জাতীয়

করোনায় সংক্রমণের হার কি কমছে?

দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার ১ এর নিচে নেমে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের পরের ২-১ দিন রেকর্ডসংখ্যক সংক্রমণের হার ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগীর মাধ্যমে কতজন সংক্রমিত হয় সে হারকে 'রেট অব ট্রান্সমিশন' বলা হয়। পর্যায়ক্রমে সংক্রমণের হার নেমে জুন মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ১ দশমিক শূন্য ৪ জনে নামে।

Advertisement

ধারণা করা হচ্ছে, চলতি জুলাই মাসের গত কয়েকদিনে সংক্রমণের হার ১ এর নিচে দশমিক ৯৯ এ নেমে এসেছে অর্থাৎ বর্তমানে ১ জন আক্রান্ত রোগীর মাধ্যমে একজনেরও কম মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সংক্রমণের হার ১ এর নিচে নেমে এলে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এবং স্থিতিশীল রয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইইডিসিআরের এক কর্মকর্তা সোমবার ( ৬ জুলাই) জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, অফিসিয়ালি জুন মাসের শেষ পর্যন্ত সংক্রমণের হার ছিল ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। গত কয়েকদিনে সংক্রমণের হার ১ এর নিচে নেমে আসার ধারণা করা হলেও সংক্রমণ কমেছে বলে আত্মতৃপ্তিতে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গত কয়েকদিন নমুনা পরীক্ষার কিটের অপ্রতুল সরবরাহের কারণে কম সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার কারণে নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগীও কম আসছে। বৃষ্টির কারণেও লোকজন কম বাইরে বের হচ্ছে। ফলে মানুষের সাথে মানুষের সংস্পর্শ কম হচ্ছে। এসব কারণে আপাতদৃষ্টিতে সংক্রমণের হার হয়তো ১ এর নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু বাস্তবে নমুনা পরীক্ষা বেশি করা হলে এবং বন্যা ও বৃষ্টির কারণে লোকজনের পরীক্ষা কেন্দ্র বা হাসপাতালে উপস্থিতি কম না হলে সংক্রমণের হার ঠিক কী বুঝা যাবে।

রোগতত্ত্ববিদরা প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য সংক্রমিত এলাকাগুলোতে নমুনা পরীক্ষা করতে আসা মানুষের সংখ্যা, হাসপাতালে রোগীর চাপ ইত্যাদি বিবেচনায় নেন বলে জানান তিনি।

Advertisement

নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এপ্রিল মাসের ৯ কিংবা ১০ তারিখে সর্বোচ্চ সংক্রমণের হার ২ দশমিক ৫ ছিল অর্থাৎ ওই সময় ১ জন আক্রান্ত রোগীর মাধ্যমে গড়ে ২ দশমিক ৫ জন আক্রান্ত হয়। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সংক্রমণের হার ১ দশমিক ৮ থেকে ১ দশমিক ৯ ছিল। ২১ এপ্রিল সংক্রমণের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। পরবর্তীতে মে ও জুনের প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণের হার ১ দশমিক ২ ও জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ১ দশমিক ১ এ নেমে আসে। জুনের শেষে সংক্রমণের হার ১ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ৩০ জুন পর্যন্ত সংক্রমণের হার ১ এর বেশি ছিল। সর্বশেষ তথ্য না পেলেও গত কয়েকদিনের সংক্রমণের গতিধারার হিসাবে তিনি সংক্রমণের হার ১ এ নেমেছে বলে ধারণা করেন।

তবে প্রকৃত তথ্য পেতে হলে এক সপ্তাহের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ছাড়া বলা ঠিক হবে না বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

সংক্রমণের হার প্রকৃতপক্ষে কত এ নিয়ে আইইডিসিআর কিংবা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।

Advertisement

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন সংক্রমণ কম দেখে সংক্রমণের হার কমেছে তা বলা যাবে না। বিভিন্ন কারণে সংক্রমণের হার কম হতে পারে। যেমন- পর্যাপ্ত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা না হওয়া, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে না আসা, ইত্যাদি।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ না করে সংক্রমণের প্রকৃত হার বলা দুরূহ ব্যাপার বলে মনে করেন তিনি।

সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, সামনে কোরবানির ঈদের কারণে সংক্রমণের হার আবার বৃদ্ধি পেতে পারে। মানুষ গ্রামে ঈদ করতে গেলে এবং কোরবানির হাটে সমবেত হলে সংক্রমণ বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সংক্রমণের ধারা আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।

উল্লেখ্য, দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এ পর্যন্ত দেশে মোট আট লাখ ৪৬ হাজার ৬২টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জনে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৫২ জনের। মোট সুস্থ হয়েছেন ৭২ হাজার ৬২৫ জন।

এমইউ/জেডএ/পিআর