বিশেষ প্রতিবেদন

‘ভাড়ার ভার আর বহন করা যাচ্ছে না!’

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি ধাক্কা দিয়েছে মানুষের জীবিকায়। বিশেষ করে ঢাকায় স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন, বা ছোট-খাট ব্যসা করতেন, এমন নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপদে। এই শ্রেণির অনেকে কর্ম হারিয়েছেন, অনেকের ব্যবসায় ধস নেমেছে। আয় না থাকায় ঢাকায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে তাদের। সেজন্য অনেকেই নগরীর বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন গ্রামে। আবার কেউ কেউ বড় বাসা ছেড়ে দিয়ে উঠছেন ছোট বাসায়।

Advertisement

এজন্য এখন ঢাকার রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ছে প্রতিটি বাড়িতে ফ্ল্যাট ভাড়ার বিজ্ঞাপন ‘টু-লেট’।রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় দেখা যায়, অনেকেই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এর মধ্যে আবার অনেক শিক্ষার্থীও বাসা ছেড়ে দিয়ে থাকছেন গ্রামে। ভাড়ার চাপ সামলাতে না পেরেই তারা বাসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন।

কলাবাগান এলাকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত মার্চ মাসের শেষের দিকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হলে ওই সময়ই শিক্ষার্থীরা গ্রামে চলে যান।এরপর তাদের বেশিরভাগেরই ঢাকায় ফেরা হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে নাগাদ খুলবে তা-ও বলা যাচ্ছে না। ফলে বাসায় না থাকার পরও বিগত কয়েক মাসের ভাড়া দিতে হয়েছে তাদের। কিন্তু এভাবে আর যেন কুলিয়ে উঠছেন না শিক্ষার্থীরা। উপায় না থাকায় তারা বাসা ছেড়ে দিয়ে ট্রাক ভাড়া করে মালপত্র নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামে।

এই এলাকার বশির উদ্দিন রোডের একটি বাড়িতে আসবাবপত্র নিয়ে উঠছিলেন আনিসুল ইসলাম। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার পরিবার। আনিসুল একটি পোশাক কারখানায় শিফট ইনচার্জ হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আগের বাসাটির ভাড়া ছিল ২৫ হাজার টাকা। গত দুই মাসের বেতন পাইনি। কিছু টাকা হাতে ছিল, যা দিয়ে এখন পর্যন্ত চলছি। এই বাসাটি ১৫ হাজার টাকায় পেলাম, তাই আগের বাসা ছেড়ে দিয়ে এখানে এসেছি। খরচ কমাতেই হবে, না হলে এখন চলা সম্ভব নয়।

Advertisement

ওই বাড়ি দেখাশোনা করেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবারই খারাপ সময় যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ সব বন্ধ। মানুষ ঠিকমতো বেতন পাচ্ছে না। এতে বাসা ভাড়া সবাই দিতে পারছে না। তারা পেট চালাবে নাকি ভাড়া দেবে? তাই যেখানে একটু কম ভাড়ায় বাসা পাওয়া যাচ্ছে সেখানে যাচ্ছে। অনেকেই বলে যাচ্ছে, ভাড়ার ভার আর বহন করা যাচ্ছে না!

বাসার জিনিসপত্র ভ্যানে বহন করেন সুকুর আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, মাসের ২৫ তারিখ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত বাসা পাল্টায় সবাই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগের সময়ের চেয়ে এখন বেশি কাজ করছি। অনেক মানুষ বাসা পাল্টাচ্ছেন। অনেককে দেখেছি গ্রামে চলে যেতে।

জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টাসের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাসিন্দা এক কোটি ৭০ লাখ। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে কর্ম হারিয়ে এদের অনেকে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ঢাকার ভাড়াটিয়াদের সংগঠন ‘ভাড়াটিয়া পরিষদ’ বলছে, বাড়ি ভাড়ার চাপের কারণে এরই মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি ভাড়াটিয়া রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন।

ঢাকাভিত্তিক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক জরিপ বলছে, করোনার কারণে দেশের অন্তত দেড় কোটি মানুষ স্থায়ী কাজ হারিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনার পাশাপাশি নিম্নবিত্ত চাকরিজীবী এবং শ্রমিক শ্রেণিসহ নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ না নিলে এই পরিস্থিতি থেকে বেশিরভাগ মানুষেরই বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়বে।

Advertisement

কেএইচ/এইচএ/পিআর