আন্তর্জাতিক

গ্লাভসে কমনীয়তা হারাচ্ছে ‘থাই ম্যাসাজ’

থাইল্যান্ডে ম্যাসাজ পার্লারের সামনে দাঁড়ালেই হাস্যোজ্জ্বল কোনও কর্মী এগিয়ে এসে করজোড়ে অভ্যর্থনা জানানোর রীতি বেশ পুরনো। জেসমিনের সুগন্ধিতে ভরপুর পার্লারে একবার ঢুকলে বের হতে মন চাইবে না সহজে। দক্ষ থাই কর্মীদের হাতে শরীর ম্যাসাজ করাতেই প্রতিবছর সেখানে ছুটে যান বহু পর্যটক। কিন্তু, করোনা মহামারির কারণে সেই পরিচিত দৃশ্যটা আর নেই।

Advertisement

এখন ম্যাসাজ পার্লার বা স্পা সেন্টারগুলোতে ফুলের সৌরভের চেয়ে নাকে বেশি আসবে জীবাণুনাশকের তীব্র গন্ধ। ম্যাসাজকর্মীদের মসৃণ হাতের বদলে শরীরে ছোঁয়া লাগবে রাবারের গ্লাভসের। প্রাণঘাতী ভাইরাসের কারণে ম্যাসাজের চিরায়ত নিয়মনীতি বদলে ফেলতে বাধ্য হয়েছে থাইল্যান্ড। সরাসরি মানুষের সংস্পর্শ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গ্লাভস পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ম্যাসাজকর্মীদের। ‘ল্যান্ড অব স্মাইল’-এ এখন মানুষের হাসিমুখটাও আর চোখে পড়বে না। কারণ, সবার মুখে মুখেই লেগে রয়েছে মাস্ক।

এতে স্বাস্থ্য-উন্নয়নভিত্তিক পর্যটনশিল্পে সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতা দুই পক্ষই পড়েছে বিপাকে। গ্রাহকরা ম্যাসাজে আগের সেই আরাম পাচ্ছেন না, আবার ক্রেতা কমে যাওয়া ও স্বাস্থ্যসুরক্ষায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ করা কঠিন হয়ে গেছে ব্যবসায়ীদের জন্য।

থাইল্যান্ডে ৭০টির মতো ম্যাসাজ পার্লার ও স্পা সেন্টার রয়েছে সিয়াম ওয়েলনেস গ্রুপের। এর সভাপতি উইবুন উতসাহাজিত বলেন, ‘এমন সংকট আমরা আগে কখনও দেখিনি। আমাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পদ্ধতি বদলাতে হয়েছে। প্রতিটি রুমে অতিবেগুনি রশ্মির মাধ্যমে জীবাণুমুক্তকরণ যন্ত্র বসিয়েছি, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা উপকরণ সরবরাহ করছি। এখন ব্যয় অনেক বেশি, কিন্তু ক্রেতা খুবই কম।’

Advertisement

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির জন্য স্বাস্থ্য-উন্নয়নভিত্তিক পর্যটনশিল্প টিকে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল ওয়েলনেস ইনস্টিটিউটের হিসাবমতে, ২০১৭ সালে এই খাত থেকে থাইল্যান্ড প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার আয় করেছে, যা ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার যুগ্ম আয়ের চেয়েও অনেক বেশি। এ খাতে কাজ করেন অন্তত ৫ লাখ ৩০ হাজার থাই নাগরিক, যা দেশটির মোট জনশক্তির প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া, থাইলান্ডের বার্ষিক জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ আসে এ শিল্প থেকে।

ম্যাসাজ, স্পাসহ বিভিন্ন ধরনের থেরাপি স্বাস্থ্য-উন্নয়নভিত্তিক পর্যটনশিল্পের অন্তর্ভুক্ত। শুধু ২ হাজার ৮০০ বিলাসবহুল স্পা সেন্টার থেকেই প্রতি বছর থাইল্যান্ডের আয় হয় অন্তত ১৩০ কোটি ডলার। এর বাইরে, দেশটিতে ম্যাসাজ আউটলেট রয়েছে আরও ১০ হাজারের মতো।

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত মাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের শর্তে খুলে দেয়া হয়েছে থাইল্যান্ডের ম্যাসাজ ও স্পা সেন্টারগুলো। ১ জুলাই থেকে সীমান্তও খুলে দেয়া হয়েছে বেশ কিছু দেশের জন্য। এরপরও সংকট কাটছে না এ শিল্পের।

থাইল্যান্ডের বেশিরভাগ ম্যাসাজ পার্লারই রাস্তার পাশের সাধারণ দোকানের মতো। সেখানে প্রতিঘণ্টায় ম্যাসাজের জন্য তিন থেকে ১০ ডলার পর্যন্ত বিল নেয়া হয়। পুরো আয় ম্যাসাজকর্মী ও দোকানমালিক ভাগাভাগি করে নেন। এধরনের ম্যাসাজ পার্লারের প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কর্মী ইতোমধ্যেই থাই সরকারের কাছে বেকারত্ব সুবিধার আবেদন করেছেন।

Advertisement

ব্যাংককের উপকণ্ঠে একটি ম্যাসাজ ও স্পা সেন্টারের মালিক নাত্থাউইপা সাঙ্কাকিত বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের বেশিরভাগ ম্যাসাজকর্মী নিজবাড়িতে চলে গেছেন। তারা ফিরে আসতে চাইলে স্বাগতম। কিন্তু, ক্রেতা কম থাকায় অনেকেই অন্য কাজের চেষ্টা করছেন।’ ধারণা করা হচ্ছে, ‘ট্রাভেল-বাবল এগ্রিমেন্ট’-এর আওতায় ভিনদেশি পর্যটকেরা হয়তো শিগগিরই থাইল্যান্ড ভ্রমণে ফিরবেন। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির ভয়ে কতজন ম্যাসাজ সেবা নেবেন তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।

বেইজিংয়ের মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ গাও জে হুই বলেন, ‘ম্যাসাজ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু এখন সেটির বিষয়েই সতর্ক হতে হচ্ছে।’

(ব্লুমবার্গ থেকে অনূদিত)

কেএএ/পিআর