মতামত

করোনা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ

৭ জুলাই (২০২০) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘সামনে যতই সংকট আসুক, আওয়ামী লীগ সরকার শক্তহাতে তা মোকাবিলা করবে।’ কেবল আওয়ামী লীগ সরকার নয়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতেও রয়েছে করোনা-মহামারি মোকাবিলার প্রত্যয়। ২৩ জুন দলটির ৭১তম বর্ষপূর্তি উদযাপিত হয়েছে। দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল বলেই জনগণের প্রতি রয়েছে এর অপরিসীম দায়বদ্ধতা।

Advertisement

১৯৮১ সাল থেকে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। ৩৯ বছর যাবৎ তিনি দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নিজের নেতাকর্মীর আস্থাভাজন নেত্রী হিসেবে। আর এ জন্যই মুজিববর্ষের শুরু থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তোলা এবং লকডাউনের মধ্যে গরিব মানুষকে ত্রাণ বিতরণে নিবেদিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

তাঁর নিরন্তর তদারকির কারণে করোনাভাইরাসের দুর্যোগের সময় আওয়ামী লীগ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন থেকে শুরু করে কওমি মাদরাসা, গার্মেন্টসকর্মী, কৃষক-শ্রমিক ও নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ সংগঠনটি।

২.

Advertisement

কেবল ছাত্রলীগ দিয়ে ধানকাটা, ত্রাণ বিতরণ নয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ মানুষের অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে করোনা দুর্যোগে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির নতুন মেয়র ব্যারিস্টার তাপসের করোনা ও ডেঙ্গু মোকাবিলার তৎপরতা এবং ঢাকার বাইরের দলীয় সিটি মেয়রদের মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাওয়ার একাগ্রতা প্রশংসা অর্জন করেছে। সবকিছুর জন্য অবশ্য সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য ভূমিকা লক্ষণীয়। সংকট মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মতামত নিয়েছেন তিনি; লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো যেন খাবার সংকটে না পড়ে সে জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন একাধিকবার। করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা, সংক্রমণরোধ ও করণীয় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ১ এপ্রিল ৩১টি, ১৬ এপ্রিল ১০টি, ২০ এপ্রিল ১৩টি এবং ২৭ এপ্রিল ১০টি নির্দেশনা দেন। এর ভেতর বেশ কিছু নির্দেশনা ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি।

১৫ এপ্রিল সারাদেশে ‘ত্রাণ কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ধানমন্ডিতে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে ৩টি নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী এসময় গরিব, অসহায়, দুস্থ মানুষদের পাশে বিত্তবানদের দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। নির্দেশনাগুলো হলো- ‘১. সারাদেশে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ত্রাণ কমিটি গঠন করতে হবে। সব সাংগঠনিক উপজেলা শাখার নেতাদের দ্রুতই ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটি প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক জেলা শাখায় জমা দিতে হবে। এই ত্রাণ কমিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে দল-মত নির্বিশেষে প্রকৃত দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষের তালিকা প্রস্তুত করবে এবং ওই তালিকা স্থানীয় প্রশাসনকে প্রদান করে সঠিক তালিকা প্রণয়নে সহায়তা ও সমন্বয় করবে। একইসাথে এই কমিটি মানুষের মানবিক সংকটে সার্বিক সহযোগিতা এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করবে। ২. বর্তমানে ৫০ লাখ হতদরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষকে সরকারিভাবে রেশন কার্ডের আওতাভুক্ত করা হয়েছে এবং করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় আরও ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ডের অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি দল-মত নির্বিশেষে সমাজের হতদরিদ্র, দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষ যাতে অন্তর্ভুক্ত হয় সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করবে। ৩. আওয়ামী লীগের এই ত্রাণ কমিটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যথাযথ সরকারি নির্দেশনা পালন, সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনগণকে সচেতন করবে এবং মানবিক সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়াবে। পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।’

এছাড়া বিভাগভিত্তিক ভিডিও কনফারেন্সের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন তিনি। ১৭ এপ্রিল তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন এই বলে যে, গরিব মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার যে সহায়তা দেবে কেউ তার অপব্যবহার করবে, এটা তিনি বরদাস্ত করবেন না।

৩.

