মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট দুই হাজার ২৩৮ জন মারা গেলেন। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৩৬০ জন। ফলে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৪ জনে।
Advertisement
করোনাভাইরাস বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি নতুন যুক্ত একটিসহ মোট ৭৬টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ হাজার ৮৬২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৫ হাজার ৬৩২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো নয় লাখ চার হাজার ৭৮৪টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৩৬০ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৪ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪১ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ২৩৮ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও তিন হাজার ৭০৬ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪ হাজার ৫৪৪ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৪১ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ২৯ জন এবং নারী ১২ জন। হাসপাতালে মারা যান ৩৮ জন এবং বাসায় মৃত্যু হয় তিনজনের। এদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের একজন, ১১ থেকে ২০ বছরের একজন, ত্রিশোর্ধ্ব দুজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১১ জন, ষাটোর্ধ্ব ১২ জন, সত্তরোর্ধ্ব নয়জন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী দুইজন রয়েছেন। ১২ জন ঢাকা বিভাগের, ১৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন রাজশাহী বিভাগের, ছয়জন খুলনা বিভাগের, দুজন ময়মনসিংহ বিভাগের, দুজন সিলেট বিভাগের এবং তিনজন রংপুর বিভাগের।
Advertisement
গতকালের পরিস্থিতিগতকাল বুধবারের (৮ জুলাই) বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৪৬ জন। ১৫ হাজার ৬৭২টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৪৮৯ জনের মধ্যে। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু উভয়ই কমেছে। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ৬৪ জনের। সে তথ্য জানানো হয়, ৩০ জুনের বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড চার হাজার ১৯ জনের, যা জানানো হয় ২ জুলাইয়ের বুলেটিনে।
শনাক্ত, সুস্থতা ও মৃত্যুর হারবৃহস্পতিবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
মোট মৃত্যুর পরিসংখ্যানএ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে এক হাজার ৭৭০ জন পুরুষ এবং ৪৬৮ জন নারী। শতকরা হিসাবে পুরুষের মৃত্যুহার ৭৯ দশমিক ০৯ এবং নারীর মৃত্যুহার ২০ দশমিক ৯১।
বয়স বিবেচনায় শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সীদের মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের ১ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, ত্রিশোর্ধ্বদের ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, চল্লিশোর্ধ্বদের ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ, পঞ্চাশোর্ধ্বদের ৩১ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্বদের মৃত্যুহার ৪৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।
Advertisement
বিভাগভিত্তিক মৃত্যুহার ঢাকায় সর্বোচ্চ ৫০ দশমিক ৪০ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রামে ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫ দশমিক ০১ শতাংশ, খুলনায় ৫ দশমিক ০১ শতাংশ, বরিশালে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, সিলেটে ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ, রংপুরে ৩ দশমিক ০১ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ।
আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের তথ্যগত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৮৭৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৩৪ হাজার ২২ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৬৬৮ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৫৫ জন।বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১৭ হাজার ৬৭ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ২৮২ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৫৮১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ১৭৪ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন তিন লাখ ২০ হাজার ৪৮৫ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬৩ হাজার ১০৬ জন।
করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের সুরক্ষিত রাখতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি পালনের আহ্বান জানানো হয় বুলেটিনে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতিকরোনাভাইরাসের ছোবলে গোটা বিশ্ব এখন মৃত্যুপুরী। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় এক কোটি ২২ লাখ। মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৫২ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে পৌনে ৭১ লাখের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।
এমইউ/এইচএ/জেআইএম