আন্তর্জাতিক

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আদর্শ হতে পারে উহান: ব্লুমবার্গ

করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে ইতিহাসের অন্যতম বড় বিপর্যয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বেশিরভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমণ নিষিদ্ধ অধিকাংশ দেশে। এমন অভূতপূর্ব সংকট কাটানোর পথ খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। সেক্ষেত্রে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সবার আদর্শ হতে পারে উহান।

Advertisement

সম্প্রতি করোনার উৎস এ শহরটিতে অর্থনৈতিক গতি ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

অর্থনৈতিক কার্যক্রম ফের চালুর তিন মাস পর উহানের বর্তমান অবস্থা আশা দেখাচ্ছে সারাবিশ্বকে। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ৮ এপ্রিল লকডাউন তুলে নেয়া ছিল শহরটির জন্য বেশ কঠিন সিদ্ধান্ত। অবশ্য এতেই বোঝা গেছে, মহামারি নিয়ন্ত্রণে নিজেদের দক্ষতার ওপর তারা কতটা আত্মবিশ্বাসী।

লকডাউন তোলার পর থেকেই উহানে সামাজিক দূরত্বের কড়াকড়ি এবং শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়ে উঠেছে অনেকটাই নিয়মিত কার্যক্রম। তবে, গত মে মাসে সেখানে হঠাৎ করে আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে চাপে পড়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে ফিরিয়ে আনা হয় নিষেধাজ্ঞা, মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করা হয় শহরটির গোটা ১ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার। এরপর থেকে সেখানে আর করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি।

Advertisement

তবে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর পরও গত মে মাসে উহানে শিল্পোৎপাদন, খুচরাপণ্য বিক্রি, রপ্তানি সবকিছুই ছিল গত বছর একই সময়ের তুলনায় অনেক কম। বহু শিল্প-কারখানা, অফিস দ্রুতই পুরোদমে কাজে ফিরলেও ভোক্তা চাহিদা বাড়ার গতি বেশ কম। ৭৬ দিনের লকডাউনের পর বাইরে খাওয়া-দাওয়া বা শপিংয়ের অভ্যাস বদলে গেছে অনেকেরই।

পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াচায়না মিনশেং ব্যাংকিং করপোরেশনের গবেষক ওয়েন বিং বলেন, উহানের অর্থনীতির গতিপথ থেকে দেখা যায়, ভাইরাস-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলবে দুই পথে। নতুন করে সংক্রমণের ছোট ছোট ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে এবং এতে সম্ভবত বৃহত্তর অর্থনীতির ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না।

তার মতে, উহানে সম্প্রতি অতিবৃষ্টির কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া। চীনের দক্ষিণাঞ্চলে জলাবদ্ধতা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত তিন কোটি মানুষ। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৬১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউয়ান।

উহান মেট্রোতে যাত্রীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়লেও তা এখনও স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই গণপরিবহন এড়িয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির দিকে ঝুঁকছেন। অবশ্য এর কারণে গাড়ির বাজারে চাহিদা বেড়েছে অনেকটাই।

Advertisement

ছাড়ের ছড়াছড়িঅর্থনীতি পুনরুদ্ধারে উহান কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ চালু করেছে। ৫০০ মিলিয়ন ইউয়ান শপিং ভাউচার ছাড়া হয়েছে, অনেক বাড়িতেই নগদ অর্থ সরবরাহ করা হয়েছে, ট্যাক্স ছাড় দেয়া হয়েছে চলতি বছরের শেষ নাগাদ। বিনিয়োগ টানতে উহান যে প্রদেশের রাজধানী সেই হুবেইতে মুক্ত-বাণিজ্য অঞ্চল বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে চীন সরকার।

ভোক্তা অভ্যাসউহানে পাঁচটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে জিয়ং ফেইয়ের। তার মতে, ব্যাপক হারে করোনা টেস্টের ফলে জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। পুনরায় চালুর পর গত মে মাসে রেকর্ডসংখ্যক ক্রেতা এসেছেন তার রেস্টুরেন্টে। তবে বিপণন ও প্রচারণায় খরচ বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায় লাভের পরিমাণ কমে গেছে বলেও জানান এ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী।

বাণিজ্যনির্ভরতাচীনের অন্যতম উৎপাদনকেন্দ্র উহানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ফের চালুর পর বাণিজ্যিক লেনদেন বেড়েছে যথেষ্ট। গত বছরের মে মাসের তুলনায় চলতি বছর একই সময়ে শহরটির আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ এবং বিভিন্ন মেডিকেল পণ্য উহানের রপ্তানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া, প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনেরও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এ শহরটি। সেখানে ইয়াংজি ও লেনোভোর মতো বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কারখানা রয়েছে। ফলে মে মাসে উহানে প্রযুক্তিপণ্যের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ।

সুদিন চলছে হেলমেট ও ফেসশিল্ড প্রস্তুতকারক উহান ওয়েলহেল ফটোইলেক্ট্রিক কোম্পানিরও। করোনা সংক্রমণের পর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সুরক্ষা উপকরণের অর্ডার প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ইয়াও জুন। তার কথায়, ‘ব্যবসা এখন খুবই ভালো। উহান অবশেষে ভাইরাসের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছে।’

কেএএ/জেআইএম