দেশজুড়ে

করোনা-বন্যায় পুষ্টিহীনতার আশঙ্কায় চরাঞ্চলের গর্ভবতী ও নবজাতক

কুড়িগ্রামে বন্যা আর করোনার দুর্যোগে চরম ভোগান্তিতে দিন কাটছে গর্ভবতী মা এবং নবজাতকদের। দুটি দুর্যোগের কারণে পুষ্টিকর খাবারের সংকটের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও পড়েছেন তারা। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীঘেরা কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ৫ শতাধিক চর-দ্বীপচর রয়েছে। এসব চরাঞ্চলে ৫-৬ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। বন্যা, খরা, শীতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয় এই জনপদের মানুষজনকে। কিন্তু এবার এই অঞ্চলের মানুষকে করোনা, বন্যা এবং বৃষ্টি একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ফলে ভোগান্তি বেড়েছে অনেক বেশি।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উলিপুর উপজেলায় ধরলা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় হাতিয়া ইউনিয়ন। প্রতিবছরের বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে এই ইউনিয়নটি। এবারের বন্যাতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই ইউনিয়নের চরবাগুয়া গ্রামের ইয়াসমিন বেগম-আবু সাঈদ দম্পতির ঘর আলো করে ফুটফুটে জমজ ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছে। গত ২৬ জুন বন্যা চলাকালীন সিজার করে জমানো টাকা শেষ হওয়ায় এখন পরিবারটির দুর্দিন যাচ্ছে। চারদিকে বন্যার পানি থৈ থৈ করায় একদিকে খাবারের কষ্ট অপরদিকে ওষুধের খরচ। এতে পুষ্টিকর খাবারসহ চিকিৎসার অভাবে মা ও নবজাতক শিশু দুটির বেশ কষ্ট হচ্ছে।

একই অবস্থা বিরাজ করছে গাবুরজান গুচ্ছগ্রামের আমিন-রাসেদা দম্পতির ঘরেও। তাদের ঘরে দু’মাসের জমজ কন্যা সন্তান রয়েছে। করোনার কারণে হাতে তেমন কাজকর্ম নেই। এরমধ্যে এক সপ্তাহের বন্যায় পানিবন্দি থাকায় খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন আমিন। মায়ের খাদ্য সংকটে শিশুদের দুধের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে না।

একই গ্রামের রিকশাচালক মঞ্জু ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগম ৭ মাসের জমজ সন্তান খোদেজা-রহিমাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। দিন এনে দিন খাওয়া এই পরিবারটির করোনা এবং বন্যার কারণে দু’চোখে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে। এই দুর্যোগে আয় রোজগার না থাকায় নিজেদের খাবার জোগানো নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। সেখানে বাচ্চার জন্য দুধ কিংবা পুষ্টিকর খাবার পাওয়া যেন স্বপ্নের ব্যাপার।

Advertisement

বন্যায় গর্ভবতী মা ও নবজাতক সন্তান নিয়ে চরম দুর্দিন কাটাচ্ছে চরাঞ্চলের শত-শত পরিবার। এমন দুর্যোগে শিশুদের খাবার বলতে চালের গুড়াই সম্বল। এছাড়াও পুষ্টিকর খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গর্ভবতী মাসহ নবজাতক শিশুর চিকিৎসা সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দারিদ্র্যপীড়িত এই জেলার চরাঞ্চলের মা ও শিশুদের পুষ্টিহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মঞ্জু-খাদিজা দম্পতি জানান, বন্যা চলাকালীন সন্তানদের চালের গুড়া খাওয়াতে হয়েছে। আর করোনার কারণে আগের মতো ভাড়া না পাওয়ায় পরিবার চালাতে হিমশীম খেতে হচ্ছে। ইয়াসমিন বেগম-আবু সাঈদ দম্পতি বলেন, ঘর আলো করে জমজ ছেলে এলেও বন্যা আর করোনার কারণে ঠিকমতো দেখভাল করতে পারছি না। বন্যার মধ্যে সিজার করতে গিয়ে জমানো অর্থ এবং ধারদেনা করে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে হাতে কাজ কর্ম না থাকায় পোয়াতির জন্য ওষুধ ও ভালো খাবার দেয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন এসব কথা স্বীকার করে বলেন, করোনা এবং বন্যায় সব থেকে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে গর্ভবতী মা ও নবজাতকরা। সরকারি ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি শিশু খাদ্য বিতরণে জোর দেন তিনি। এছাড়াও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের আরো কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন বলেন, গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুর চিকিৎসা এবং তাদের খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার তৎপর রয়েছে। এমন দুর্ভোগের কথা জানতে পারলে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেন এই সংসদ সদস্য। সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান করোনার ভয় এবং বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন। বন্যা কবলিতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের ৮৫টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।

Advertisement

নাজমুল হোসেন/এফএ/এমএস