নিহাল এখন বহুজাতিক কোম্পানির করপোরেট ম্যানেজার। মায়ের কোল পেরিয়ে নিহাল যেদিন ক্লাস থ্রির ফাইনালে সেকেন্ড হয়েছে! এক পলক নির্বাক মৌনতা নিয়ে মা বিড়বিড় করে কী যেন বলেছে; মনে পড়ছে না। আজ নিহালের জন্মদিন। অফিসে ‘যে-যার মতো’ করে ‘উইশ’ করে চলেছে।
Advertisement
অনেক আগেই অফিসের সময় পেরিয়ে গেছে। পিএ বারবার এটা-সেটা ছুঁতো বের করে কিছু বলার অক্ষম রাগে অসফল। নিহালের অপলক অসীম দৃষ্টিতে আবীর মেখে সূর্য আস্তে-আস্তে দেবে যাচ্ছে। কৃত্রিম মৃদুতা নিয়ে প্রশ্ন, ‘স্যার, অফিস তো শেষ। নতুন কোনো অ্যাসাইনমেন্ট?’
সম্বিৎ ফিরে, ‘না, কোনো অ্যাসাইনমেন্ট নেই। আপনি চলে যান।’
আজ নিহালের খুব মা’র কথা মনে পড়ছে! মৃত্যুর আগের দিনও নিহালের হাতে খেতে দেয়নি! মা ভরাপেট টেংরা ডিম মাছের মতো না হলে খাবার বন্ধ করতেন না। না খেলে কতো কী যে করে, মা খাইয়ে দিতেন! উড়ে বেড়ানো পাখি, চম্পা ফুল, ময়না, কাকাতুয়া, চাঁদ মামা এনে দিতে দিতে খাবার শেষ। দিন, মাস, বছর যায়! চাঁদ মামা, পাখি
Advertisement
আসে না। একসময় নিহাল জানলো, ‘সবই কথার কথা’।
‘সবই কথার কথা’ নিয়ে নিহালের হাতেখড়ি। মায়ের গল্প, বাবার সততার উপদেশ, বন্ধুদের কথামালা! শিক্ষকের স্ববিরোধী পাঠ, সবই কথার কথা নিয়ে বড় হয়েছে। বাড়ি থেকে মাকে নিয়ে বাবা যেদিন ডাক্তারখানা যাচ্ছেন, নিহালও মার সাথে যেতে গোঁ ধরে বলেছে, ‘মা, আমিও যাবো, তোমায় ছেড়ে ক্যামনে থাকবো?’ আস্তে নিহালের কানে কানে বলেছে, ‘নিহা কাঁদিস না বাবা! আমি ভালো হয়ে আসবো। তোকে পাখি দেব, জোনাকি দেব! বাবার মনে কষ্ট দিস না।’
মা বেঁচে ফেরেননি! সবই কথার কথা।
বাবা নতুন মা এনে দিয়ে বলেন, ‘নিহাল, নতুন মা তোমায় খাইয়ে-নাইয়ে দেবে।’ বাবার বলা সবই কথার কথা! প্রখর মেধাবী নিহালের পেছনে ঘোরা ভার্সিটির বন্ধুরা এক এক করে ক্যাডার শ্রেণি-বৈষম্যের যাঁতাকলের টিপ্পনিতে নিহালকে আহত-নিহত করার চেষ্টায় যখন ব্যর্থ! রহস্য বটিকার সন্ধানে নিহালের উত্তর, ‘আসলে আমরা যা বলি, তা করি না; যা করি তা বলি না। যা ভাবার তা ভাবি না, সবই কথার কথা।’
Advertisement
এসইউ/এমকেএইচ