করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে শপিং সেন্টারে চলছে সুনসান অবস্থা। ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের রেডিমেট দোকানের বিভিন্ন পণ্যে ডিসকাউন্টের (ছাড়) প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে রাখলেও ক্রেতা মিলছে না। ক্রেতাশূন্য হওয়ায় বিক্রেতারা প্রতিদিন দোকান খুলে অলস সময় পার করছেন।
Advertisement
বুধবার (৮ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন রেডিমেট মার্কেট ও বিপণি-বিতানে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ঈদুল আজহার আগেই কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকেন রাজধানীর মানুষ। ঈদ চলে এলে কোরবানির গরু নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। এবার করোনার কারণে সেই চিত্র পাল্টে গেছে। ঈদের এক মাস আগে রাজধানীর মার্কেটে ক্রেতা সমাগম হচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শপিংমল খোলা রাখতে সরকার অনুমতি দিলেও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনা করে অনেক বড় বড় মার্কেটই বন্ধ রয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুলেছে। দোকান ও শপিংমল খোলা হলেও ক্রেতা উপস্থিতি কম। অধিকাংশ দোকানের পণ্যে বড় আকারে ছাড়ের প্ল্যাকার্ড ঝুললেও করোনা আতঙ্কে ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনাও তেমন হচ্ছে না।
Advertisement
মিরপুর নিউমার্কেটের রেডিমেট পোশাকের দোকান ইজি’র বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের আর কিছুদিন বাকি থাকলেও ক্রেতা আসছে না। প্রায় ৭০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে। যে পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে তাতে দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, স্টাফদের বেতন হবে না। বিক্রি বাড়াতে নতুন-পুরোনো অনেক পোশাকের মূল্যে ছাড় দেয়া হলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রি কমে যাওয়ায় গত মাসে অর্ধেক বেতন দেয়া হয়েছে, এ মাসে এখনো বেতন দেয়া হয়নি, কবে পাব তাও অনিশ্চিত বলে জানান তিনি।
পাশে রঙ্গজয়ী দোকানের ম্যানেজার শহীদুল আলম বলেন, মানুষ আতঙ্কে থাকায় ড্রেস কিনতে আসছেন না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান খোলা থাকলেও তেমন বিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতা না আসায় দোকানের ২০ জন স্টাফ নিয়ে গল্প করে সময় পার করতে হচ্ছে। বিক্রি বাড়াতে পোশাকের ওপর ১০-৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হলেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ঈদ কেন্দ্র করে সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন্য রেডিমেট ড্রেসের কালেকশন রাখা হয়েছে। আশা করি ঈদের এক সপ্তাহ আগে ক্রেতা আগমন শুরু হবে। এ সময়ের মধ্যে বিক্রি কিছুটা বাড়বে।
মিরপুর-২ রাস্তার পাশে রেডিমেট বুন দোকানের মালিক আমিনুল জাগো নিউজকে বলেন, করোনায় প্রতিদিন আক্রান্ত বাড়ছে, মারাও যাচ্ছে। আতঙ্কে মানুষ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। আমরা দোকান, শোরুম খুলেছি। কর্মীদের বেতন-বোনাস দিতে হবে। তাদের তো পরিবার-পরিজন আছে। গত কয়েক মাস কোনো আয় নেই, উল্টো খরচ হচ্ছে। স্টকে মাল (পোশাক) পড়ে আছে। কিছু বেচাকেনা হলে বেতন-বোনাস দেয়া যাবে।
Advertisement
তিনি বলেন, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমরা দোকান খুলেছি। তবে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হবে। সংকটপূর্ণ সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে দোকান ভাড়া কমানোর দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর অনেক মার্কেট ও দোকান খোলার কথা ছিল। ক্রেতা আগমন কম, তাই বেচাকেনাও কম হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ আগে কিছুটা বিক্রি বাড়তে পারে। সবাইকে স্বাস্থ্যসেবা মেনে কেনা-বেচার পরামর্শ দেন তিনি।
কর্মীদের বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন্ধ থাকা দোকান ও বাণিজ্যিক বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন দেয়ার কথা বলেছি। এ মুহূর্তে আর্থিক সংকট রয়েছে। তারপরও মালিকরা যতটুকু পারেন কর্মীদের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করার আহ্বান জানান তিনি।
এমএইচএম/এএইচ/পিআর