দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে চিনতেন না স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সামনাসামনি দেখাও হয়নি কখনো। তবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির শুরুর দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আন্তমন্ত্রণালয়ের এক সভায় বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধি হিসেবে সাহেদকে প্রথম চোখে পড়ে তাদের।
Advertisement
এর আগে অবশ্য তাকে চেহারায় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আলোচক হিসেবে দেখেছিলেন। ওই সময় বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। এ সময় রীতিমতো ‘সমাজসেবক’ হিসেবে আবির্ভূত হন সাহেদ। তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থে তার মালিকানাধীন উত্তরা ও মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতাল দুটিতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে রাজি হন। এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে তার এগিয়ে আসাকে ইতিবাচক হিসেবে সবাই প্রশংসা করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে সাহেদের সম্পর্কে এ কথাগুলোই বলছিলেন।
তারা জানান, উত্তরা ও মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতাল দুটিতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে রাজি হওয়ার পর থেকে ‘সমাজসেবক’ সাহেদের নানা উছিলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে যাতায়াত বাড়তে থাকে। সময়ে অসময়ে তিনি স্বাস্থ্য মহাপরিচালকসহ অন্যান্য শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কক্ষে প্রবেশ করতেন। তাদের সঙ্গে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বিভিন্ন প্রভাবশালী মন্ত্রী, সচিব, সংসদ সদস্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সিনিয়র-জুনিয়র প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, কূটনীতিবিদ ও গণমাধ্যমের প্রভাবশালী সম্পাদক ও ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। তার কথা শুনে কখনও অবিশ্বাস হয়নি তিনি তাদের সঙ্গে পরিচিত নন। তিনি দেশের স্বার্থে সব সময় কাজ করেন এবং করোনাকালে তার হাসপাতলে একাধিক মন্ত্রী-সচিবের আত্মীয়-স্বজন ভর্তি রয়েছেন এবং তিনি নিজে সময় দিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছেন বলে জানাতেন।
Advertisement
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যখন-তখন যিনি মন্ত্রী-সচিবসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টেলিফোনে সরাসরি কথা বলেন, এমন লোককে কি অবিশ্বাস করা যায়? সাহেদ যে অপকর্মের সাথে যুক্ত তা তারা ভাবতেও পারেননি। কিন্তু পরবর্তীতে দু-চারটি ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাকে এবং তার কর্মকাণ্ডে অনিয়ম খুঁজে পান। এদিকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য গোপনে তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে থাকেন। তখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেননি।
সাহেদের ব্যাপারে সরকারের উচ্চ মহলে জানানো হয়। এরপর অনেকটা গোপনেই চালানো হয় র্যাবের অভিযান। ওই অভিযানে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। সরকারিভাবে সরবরাহকৃত কিট দিয়ে বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষার কথা থাকলেও প্রতারক সাহেদ লোকজন দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করাতেন। তবে তার অধিকাংশই পরীক্ষা না করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করা হয়েছে মর্মে স্বাক্ষর করে ভুয়া রিপোর্ট দিতেন।
র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, ১০ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষার মধ্যে তার প্রতিষ্ঠান মাত্র ৪ হাজার ২০০ নমুনা পরীক্ষা করেছে। বাকিগুলো ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অবৈধভাবে নমুনা পরীক্ষার টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিলেও সেইসব নমুনা পরীক্ষার বিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শুক্রবার (১০ জুলাই) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালে র্যাবের অভিযান পরিচালনাকালে সাহেদ তার কাছে সাহায্য চেয়ে ফোন করেছিলেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনো কারণ ছাড়া অভিযান চালানোর কথা না। সাহেদ অপরাধী হলে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতেই হবে।
Advertisement
এমইউ/এমএসএইচ/এমএস