একান্ত আপন ব্যক্তিই বন্ধু হয়। বন্ধুর জন্য খোলা থাকে সহযোগিতার সব দরজা। কুরআনের ভাষায় বন্ধুকে 'ওলি' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি ও বন্ধু হতে ছোট্ট দু'টি আমলের কথা কুরআনে উঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দার উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন-‘জেনে রেখ! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুগণের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তাগ্রস্তও হবেন না; যারা ঈমান এনেছেন এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলেন বা তাকওয়ার পথ অনুসরণ করেন। তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা। (সুরা ইউনুছ : আয়াত ৬২-৬৪)
Advertisement
এ আয়াতে আল্লাহর একান্ত বন্ধু হতে ছোট্ট দু'টি আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হলো- আল্লাহর প্রতি স্বচ্ছ ঈমান।আর দ্বিতীয়টি হলো- তাকওয়া অর্জন করা বা তাকে ভয় করা।এ দু'টি আমলই অন্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যা কাউকে দেখানো যায় না। বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে এ দু'টি আমলের বেশি অভাব পরিলক্ষিত।
যার অভাব হলেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে সতর্ক করার জন্য রোগ-ব্যধি, মহামারি, দুর্যোগসহ নানান বিপদ-আপদ দিয়ে থাকেন। আল্লাহর দেয়া এসব বিপদ-আপদ দেখে যারা আল্লাহর প্রতি নিজেদের ঈমান বা বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করেন, প্রতিটি কাজে আল্লাহকে ভয় করে তারই দিকে ফিরে আসেন। তারাই আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হন। কুরআনুল কারিমে এসব লোকদের জন্যই সফলতা ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মানুষের ‘ঈমান এবং তাকওয়া’র মধ্যেই তার বন্ধু হওয়ার সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন। ঈমান ও তাকওয়ার গুণে যে যতবেশি পরিপূর্ণ হবে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে বেলায়েতের পথে তত বেশি অগ্রসর ও তত বেশি আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হবেন।
Advertisement
ইমাম আবু জাফর তাহাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘সব মুমিনই দয়াময় আল্লাহর বন্ধু। তবে এদের মধ্যে যারা যতবেশি আল্লাহর অনুগত ও কুরআনের অনুসারী, তারা ততবেশি আল্লাহর কাছে সম্মানিত ও ততবেশি বেলায়েত লাভ তথা নৈকট্য অর্জনের অধিকারী। (ইবনুল মুবারক)
আল্লাহর একান্ত প্রিয় হতে মুমিনের আমলকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তাহলো-- ফরজ বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করা।- ফরজ বিধান পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেলায়েত অর্জন করা।
যারা ঈমান ও ভয়ের সঙ্গে আল্লাহর সামনে নিজেকে পেশ করবে তাদের সম্পর্কে হাদিসে অনন্য মর্যাদা ঘোষিত হয়েছে। হাদিসে এসেছে-‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আর আমার নৈটক্য অর্জন বা ওলি হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে থাকে, তন্মধ্যে সে কাজ আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি; যে কাজ আমি ফরজ করেছি। (অর্থাৎ ফরজ কাজ পালন করাই আল্লাহর বন্ধু হওয়ার জন্য সর্ব প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয় কাজ।)তারপর বান্দা অন্যান্য নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে বেলায়েতের পথে অগ্রসর হতে থাকে। আর তখনই আমি বান্দাকে বন্ধু হিসেবে ভালোবাসতে থাকি।
আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্র 'কান'-এ পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়; আমি তার দর্শনেন্দ্রিয় (চোখ) হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়; আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে হাঁটে।
Advertisement
সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা দিয়ে থাকি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’ (মুয়াত্তা মালেক)
সুতরাং মানুষকে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার জন্য পরিপূর্ণ ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী হওয়ার বিকল্প নেই। তাই আল্লাহর ওলি বা বন্ধু হতে হলে ঈমান ও তাকওয়ার সঙ্গে তাঁর ফরজ বিধানাবলী পালনের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদের নিয়োজিত করাও জরুরি।
সে আলোকে যারা সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণে সঠিক ঈমান সংরক্ষণ করেন, দুনিয়ার সব হারাম ও নিষেধ বর্জনের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করেন এবং তাঁর ওপর অর্পিত যাবতীয় ফরজ দায়িত্ব যথাযথ আদায়ের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত-বন্দেগি করেন, তারাই হলেন আল্লাহর ওলি বা বন্ধু।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার বন্ধু হতে পরিপূর্ণ ঈমান ও তাকওয়ার অর্জনের তাওফিক দান করুন। কুরআন ও হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। ফরজ ও নফল ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। মহামারি কারোনায় আল্লাহকে বেশি বেশি ভয় ও তার সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস