বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্রে তিন দশকের তিনজন জনপ্রিয় নায়িকা অভিনয় করেন; যারা কিনা আপন তিন বোন। আশির দশকে ১৯৮৫ সালে শিবলী সাদিক পরিচালিত সেই ‘তিনকন্যা’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। ওই বছরে তিনকন্যা ছবিটি ভালো ব্যবসা করে এবং বাংলাদেশে রীতিমত সাড়া ফেলে দেয়। বাবা হারানো তিন বোনের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই মুভি দিয়েই নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় নায়িকা চম্পার সিনেমায় অভিষেক ঘটে।
Advertisement
এই সিনেমায় আরো অভিনয় করেন সুচন্দা ও ববিতা। এই জনপ্রিয় তিন নায়িকাই বাস্তব জীবনে আপন তিন বোন। সুচন্দা ষাটের দশকে জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন এবং তখনও বিভিন্ন চরিত্র অভিনয় করতেন। ববিতা সেই সময় জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন। তিনকন্যা সিনেমা নায়িকা চম্পার চলার পথকে মসৃন করে। এই ছবিতেই বিখ্যাত সংগীতশিল্পী কুমার শানু প্রথম প্লেব্যাক করেন। তার গাওয়া গানটি খুবই সমাদৃত হয়।
সিনেমাটি দুটি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছে। নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র হলেও তিনকন্যা সিনেমায় নায়কদেরও ভূমিকা কম ছিল না। মুভিটিতে নায়ক হিসেবে দারুণ অভিনয় করেন সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চন, প্রবীর মিত্র।
তিনকন্যা ছবিতে আরো অভিনয় করেন শওকত আকবর, খালেদ আক্তার কল্পনা, সুজা খন্দকার, আহমেদ শরীফসহ আরো অনেকে।
Advertisement
এরপর আর কোনো ছবিতে তাদের তিন বোনকে একসাথে নায়িকা হিসেবে দেখা যায়নি। তবে তিনজন মিলে একসঙ্গে কাজ করেছেন এক সিনেমায়। যেমন সুচন্দা প্রযোজিত চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘বাসনা ’ সিনেমায় ববিতা ও চম্পা অভিনয় করেন। নায়িকা চম্পার সিনেমায় আসার পূর্বে ববিতা ও সুচন্দা একত্রে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘চোর‘, মাসুদ পারভেজের ‘শরীফ বদমাশ’ সহ আরো ছবিতে অভিনয় করেন। ববিতা ও চম্পা জাফর ইকবালের সাথে ‘অবুঝ হৃদয়‘ ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন।
এদিকে তিন বোনের মতোই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তিনজন ভাইও রয়েছেন। যারা একসঙ্গে একই মুভিতে অভিনয় করে জনপ্রিয় হন! শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ব্লকবাস্টার মুভি ‘বীরপুরুষ’ মুক্তি পায় ১৯৮৮ সালে। এই সিনেমাটি ব্যবসার ইতিহাসে রেকর্ড করা ছবি বলেই অভিহিত। এই ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলো অনন্য।
এতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন ড্যাশিং হিরো সোহেল রানা, অ্যাকশন কিং হিরো রুবেল। এছাড়াও এই মুভিতে বীরপুরুষ সোহেল রানাকে পরামর্শ দানকারী হিসেবে অভিনয় করেন কামাল পারভেজ। ঠিক যেমনটি মাসুদ রানাকে তথ্য ও পরামর্শ দেন মেজর রাহাত। এখানে গল্পের প্রয়োজনে সোহেল রানাকে যদি মাসুদ রানা ধরি তবে নিশ্চিৎ বলতে পারি কামাল পারভেজ মেজর রাহাতের ভূমিকায় ছিলেন।
সোহেল রানা মানে মাসুদ পারভেজ, নায়ক রুবেল মানে মাসুম পারভেজ। এ দুই নায়কের ভাই হলেন কামাল পারভেজ। আপন তিন ভাই ‘বীর পুরুষ’ সিনেমায় অভিনয় করেন একসঙ্গে। নায়ক সোহেল রানা সেই সময় সুপারস্টার ইমেজ নিয়ে অভিনয় করতেন। তার অভিনীত ছবি প্রায়ই বর্ষসেরা হতো। আর ‘লড়াকু’র চমক দিয়ে নায়ক রুবেলের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে মাত্র। তাদের ভাই কামাল পারভেজ জনপ্রিয় অভিনেতা না হলেও মাসুদ পারভেজ ক্ল্যাসিক সিনেমা ‘জীবন নৌকা’ দিয়ে অনেক প্রশংসা পেয়েছেন। নায়ক সোহেল রানা ও সুচরিতার সাথে এই ছবিতে কামাল পারভেজের অভিনয় ছিল নজরকাড়া।
Advertisement
আর বীরপুরুষ ছবিতে প্রথমবারের মতো তিন ভাইয়ের পর্দায় উপস্থিতি সাবলীল এবং সার্থক ছিল। মজার বিষয় হলো এই তিন ভাইকেও আর কখনো এক সাথে এক সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায়নি। তবে কামাল পারভেজ প্রযোজিত শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘শত্রু ভয়ঙ্কর’, ‘টপ রংবাজ’ ছবিতে সোহেল রানা ও রুবেল একত্রে অভিনয় করেন। কামাল পারভেজ জায়গা করে নেন সিনেমায় পর্দার পেছনের কারিগর হিসেবে।
তিনি প্রযোজকদের মধ্যে খুব নামকরা। তার প্রযোজিত ‘আমি শাহেনশাহ‘, ‘উদ্ধার’, ‘টর্নেডো কামাল’, ‘শরীফ বদমাশ’, ‘বীরপুরুষ’সহ আরো অনেক চলচ্চিত্রই হিট-সুপারহিটের তালিকায় রয়েছে।
বাংলাদেশের এই তিন ভাই আর তিন বোনের গল্প হয়ত এই প্রজন্মের সিনেমা দর্শকরা অনেকেই জানেন না। তাদের জন্য বলা, তিন নায়ক ভাইদের আদিনিবাস বরিশালে। তিন বোনের আদিনিবাস যশোরে। ঢাকাই সিনেমার একজন দর্শক হিসেবে প্রত্যাশা করি আবারও কোনো এক ছবিতে তিন নায়ক ভাই ও তিন নায়িকা বোনেকে দেখার সুযোগ হবে। হলবিমুখ দর্শককে হলে ফেরাতে এমন চমক কাজে লাগাতেই পারেন সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালকরা। লেখক : ফাত্তাহ তানভীর রানা গল্পকার ও কবি
এলএ/পিআর