বিমান ছিনতাই এবং বোমা হামলার বিষয়ে গোয়েন্দাদের দেয়া সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্য হাতে পেয়ে রোববার শাহজালাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠকও হয়। যেখানে বিশেষ সতর্কতা জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জাগো নিউজকে জানায়, ইন্টেলিজেন্স কালেকশন অনুযায়ী, শাহজালালে বিমান ছিনতাইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ভেতরে বোমা বিস্ফোরণসহ নাশকতার পরিকল্পনার আশঙ্কা রয়েছে। নাশকতাকারীরা বিস্ফোরক নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারে, যা মেটাল ডিটেক্টরে ধরা পড়বে না। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালের ৩, ৪ এবং ৬ নম্বর গেটে দিয়েই নাশকতাকারীরা প্রবেশ করতে পারে। এ কারণেই এই তিনটি গেটে চোখে পড়ার মতো নিরাপত্তাকর্মী উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আগাম সতর্কতার অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকে বিমানবন্দর এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় অতিরিক্ত ক্লোজ সার্কিড (সিসি) টিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বিমানবন্দরের সবক’টি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। বহির্গমনের উদ্দেশ্যে আসা যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে তাদের মালপত্র ও লাগেজ তল্লাশি করা হচ্ছে। পাসপোর্ট ও বিমানটিকিট ছাড়া কাউকেই বিমানবন্দরের টার্মিনাল এলাকার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। বিমানবন্দর এলাকায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ এবং দাঁড়িয়ে থাকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান বলেন, ‘রেড অ্যালার্ট নয়, তবে শাহজালালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিন্যাস করা হয়েছে।’ শাহজালালের পর নাশকতার আশঙ্কায় বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরেও। এ বিষয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আলমগীর হোসেন শিমুল জাগো নিউজকে জানান, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকে যে ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আমরা সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছি।’ বিশেষ সতর্কতা জারির বিষয়ে এয়ারপোর্ট এপিবিএনের মুখপাত্র তানজিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স থেকে মৌখিকভাবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর পর থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে বিশেষ সতর্কতা জারির কারণ কী এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি তিনি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে বিমান ছিনতাই ও নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এই বিশেষ সতর্কতা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সূত্র থেকে বিশেষ সতর্কতা জারির বিষয়টি নিশ্চিত হবার পরেও সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিন্যস্থ করতে এবং সংস্কার ও মেরামত কাজ সম্পাদন করার জন্য সাময়িকভাবে দর্শনার্থীদের প্রবেশ স্থগিত রাখা হয়েছে।’ এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির সময় ১০৮ দিন শাহজালাল বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এআর/এসকেডি/এমএস
Advertisement