তার মূল বাড়ি ছিলো বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালের চাঁদশীতে। পরে তার পরিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমায়। ১৮৬১ সালের বিহারের ভাগলপুরে ১৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক তিনি। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে তিনি পাশ্চাত্য চিকিৎসায় ডিগ্রি অর্জন করেন এবং প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে তিনিই পাশ্চাত্য চিকিৎসারীতিতে চিকিৎসা করার অনুমতি পান। তাকে এও বলা হয়, তিনি বাংলার প্রথম মহিলা ডাক্তার।
Advertisement
মেডিক্যাল কলেজে পড়াকালীন তিনি সরকারের স্কলারশিপ পান যা ছিল মাসে ২০ টাকা। তিনি পাঁচ বছর মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করার পর বিলেত যাবার আগে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে কিছুদিন লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতালে মাসিক ৩০০ টাকা বেতনে কাজ করেছিলেন। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে বোম্বে শহরে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে প্রথম যে ছয় জন নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদেরও অন্যতম একজন ছিলেন তিনি।
শিক্ষা, চিকিৎসা, রাজনীতি, সমাজসেবায় অনন্য মহীয়সী এই নারীর নাম কাদম্বিনী গাঙ্গুলী। যাকে নিয়ে ভারতীয় চ্যানেল জি বাংলায় শুরু হয়েছে একটি ধারাবাহিক। এর নাম ‘কাদম্বিনী’। এখানে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ‘বকুল কথা’ ধারাবাহিক দিয়ে দুর্দান্ত জনপ্রিয় হওয়া অভিনেত্রী ঊষসী।
নিজের এই চরিত্রটি নিয়ে একইসঙ্গে তিনি এক্সাইটেড এবং নার্ভাসও। লকডাউন কাটিয়ে এ নাটকের জন্যই তিনমাস পর ফিরেছেন শুটিং ফ্লোরে। প্রচুর বিধিনিষেধ মেনে কাজ করছেন। সংবাদ প্রতিদিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ঊষসী জানালেন এক মজার কথা। যা বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে শোবিজ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘লকডাউনে ঘরবন্দী অবস্থায় যে কয়টা লাইভ করেছি বা ছবি আপলোড করেছি সবগুলোতে এসে আমার অনুরাগীরা লিখেছে, ‘দিদি তুমি দেখো না, যদি কাদম্বিনী ভ্যাকসিনটা আবিষ্কার করতে পারে!’ এটা পড়ে হেসে খুন হয়েছি। বেশ মজা লেগেছিল ভেবে যে, মানুষ সবকিছু এত সিরিয়াসলি নেয়! কেউ আবার এমনও জিজ্ঞেস করেছিল যে, ‘কাদম্বিনী শুরু হলে কি করোনা-আতঙ্ক কমবে? উনি তো ডাক্তার। কাদম্বিনী কী পারবেন করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে?’
এই যে সবাই মজার ছলে এসব লেখেন বা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।’
আরও বললেন তিনি, ‘ধারাবাহিকটি মুক্তির পর থেকেই দর্শকের প্রশংসা আদায় করে নিচ্ছে। এক সাধারণ বাঙালি নারীর যে কি না গৃহবধু, তার অসাধ্য সাধনের গল্প এখানে ফুটে উঠেছে। যা আজকের দিনে নানাভাবে বাঁধাপ্রাপ্ত নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা। ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত বঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কাদম্বিনীর লড়াই; জাস্ট ভাবা যায় না। তার চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে ঠের পাচ্ছি মহীয়সী ওই নারীকে কত কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছিলো।’
‘বকুল কথা’ শেষের পর লকডাউনের কারণে তিনমাস বিরতি পেয়েছিলেন। ওই ফাঁকা সময়ে বাংলার নবজাগরণের ওপর বেশকিছু বইপত্রও পড়ে ফেলেছেন তিনি। এগুলো মূলত কাদম্বিনী চরিত্রে নিজেকে খানিকটা সাবলীল করে নেয়ার জন্যই। ঊষসী জানালেন, ‘চরিত্রটির জন্য অনেক খেটেছি আমি। এখনো খাটছি। পরিশ্রম করেছি বলেই হয়তো এর মূল্যটা পাচ্ছি। ‘কাদম্বিনী’র জন্য প্রচণ্ড ভাল প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি।’
Advertisement
এলএ/পিআর