Advertisement

করোনা সংকট মোকাবিলায় তরুণদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজন করা হচ্ছে বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিকের বিভিন্ন পর্ব। ১৫ মে শুরু হওয়া ‘বিয়ন্ড দ্য প্যান্ডেমিকে’র ১০টি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম পর্বের বিষয়বস্তু ছিল ‘করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় জনসচেতনতা’। ৪ জুলাই ও ৭ জুলাই শেষ দুটি পর্ব সম্প্রচারিত হয়। আওয়ামী লীগের এই বিশেষ ওয়েবিনার প্রচারিত হয়েছে দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে।

ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীদের আলোচনার মধ্য দিয়ে দুর্যোগ মুহূর্তে রাজনৈতিক চেতনা প্রসারে এই অনুষ্ঠান খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। যেমন, ১৯ মে করোনা মোকাবিলায় সরকার এবং আওয়ামী লীগ সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সংকট জয় করতে যার যার এলাকার অসহায়, দুস্থ মানুষের খোঁজ রেখে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান এসেছে। মহামারি ও পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা বিষয়ে ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক ওই ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব থেকে এই আহ্বান জানান ছিল আওয়ামী লীগের চিন্তা প্রসারের ভালো উদ্যোগ।

আসলে আওয়ামী লীগের জন্য করোনা মহামারি গত মার্চ মাস থেকে ছিল একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ এবং সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লড়াইটা ভালোই করেছেন। জীবন এবং জীবিকাকে পাশাপাশি রেখে মানুষ যেন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে না পড়ে সেটা দেখাই ছিল তাঁর কৌশলের প্রধান দিক। তবে মহামারির মধ্যে সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ এক অন্যরকম সংকটের মধ্যে পড়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এই করোনাকালে আক্রান্ত হয়েছেন, মারাও গেছেন অনেকে।

আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর স্ত্রী শাহানারা আবদুল্লাহ মারা গেছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। মারা গেলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ। করোনায় অসুস্থ হয়েও সুস্থ হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী। কিন্তু সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরান প্রয়াত হলেন। সাবেক এমপি হাজী মকবুল হোসেন মারা গেলেন।

আওয়ামী লীগের যারা বর্ষীয়ান নেতা রয়েছেন তাঁরা আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে আছেন। অজানা আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হৃদরোগী, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে তিনি ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সঙ্গত কারণেই।কিন্তু বিবৃতি ও ভিডিও কনফারেন্সে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে মাঝে মাঝে প্রেসের সঙ্গেও কথা বলছেন।

আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু- উভয়েই বর্ষীয়ান। কদিন আগেই তোফায়েল আহমেদ স্ট্রোক থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। এখনো তিনি ঘরে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের তদারকি করছেন। আমির হোসেন আমু সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁকে নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। তবু তিনি জনগণের সঙ্গে সংযুক্ত।

এপ্রিল-মে এই দুই মাসের লকডাউনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরা স্ব-উদ্যোগেই এলাকায় গেছেন, জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যে যেভাবে পেরেছেন ত্রাণ সহায়তা করেছেন, অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে থেকেছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগে আক্রান্তের সংখ্যা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের থেকে অনেক বেশি।

এই আক্রান্ত সংখ্যা দ্বারা একটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, করোনা সংকটের সময় আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা জনগণের পাশে আছে এবং জনগণের জন্য কাজ করছে। কিন্তু এর চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারেন না। আর এই পরিস্থিতিতে করোনার যে ভয়াল থাবা, সেই থাবায় ঝড়ের মুখে পড়েছে জনবান্ধব এই দলটি। আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আওয়ামী লীগের নেতারা ঘরে থাকবেন- এটা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার কাছেই অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু দলের অনেক সিনিয়র নেতা, যারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন, যারা এই দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন- তাঁদের সুরক্ষা করা আওয়ামী লীগের জন্য এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। এ জন্য মনোবল শক্ত রেখে করোনা সংকটে দেশের সবাইকে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সংকট জয় করার প্রত্যাশা রয়েছে তাঁদের। শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনকার মতো সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেই আমরা যেকোন আপৎকালীন অবস্থা থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটাব এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’ এ জন্য আমেরিকার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ফোর্বসে’ ২২ এপ্রিল প্রকাশিত কানাডিয়ান লেখক অভিভাহ ভিটেনবারগ-কক্স রচিত '8 (More) Women Leaders Facing The Coronavirus Crisis' শীর্ষক কলামে করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হয়।

