জাতীয়

সিট আছে ভাড়া নেই, বন্ধ হচ্ছে ছাত্রী হোস্টেল

ভাড়া দিতে দেরি হওয়ায় রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের দুটি মেস থেকে শিক্ষার্থীদের সনদসহ ব্যবহৃত মূল্যবান মালামাল ভাগাড়ে ফেলে দেয়ার ঘটনা এখন সবারই জানা। করোনা মহামারির প্রভাবে শুধু নিম্ন বা মধ্যবিত্তের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ছাত্রী ও কর্মজীবী মহিলারা।

Advertisement

দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ রোধে গত ১৭ মার্চ হতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। একে একে বন্ধ করে দেয়া হয় অফিস-আদালতও। ঘোষাণা করা হয় সাধারণ ছুটির। গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস ও গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয়া হলেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ থাকায় রাজধানীর ছাত্রী ও মহিলা হোস্টেলগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। অনেকে আবার ঢাকায় থেকে গেলেও বর্তমানে তারা হোস্টেল ভাড়া ও খাওয়ার বিল পরিশোধ করতে পারছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ফার্মগেট, গ্রীন রোড, আজিমপুর, পশ্চিম রাজাবাজার, মনিপুরীপাড়া, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রী ও কর্মজীবী মহিলাদের জন্য নিবেদিকা ছাত্রী হোস্টেল, মা-ছাত্রী হোস্টেল, কনফিডেন্স ছাত্রী হোস্টেল, আপন ঘর ছাত্রী হোস্টেল, মাইডাস ছাত্রী নিবাস নামে অসংখ্য হোস্টেল গড়ে তোলা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ছাত্রী ও কর্মজীবী মহিলারা মাসিক চুক্তিতে এসব হোস্টেলে ভাড়া থাকেন।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হোস্টেলে থাকা মেয়েরা নিয়মিত থাকা ও খাওয়ার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মালিকরা বিপদে পড়েছেন। মেয়েরা বাড়ি ভাড়া দিতে না পারলেও মালিককে ঠিকই ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে বাধ্য হয়ে মেয়েদের বিদায় দিয়ে হোস্টেল বন্ধ করে দিচ্ছেন।

রাজধানীতে ব্যাঙের ছাতার মতো ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার জন্য হোস্টেল খোলা হয়। অনেকে আবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট বাড়ির একাধিক ইউনিট ভাড়া নিয়ে মহিলা হোস্টেল তৈরি করেছেন। একটি রুমে গাদাগাদি করে সিট ফেলে মেয়েদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সিট অনুযায়ী ভাড়া দিয়ে ছাত্রী ও কর্মজীবী মেয়েরা সেখানে থাকছেন। বর্তমান করোনা মহামারিতে মেয়েরা ভাড়া দিতে পারছেন না। ফলে ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়া মালিকও ভাড়া দিতে পারছেন না। এ কারণে তারাও (ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়া মালিক) মেয়েদের বিদায় করে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। লালমাটিয়ার নিবেদিকা ছাত্রী হোস্টেলের ম্যানেজার সিখা হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, পাঁচতলা একটি ভাড়া বাড়ি নিয়ে হোস্টেলটি চালানো হচ্ছে। এখনও প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রী ও কর্মজীবী মেয়েরা থাকছেন। থাকা-খাওয়া বাবদ মাসে চার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। এখানে ১০ জন কাজের বুয়া, চারজন নিরাপত্তা প্রহরীসহ ২০ জন কর্মচারী আছেন।

তিনি বলেন, করোনার হানা শুরু হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে এখানে থেকে পড়ালেখা করা অধিকাংশ ছাত্রী বাড়ি চলে যান। অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক কর্মজীবী মেয়েও হোস্টেল ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে ৩০ জন মেয়ে আছেন। কিন্তু তাদের অনেকে থাকা-খাওয়ার বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। সিট রেখে যারা বাড়ি গেছেন তারাও টাকা দিচ্ছেন না। দেব, দিচ্ছি বলে মাস পার করে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে হোস্টেল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মেয়েরা নিয়মিত টাকা পরিশোধ না করলে হোস্টেল ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

মিরপুর-১০ ঠিকানা ছাত্রী ও মহিলা হোস্টেলের মালিক দীপিকা রানী সমদ্দার জাগো নিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর থেকে মেয়েরা হোস্টেল ছেড়ে চলে গেছেন। চাকরিজীবী কয়েকজন হোস্টেলে আছেন। ২৫ জন মেয়ের মধ্যে তিনজন মাসিক ভাড়া দিয়েছেন, বাকিরা দিতে পারছেন না।

Advertisement

তিনি বলেন, আমরা ভাড়ার জন্য কারও ওপর চাপ সৃষ্টি করছি না। ইতোমধ্যে বাড়ির মালিককে মাসিক ভাড়া পরিশোধ করা হয়েছে, অথচ মেয়েরা ভাড়া দিতে পারছে না। মেয়েরা ভাড়া দিতে না পারলে তো হোস্টেল চালানো সম্ভব নয়। এভাবে চলতে থাকলে বাধ্য হয়ে হোস্টেল ছেড়ে মেয়েদের বিদায় করে দিতে হবে।

এমএইচএম/এমএআর/এমএস