রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন ৫৭/১৫ পান্থপথের ওয়ালটন প্লাজার (এসটি) শোরুমে মালামাল ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার সুমন ও রানাকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
Advertisement
গ্রেফতার এ ডাকাতদের জেলেই পরিচয় এবং তারা জেলে বসেই ডাকাতির পরিকল্পনা করে।
রোববার (৫ জুলাই) সুমন, রানা ও সাথীকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। শেরেবাংলা নগর থানায় করা ডাকাতি মামলায় সুমন ও রানাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাথীকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরি আসামি সুমন ও রানার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং সাথীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রোববার (৫ জুলাই) দুপুরে শেরেবাংলা নগর থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘ডাকাতির মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২৪টি ওয়ালটন ফ্রিজ, পাঁচটি এলইডি টেলিভিশন, একটি মোবাইলফোন, ড্রাইভারের সাড়ে চার হাজার টাকা এবং হেলপারের ৮০০ টাকা নিয়ে যায় ডাকাতরা। এর মধ্যে পুলিশ চার আসামিকে গ্রেফতার, ১৮টি ওয়ালটন ফ্রিজ এবং তিনটি এলইডি টেলিভিশন উদ্ধারে সক্ষম হয়েছে।’
Advertisement
ডাকাতির বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জে ডিলারের কাছে (রহমত ইলেকট্রনিকস) পাঠানোর উদ্দেশে ওয়ালটন কোম্পানির নিজস্ব পরিবহনে করে (ঢাকা মেট্রো ড-১১-৭০-৩৫) শোরুমের কর্মচারী জিহাদ হোসেন, সাদ্দাম হোসেন, মো. তারেক হোসেন মারফত মালামাল উঠানো হয় এবং পণ্যের চালান কপি ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন (৩০) এবং হেলপার মিরাজের (১৯) কাছে হস্তান্তর করে শোরুম কর্মচারীরা চলে যায়। তারা স্থান ত্যাগ করার পরপরই একটি খালি পিকআপযোগে সাত-আটজন দুষ্কৃতিকারী এসে তাদের হাতে থাকা চাপাতির ভয় দেখিয়ে ওয়ালটনের ড্রাইভার-হেলপারকে গাড়িতে ওঠায় এবং বিভিন্ন জায়গায় মালামাল নামিয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়।’
ঘটনার পর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করছিলেন থানার উপ-পরিদর্শক এসআই সুমন চন্দ্র শীল। মামলার মূল রহস্য উদঘাটন এবং আলামত উদ্ধারে কাজ শুরু করে শেরেবাংলা নগর থানা টিম।
ডিসি হারুন বলেন, ‘মামলার ঘটনার তেমন কোনো ক্লু না থাকায় তদন্ত শুরু করতে হয় বড় পরিসরে। প্রথমে সিসিটিভি ক্যামেরার সহায়তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজ যাচাই-বাছাইসহ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই রবিউল ইসলামকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তদন্ত টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। আসামির স্বীকারোক্তি মতে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকা থেকে সাতটি ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়।’
অন্যান্য মালামাল ও আসামিদের কথা জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানায়, ডাকাতিতে তার চার সহযোগী মো. শাহজাহান (২৪), মেহেদী হাসান মৃধা ওরফে হাসান (২৮), মো. রনি (২৫) ও আব্দুর রহিম (২৮) ময়মনসিংহ জেলা ডিবি পুলিশ কর্তৃক আটকের পর জেলহাজতে রয়েছেন। অপর আসামি সুমন রানাসহ অন্যরা পলাতক।
Advertisement
তথ্য যাচাইয়ের পর তদন্ত টিম ময়মনসিংহ থেকে হাসান ও রনির হেফাজতে থাকা দুটি ফ্রিজ ও দুটি টেলিভিশন উদ্ধার করে। পরে রবিউল ইসলাম ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। রবিউলের দেয়া তথ্যমতে, গত ৪ জুলাই ডাকাতিতে অংশগ্রহণকারী সুমন ও রানাকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জাউচর আরশিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার ও একটি টেলিভিশন উদ্ধার করা হয়।
তাদের দেয়া তথ্যমতে, সাভার-আশুলিয়ায় মেহেদী হাসান মৃধার দুই আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দুটি ফ্রিজ জব্দ করা হয়। এছাড়া তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাথী নামে একজনকে গ্রেফতার ও তার দোকান থেকে ছয়টি ফ্রিজ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ডাকাতির ঘটনায় অংশগ্রহণকারীরা আন্তঃবিভাগীয় ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। জেলহাজতে থাকাকালে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেখানেই ডাকাতির পরিকল্পনা করেন তারা। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে আদালত সোপর্দ করা হবে বলেও জানান ডিসি হারুন।
জেএ/এফআর/এমকেএইচ