করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের লাগাম টানতে আজ শনিবার (৪ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে ২১ দিনের জন্য রাজধানীর ওয়ারী এলাকার একাংশে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। লকডাউন চলবে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। শনিবার ভোর থেকে ওই এলাকার মানুষের অবাধ যাতায়াত, সড়ক, গলি ও গলির মুখ কার্যকরভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
Advertisement
শনিবার দুপুরে ওয়ারীর লকডাউন এলাকা ঘুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. ইমদাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, লকডাউন এলাকায় আমাদের কোনো অব্যবস্থাপনা নেই। প্রতিটি কাজ আমরা সুচারুভাবে পালন করছি। তবে প্রথমদিন হিসেবে যদি কোনো ঘাটতি থেকে থাকে তা আগামী দিনগুলোতে ঠিক হয়ে যাবে।
ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের কোথাও কোনো গ্যাপ নেই। ই-কমার্স রয়েছে, ভ্যান সার্ভিস রয়েছে তারা বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ভেতরে অবস্থান করছেন। ঔষধের ফার্মেসিগুলো খোলা রয়েছে। আমাদের দেড় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী তিন শিফটে কাজ করছেন। এছাড়া আমাদেন অফিসার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লোকজন পরিষ্কার পরিছন্নতা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। লকডাউন এলাকায় নমুনা কালেকশন করা হচ্ছে। এখানে দুইজন ডাক্তার রয়েছেন যারা করোনায় আক্রান্ত ৪৬ জন রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ করছেন। তাদের চিকিৎসা সহায়তা করছেন। অ্যাম্বুলেন্স রেডি রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত আছে।
ওয়ারী এলাকার তিনটি রোড ও পাঁচটি গলি এই লকডাউনের অধীনে রয়েছে। রোডগুলো হলো- টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন) পর্যন্ত। গলিগুলোর মধ্যে লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিটে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে।
Advertisement
গত ৩০ জুন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউন আজ থেকে কার্যকর করা হলো।
লকডাউন কার্যকরের পূর্বে বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রতিটি রাস্তা ও গলির মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিগত তিন দিন মাইকিং করে লকডাউনের প্রস্তুতি এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। ওয়ারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে লকডাউন এলাকার নাম ও কট্রোল রুমের জরুরি ফোন নম্বর উল্লেখ করে ব্যানার টাঙানো হয়েছে।
জানা গেছে, ওয়ারীর লকডাউন এলাকায় গত ১৪ দিনে করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪৬ জন। আশঙ্কা করা হচ্ছে- আরও অনেকে সংক্রমিত হতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন এলাকায় সার্বিকভাবে সব কিছুই বন্ধ থাকবে, শুধু ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনীয় যাতায়াত সুবিধার জন্য ওয়ারী এলাকার দুটি পথ খোলা থাকবে। বাকি পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এ এলাকায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে। নমুনা সংগ্রহ করার জন্য বুথ থাকবে এবং সিটি করপোরেশনের মহানগর জেনারেল হাসপাতালে আক্রান্তদের জন্য আইসোলেশন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সরবরাহের জন্য মীনাবাজার ও স্বপ্নসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যেসব স্বাস্থ্যবিধি (এসওপি) দেয়া হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা হবে।
এর আগে ওয়ারী এলাকা নিয়ে বিশ্লেষণের পাশাপাশি এটিকে লকডাউন করার বিষয়ে প্রস্তুতি নেয় ডিএসসিসি। এছাড়া লকডাউন এলাকায় মানুষের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ, নমুনা সংগ্রহ, হোম কোয়ারেন্টাইন, লকডাউনের কারণে কর্মহীনদের খাদ্য ব্যবস্থাপনা, টেলিমেডিসিন সার্ভিস, রোগী পরিবহন, প্রয়োজনীয় পণ্য হোম ডেলিভারি ও মনিটরিং কমিটিসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হবে এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়।
Advertisement
এএস/এমএফ/পিআর