করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত রিজেন্টের প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কীভাবে অনুমোদন পায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এমন প্রশ্ন তোলেন।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, জেকেজি এবং রিজেন্ট হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা সুবিধা সৃষ্টি না করে ও চিকিৎসাসেবা না দিয়ে রোগীদের কাছে থেকে বিভিন্নভাবে অর্থ আদায় করছে। এ সব কাজের অন্যতম অভিযুক্ত আবার সেই রিজেন্ট হাসপাতাল। এ সব প্রতিষ্ঠান পরীক্ষা করা এবং কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করার অনুমোদন পেয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রথম প্রশ্ন এ ধরনের প্রতিষ্ঠান যাদের করোনা চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই, চিকিৎসা সুবিধা নেই তারা কীভাবে পরীক্ষা রিপোর্টের অনুমোদন লাভ করলো? দ্বিতীয়ত, অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের দায়িত্ব কীভাবে ও কতটুকু পালন করছে বা করছেন না সে বিষয় দেখভালের দায়িত্ব অনুমোদন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদফতরের, তারা কী করলেন?
Advertisement
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, যতটুকু জানা যাচ্ছে, জনগণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আটক করেছে, প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করেছে। কালকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু কথা বলেছেন, তাতে আমরা জানতে পারলাম যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নিতে হয়েছে এবং তারপরেই বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছু না কিছু ব্যবস্থা হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু লোককে ধরা হয়েছে, এখন তাদের হয়তো শাস্তি হবে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে একটা বড় ক্ষতি হয়ে গেছে আমাদের। এই সামান্য একটা বিষয় থেকে। কোভিড পরীক্ষা নেগেটিভ নিয়ে আমাদের দেশের মানুষ যখন বিদেশে যাচ্ছে সেখানে তাদের পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে এবং আমাদের দেশের এই টেস্টকে অনেক দেশ আর গ্রহণ করছেন না। তারা এটাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করছেন না। বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিমান অবতরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আমাদের দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় লকডাউন কার্যকর সম্ভব হয় না। সে কারণেই এ পদ্ধতিতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব না, সেটা আজ পরীক্ষিত সত্য। এ অবস্থায় রোগী শনাক্ত করে আইসোলেশনে রাখা এর বিস্তার বা সংক্রমণ রোধের অনেক সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে বগুড়া ও যশোরে উপ-নির্বাচন জানিয়ে তিনি বলেন, এই উপ-নির্বাচনে যেহেতু জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে, আমাদের নেতাকর্মীদের যে স্বাভাবিক সহানুভূতি প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আমরা সেরকমভাবে পালন করতে চাই। নির্বাচন হলে ওটা একটু বিঘ্নিত হতে পারে। আমি নির্বাচন কমিশনে একটি পত্র দিয়েছি এই বিষয়ে। যদি এটাকে পরিবর্তন করা সম্ভব হয়, ওনারা বিবেচনা করবেন।
Advertisement
তিনি বলেন, একটা কথা বলা হতো সরকারি হাসপাতালে যেও না ওখানে গেলে মারা যাবে। এটা অবশ্য কিছুদিন আগের কথা আশা করি ইতোমধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে যে রোগীরা ভালো হচ্ছে নিজেদের বুদ্ধি, বিবেচনা, শক্তি ও ভাগ্যের গুণে। আমাদের দেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ শক্তি আল্লাহর রহমতে যে অত্যাধিক সেটা হয়তো আবারও প্রমাণিত হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তকরণ পরীক্ষা কোভিড-১৯ টেস্টিংয়ের প্রেসেসিং যে আমাদের দেশে সময় মতো যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি করা হয়নি এই অভিযোগ সংসদে আলোচিত হয়েছে। অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সুবিধাদি যেমন হাসপাতালসমূহে অক্সিজেন সরবরাহ, ভেন্টিলেটর সুবিধা পর্যাপ্ত পরিমাণে সৃষ্টি করা হয়নি সংসদ সদস্যদের মধ্যে এ রকম ক্ষোভ আমরা লক্ষ করেছি।
তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরে বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে তিন মাস পরে। সেই সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত করতে তেমন কিছু লক্ষণীয় কাজ করেননি। পরবর্তীতে ঢিলেঢালাভাবে শুরু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা তৈরি করা হয়েছে বলা যায় না।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ কিছুই করেনি এটা বলা হয়তো সঠিক নয়। তবে বলা যায়, যে সময় স্বাস্থ্য বিভাগের সক্রিয় ভূমিকা রাখার প্রয়োজন ছিল তারা সে সময় নিষ্ক্রিয় ছিলেন। যখন কাজ শুরু করেছেন তখন কাজের গতি ছিল মন্থর। আগাগোড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সকল কাজের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনা সুস্পষ্ট ছিল।
এইউএ/এমএফ/পিআর