রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে গণমাধ্যম পাড়া। সর্বত্র ছিল তার যাতায়াত। নানা পরিচয়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচয় দিতেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক-শো অনুষ্ঠানেও এই পরিচয়ই ব্যবহার করতেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষা না করেই সনদ প্রদানসহ বিভিন্ন অপরাধে তার হাসপাতাল ও প্রধান কার্যালয় সিলগালা হওয়ার পর এখন তার সব পরিচয়ই ‘ভুয়া’ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ নামে প্রতারণায় অভিযুক্ত এই ব্যক্তি আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের সদস্য নন বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে আসা সাহেদের ওই কমিটিতে থাকার সুযোগ নেই। খসড়া কোনো কমিটিতেও তার নাম নেই।
Advertisement
গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রিজেন্টের প্রধান কার্যালয়, উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়।
৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। এতে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখা থেকে আটক আটজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ নয়জনকে পলাতক আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে গতকাল বুধবার (৮ জুলাই) রাতে গ্রেফতার করা হয় সাহেদের প্রধান সহযোগী তারেক শিবলীকে। সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
তার রিজেন্ট হাসপাতালের এই ভয়াবহ জালিয়াতি ধরা পড়ার পর সাহেদের অতীতের নানা অপকর্মের তথ্য সামনে আসছে। যখন যেখানে যেমন সুবিধা তেমন পরিচয়ে তার স্বার্থসিদ্ধি করার ঘটনাগুলোও প্রকাশ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব শুরু করে নানা পর্যায়ে তার যাতায়াত ও চলাচলের তথ্য প্রকাশ হচ্ছে গণমাধ্যমে।
Advertisement
বিভিন্ন টক-শোসহ নানা জায়গায় সাহেদের আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পরিচয় দেয়া প্রসঙ্গে ওই উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমির বলেন, সাহেদ বর্তমান কমিটির কোনো পদে নেই। এখনো তো আমাদের কমিটির অনুমোদন হয়নি। তাহলে কীভাবে বলবেন তিনি আমাদের কমিটির সদস্য?
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, এই ধরনের ঘটনায় যে কেউ বিব্রত হতে পারে এবং হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী যে কথাটা সংসদে বলেছেন যে, প্রত্যেকটা (অনিয়মের) ঘটনাই কিন্তু আওয়ামী লীগের সরকার এবং প্রশাসনের মাধ্যমে আইনগতভাবে উদঘাটিত হচ্ছে। অন্য কেউ এসে খবর দিয়ে যায়নি। একটা সরকার ক্ষমতায় থাকলে নানাভাবে সেখানে অনুপ্রবেশ ঘটে। কিন্তু প্রশ্নটা হলো, এটা সরকার পালাপোষা করছে নাকি এর মূলোৎপাটন করতে চাচ্ছে--সেটাই দেখার বিষয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সাহেদের সাথে আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কোনো পর্যায়ের কোনো ধরনের পদবির চিঠি তার নামে আজ পর্যন্ত ইস্যু হয়নি। সাহেদ এক সময় বিএনপি করতেন, বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান, নাজমুল হুদার সাথে তার খাওয়ার ছবি রয়েছে। এ ধরনের নব্য আওয়ামী লীগাররা দেশ ও দলের ক্ষতি করছে।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও উপ-কমিটির সদস্য সচিব ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন যে ছবি আছে, উনি আমাদের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। উনি নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন বুদ্ধিজীবী বা ওই ধরনের হিসাবে পরিচয় দিতেন। উনি আমার বাসায়ও এসেছেন, আমাকে অনেক অনুরোধ করেছেন যে, আপা আমাকে আপনার কমিটিতে রাখেন। আমি কমিটিতে রাখিনি। উনি আমার উপ-কমিটির কোনো সদস্য ছিলেন না। তিনি আমাদের বর্তমান কমিটির সদস্য নন, নতুন কোনো খসড়া কমিটি আমরা করিনি।
Advertisement
এইউএ/এইচএ/জেআইএম