নারী নেতৃত্বাধীন সিঙ্গাপুর, হংকং, জর্জিয়া, নামিবিয়া, নেপাল, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়কদের ওপর আলোকপাত করার সময় বলা হয়, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ১৬ কোটি ১০ লাখের মতো মানুষের দেশ বাংলাদেশের মহামারির সংকট মোকাবিলায় দ্রুত সাড়া দিয়েছেন, যাকে ‘প্রশংসনীয়’ বলেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। কলামে বলা হয়েছে, এদেশের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনি গত ফেব্রুয়ারি (২০২০) থেকে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেগুলো এক অর্থে যুক্তরাজ্যও করতে পারেনি।

রোজা ও ঈদুল ফিতরের মধ্যে যখন করোনায় মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ছোবলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। করোনা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মে মাসজুড়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। ওই মাসে ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ বলেছে, করোনাভাইরাসের মহামারি পরিস্থিতিতেও উদীয়মান সবল অর্থনীতির ৬৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। অর্থাৎ নবম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেও পাকিস্তান, ভারত, চীন এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের চেয়ে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এদেশের অর্থনীতি।

গত ৩ জুন ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে ‘ফাইটিং সাইক্লোনস অ্যান্ড করোনাভাইরাস : হাউ উই এভাকুয়েটেড ডিউরিং আ প্যানডেমিক’ শিরোনামে এক নিবন্ধে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “বাংলাদেশ সুপার-সাইক্লোন ‘আম্ফান’ এবং কোভিড-১৯-এর মতো দুটি বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আমরা অন্যদেরকে একই রকম বিপদ মোকাবিলায় পাঠ দিতে পারি।” প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশব্যাপী বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকঋণ গ্রহীতাদের দুই মাসের সুদ মওকুফ করতে সরকারের পক্ষ থেকে বাজেটের আগে দুই হাজার কোটি টাকার নতুন আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ওই দুই হাজার কোটি টাকাসহ সরকার ঘোষিত ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজে মোট পরিমাণ দাঁড়াল এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। যা জিডিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

৪.

২৯ জুন বাজেট পাসের আগের দিন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে।’ এ জন্য করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সচল রাখতে আগে উল্লিখিত প্রণোদনা ঘোষণার পাশাপাশি ভাতা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি করে ৮১১ কোটি এবং গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর তৈরির জন্য দুই হাজার ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। বোরো ধান/চাল ক্রয়ের কার্যক্রম (অতিরিক্ত দুই লাখ টন) ৮৬০ কোটি টাকা এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ২০০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে।

ভিজিডি, ভিজিএফ, ১০ টাকায় খাদ্যসহায়তা ও অন্য সহায়তা প্রাপ্ত প্রায় ৭৬ লাখ পরিবার বাদ দিয়ে অবশিষ্ট প্রায় ৫০ লাখ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে মুজিববর্ষ উপলক্ষে মে/২০২০ মাসে এককালীন ২৫শ টাকা হারে মোট ১২শ ৫০ কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ৫০ লাখ মানুষের জন্য রেশন কার্ড করা আছে যারা ১০ টাকায় চাল পাচ্ছেন। নতুন আরও ৫০ লাখ রেশনকার্ড দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কৃষকদের জন্য আউশ ধানের বীজ ও সার বিনামূল্যে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বোরো মৌসুমে আট লাখ মেট্রিক টন ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, দুই লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে কৃষি ও কৃষক বাঁচবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর যে অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তাকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট বলা যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক প্রণোদনার এই বাজেট বাস্তবায়ন এবং সেবামূলক কাজে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অক্লান্ত শ্রমই বাংলাদেশকে করোনা ভাইরাসের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

লেখক : বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম; নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।email-writermiltonbiswas@gmail.com

এইচআর/বিএ/এমএস