কুকুর যেন গন্ধ শুঁকেই করোনা শনাক্ত করতে পারে সেজন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কুকুরের এই প্রশিক্ষণের কাজ সফলভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
Advertisement
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের মিলটন কিন্স শহরে ছয়টি কুকুরকে রোগ নির্ণয়কারী কুকুর হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
এই সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী ডা. ক্লেয়ার গেস্ট বলেন, আগে থেকে তারা ইঙ্গিত পেয়েছিলেন যে, এই কুকুরগুলোর গন্ধ শুঁকে ভাইরাস ধরতে পারার ক্ষমতা আছে।
এর আগে তিনি বেশ কিছু কুকুরকে গন্ধ শুঁকে ম্যালেরিয়া, ক্যান্সার এবং পারকিনসন রোগ শনাক্ত করার কাজে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
Advertisement
এই গবেষণার কাজ খুব ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং খুব ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন ডা. গেস্ট। তিনি বলছেন, এই কুকুরগুলোর ঘ্রাণ অনুভূতি খুবই প্রখর।
নরমান, ডিগবি, স্টর্ম, স্টার, জ্যাসপার, আর অ্যাশার নামের এই ছয়টি কুকুরকে লন্ডনের সরকারি হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের মোজা এবং ফেস মাস্ক থেকে ভাইরাসের গন্ধ শোঁকার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
তারা আশা করছেন আগামী সপ্তাহে ৩ হাজার ২শ টি নমুনা তারা আনতে পারবেন। বিজ্ঞানীরা দেখবেন কোনগুলোর মধ্যে ভাইরাস আছে। এরপর কুকুরগুলোকে বলা হবে সেগুলোর মধ্যে থেকে পজিটিভ নমুনাগুলো শনাক্ত করতে। দেখা হবে তারা পজিটিভ আর নেগেটিভ আলাদা করতে পারছে কিনা এবং প্রশিক্ষকদের পজিটিভ নমুনাগুলো সম্পর্কে সতর্ক করতে পারছে কিনা ।
গেস্ট বলছেন অ্যাশার নামের কুকুরটি অন্য কুকুরগুলোর চেয়ে প্রশিক্ষণে এগিয়ে আছে। এই ককার স্প্যানিয়েল প্রজাতির কুকুরটি খুবই দক্ষ এবং চালাক।
Advertisement
তিনি বলেন, এই কুকুরটি ইতোমধ্যেই শিখে গেছে কীভাবে ম্যালেরিয়া এবং পারকিনসনস রোগ শনাক্ত করতে হয়। কাজেই আমরা জানি এ কাজে অ্যাশার খুবই দক্ষতার পরিচয় দেবে। প্রশিক্ষণের সময় অ্যাশার নির্ভুলভাবে ঘ্রাণ চিহ্ণিত করতে পারছিল।
তিনি আরও বলেন, আমার মতে অ্যাশার এ ব্যাপারে সবার আগে আছে। স্টর্মও এ কাজে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। সেও বেশ চটপটে এবং কাজটা বেশ উৎসাহ নিয়ে করছে।
প্রাথমিক প্রশিক্ষণের আট সপ্তাহ পর এই কাজে সফল কুকুরগুলোকে নিয়ে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা। তখন তাদের একেবারে লাইভ পরিস্থিতিতে ভাইরাস শনাক্ত করার কাজ করতে দেয়া হবে। অর্থাৎ পরীক্ষার পরিবেশে নয়, একেবারে মানুষের মধ্যে তাদের ছেড়ে দিয়ে ভাইরাস শনাক্ত করার কাজ দেয়া হবে।
ডা. গেস্ট এবং তার সঙ্গে যারা প্রশিক্ষণের কাজ করছেন তারা আশা করছেন, এই প্রকল্প সফল হলে তা আরও বিস্তৃত করা হবে এবং শনাক্তকারী কুকুরগুলো প্রতি ঘন্টায় ২৫০ ব্যক্তির ঘ্রাণ নিয়ে ভাইরাস শনাক্ত করার কাজ করবে। তাদের সম্ভবত বিমানবন্দরে কাজে লাগানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে। টেস্টিং কেন্দ্রগুলোতেও তারা কাজ করতে পারবে।
এই ট্রায়াল বা পরীক্ষার জন্য ব্রিটিশ সরকার ৫ লাখ পাউন্ড অর্থ ব্যয় করেছে এবং লন্ডনের স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসেন এবং ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই প্রকল্পে কাজ করছেন।
ডা. গেস্ট ২০০২ সালে কুকুরকে ঘ্রাণের মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয় করার প্রশিক্ষণ দেন এবং ২০০৮ সালে তিনি এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সংস্থা গড়ে তোলেন।
টিটিএন/এমকেএইচ