জাতীয়

মাদকপাচার বন্ধে আরও দুটি হেলিকপ্টার কেনা হচ্ছে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশের সীমান্ত পথে সব ধরনের মাদক অনুপ্রবেশ বন্ধে বিজিবির দুটি হেলিকপ্টার ইতোমধ্যে ফ্লাইং পরিচালনা শুরু হয়েছে, যা বিজিবির অপারেশন ও লজিস্টিক সাপোর্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অচিরেই বিজিবির জন্য আরও দুটি হেলিকপ্টার কেনা হবে।

Advertisement

বুধবার (৮ জুলাই) জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় এমপি নুরুন্নবী চৌধুরীর (ভোলা-৩) লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের সীমান্ত পথে সব ধরনের মাদক অনুপ্রবেশ বন্ধে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিবির নিয়মিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়াও সম্প্রতি নতুন পাঁচটি বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। টেকনাফসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে এবং স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের আওতায় সীমান্তে সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম স্থাপনের কার্যক্রম চলমান।

তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে দেশের সীমান্ত পথে সকল প্রকার মাদক অনুপ্রবেশ বন্ধে ভিশন-২০৪১ এর আওতায় বিজিবির ১৬৮টি নতুন বিওপি নির্মাণ, সব সীমান্তে বর্ডার সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম এবং সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যেসব সীমান্তে নদীপথ রয়েছে সেখানে, বিশেষ করে টেকনাফ ও সুন্দরবন অঞ্চলে বিজিবির জন্য ৪টি অত্যাধুনিক হাই স্পিড ইঞ্জিন বোট ক্রয় করা হয়েছে এবং উপকূলীয়, চরাঞ্চল, দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের বিওপিসমূহের জন্য ১৫২টি এটিভি (অল টেনিয়ন ভেহিক্যাল) ক্রয় করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও সব সরঞ্জামাদি কেনা হবে। বিজিবির ২টি হেলিকপ্টার ইতোমধ্যে ফ্লাইং পরিচালনা শুরু হয়েছে, যা বিজিবির অপারেশন ও লজিস্টিক সাপোর্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। অচিরেই বিজিবির জন্য আরও ২টি হেলিকপ্টার ক্রয় করা হবে। এছাড়া স্থল বন্দর এবং ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্ট মাদক দ্রব্যের অনুপ্রবেশ রোধকল্পে বিজিবির ২টি ভেহিক্যাল এক্সরে স্ক্যানার এবং ২টি ব্যাগেজ স্ক্যানার স্থাপন করা হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে সকল স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টে স্থাপন করা হবে।

Advertisement

আসাদুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল সীমান্ত এবং সমুদ্র এলাকায় মাদকের অনুপ্রবেশ রোধে টেকনাফ, শাহপুরী, সেন্টমার্টিন, ইনানী, হিমছড়ি ও বাহারছড়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে দোবেকি ও কৈখালী এলাকায় হাইস্পিড বোটের সাহায্যে টহল দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া মাদকের অনুপ্রবেশ রোধে কোস্ট গার্ডের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এসব এলাকা দিয়ে সব ধরনের মাদকের অনুপ্রবেশ রোধসহ সকল প্রকার অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে কোস্টগার্ড নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে এবং অনেক সাফল্য অর্জন করেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে জাহাজ, বেইস, বোট কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে মোট ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৮৮ পিস ইয়াবা, ২ হাজার ৭৪০ বোতল বিভিন্ন প্রকার মদ, ১ হাজার ৪৩৮ লিটার দেশীয় মদ, ১৬.৯০৭ কেজি গাঁজা এবং ৯ লাখ ২৮ হাজার ০০০ শলাকা সিগারেট আটক করে।

এছাড়া, উপকূলীয় এলাকার আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের লক্ষ্যে কোস্টগার্ড অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত এবং প্রয়োজনে বড় ধরনের যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল এবং অভিযানের ফলে দেশের সমুদ্র ও নদীপথ এখন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। তাছাড়া মাদকের অনুপ্রবেশ রোধে কোস্ট গার্ডের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোস্ট গার্ডকে সুসজ্জিত, শক্তিশালী ও টহল ব্যবস্থা গতিশীল করার লক্ষ্যে বাহিনীর জনবল বৃদ্ধি এবং ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন চট্টগ্রাম হতে ১টি, মংলা হতে ১টি ও ভোলা হতে ১টি করে মোট ৩টি জাহাজ উপকূলীয় এলাকায় টহলে নিয়োজিত রয়েছে।

এছাড়া গভীর সমুদ্রে সব ধরনের মাদকের অনুপ্রবেশসহ সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে সার্বক্ষণিকভাবে ১টি জাহাজ নিয়োজিত থাকে এবং কোস্টগার্ডের মোট ৫৮টি বেইসস্টেশান/আউটপোস্ট কর্তৃক কোস্টগার্ডের নিজস্ব বোট দ্বারা প্রাত্যহিক প্রায় ১০০-১১০টি অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এ বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য আরো জলযান, জনবল ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। এছাড়া স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে কোস্ট গার্ডকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাহিনীতে রূপান্তর করা হবে।

Advertisement

এইচএস/এমএসএইচ/এমএস