বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে থমকে গেছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Advertisement
এরই অংশ হিসেবে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছর বাস্তবায়নাধীন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় নিম্ন অগ্রাধিকার বা কম গুরুত্বপূর্ণ এবং মধ্যম অগ্রাধিকারের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ খরচ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে ‘মধ্যম অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যয় না করলেই নয়, এমন টাকা খরচের ক্ষেত্রে ‘কঠোর’ বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পের অর্থ ব্যয় অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এমন সব নির্দেশনা দিয়ে বুধবার (৮ জুলাই) একটি পরিপত্র জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ মহা-হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, সীমিত সম্পদের ব্যয় সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের ‘উচ্চ’, ‘মধ্যম’ ও ‘নিম্ন’ অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পসমূহের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়েছে সরকার। এগুলো হচ্ছে-
Advertisement
১. মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দফতর বা সংস্থাসমূহ উচ্চ অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহ যথানিয়মে বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।
২. মধ্যম অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহের ক্ষেত্রে প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থ ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী বলে বিবেচিত হবে; মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ দপ্তর বা সংস্থাসমূহ স্বীয় বিবেচনায় সেসব খাতে অর্থ ব্যয় করবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় পরিহার করা সম্ভব সেসব ক্ষেত্রে ব্যয় আবশ্যিকভাবে পরিহার করতে হবে।
৩. নিম্ন অগ্রাধিকার চিহ্নিত প্রকল্পসমূহের অর্থছাড় আপাতত স্থগিত থাকবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ এ পরিপত্রের আওতার বাইরে থাকবে। প্রকল্পের অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৮ সহ বিদ্যমান আর্থিক বিধিবিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এ পরিপত্র অবিলম্বে কার্যকর হবে।
Advertisement
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, রাজস্ব আদায়ের বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে (সংশোধিত) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা কম আহরিত হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে।
এদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারিতে রাজস্ব আদায়ের নাজুক পরিস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট দুই লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। এ সময়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় কম হয়েছে প্রায় ৭৬ হাজার ২৫১ কোটি টাকা।
এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় কমেছে ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক। আগের অর্থবছরের মে পর্যন্ত সময়ে আদায় হয়েছিল এক লাখ ৯৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা। ওই সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বছরের জন্য এ ব্যয় কমানোর পলিসিটা ঠিক আছে। তবে ব্যয় কমানোটা কোনো সমাধান হতে পারে না। বরং রাজস্ব বাড়িয়ে ব্যয় বড়ানোর শক্তি অর্জনটাই মূল কথা। কিন্তু আমরা সেটা দেখছি না। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সরকারের তেমন কোনো পরিকল্পনাও দেখছি না।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এডিপির আওতায় যেসব প্রকল্প নেয়া হচ্ছে তার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হচ্ছে ঋণের টাকায়। যদি আমরা রাজস্ব না বাড়াতে পারি তাহলে আগামীতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও দিতে হবে ঋণের টাকায়। তাই সরকার-কে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার তাগিদ দেন এ অর্থনীতিবিদ।
এমইউএইচ/এমএআর/এমএস