু রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে অন্তত ২০টি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।

এসআইএস/এমএস