পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত সরকারকে পুনর্বিবেচনার দাবি স্কপের নেতারা। সম্প্রতি তাহের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভা থেকে এ দাবি জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে পাটকল বন্ধের নিন্দাও জানিয়েছে সংগঠনটি। স্কপের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে তারা।
Advertisement
স্কপের নেতারা বলেন, পাটকল আধুনিকায়ন ও কর্মরত শ্রমিকদের চাকরি অব্যাহত রেখে পাটকলকে লাভজনক করার যে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল আমরা আশা করেছিলাম তা নিয়ে নীতি নির্ধারক মহলে আলোচনা হবে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম এই ধরনের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্কপের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। নেতৃবৃন্দ টিসিসি বৈঠক ছাড়াই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
রাষ্ট্রীয় ২৫টি পাটকল, বন্ধ গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক ছাঁটাই এবং দেশে ও প্রবাসে কর্মরত শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের বর্তমান অবস্থাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে স্কপভুক্ত সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি তাহের মিলনায়তনে এক জরুরি সভায় করেন। সভার শুরুতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী আব্দুল মুকিত খান, জাফরুল হাসান, আবুল কালামসহ এই সময়কালে মৃত্যুবরণকারী শ্রমিক নেতৃবৃন্দের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, এক সময়ে এই দেশের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে উৎপাদিত পাটকে ভিত্তি করে একের পর এক পাটকল গড়ে উঠেছিল। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকার এটিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প হিসাবে ঘোষণা করে। রাষ্ট্রের যথাযথ পরিচালনার পলিসিগত দুর্বলতা মাথাভারি আমলাতান্ত্রিক প্রশাসন এবং লুটপাট ও অনিয়মের কারণে এই শিল্পে সংকট দেখা দেয়। সেই সংকট দূর করার বদলে অতীতের বিভিন্ন সরকারের আমলে আই এম এফ ও বিশ্ব্যাংকের প্রেসক্রিপসনে প্রথমে ব্যক্তি মালিকানায় কিছু মিল হস্তান্তর এবং পরবর্তীতে গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে বিশ্বের বৃহৎত্তম পাটকল আদমজী বন্ধ করে পাটকল বন্ধ ও বিক্রির যাত্রা শুরু হয়। অতীতে ওই ঘটনার সমালোচনা করা হলেও অতীত থেকে বর্তমান সময়েও ওই একই নীতি মেনে চলা হয়েছে। ফলে লোকসানের বৃত্ত থেকে রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বেরিয়ে আসতে পারে নি। এই ভুল নীতি ও দুর্নীতিকে আড়াল করে পরিকল্পিতভাবেই এই মিলগুলোকে চূড়ান্তভাবে বন্ধ ও ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
Advertisement
স্কপ নেতৃবৃন্দ সুনির্দিষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে পাটকলগুলোকে আধুনিক ও লাভজনক করা যায়। নেতৃবৃন্দ তাই স্কপের প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় মালিকানায় মিলসমূহ আধুনিকায়নের বিষয় পুনর্বিবেচনার জোর দাবি জানায়।
স্কপের নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা দুর্যোগে দেশের উৎপাদনের প্রধান চালিকা শক্তি শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো যখন রাষ্ট্রের কর্তব্য তখন শ্রমিক ছাঁটাইয়ের যেকোনো সিদ্ধান্ত শ্রমিকের জীবনকে বিপন্ন করে তুলবে। নেতৃবৃন্দ পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বর্তমান সমস্যা সমাধানে শ্রমিকদের প্রতি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।
এফএইচএস/এমএফ/জেআইএম
Advertisement