জাতীয়

প্রস্তুতি সম্পন্ন, ভোর থেকে লকডাউন হচ্ছে ওয়ারী

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের লাগাম টানতে শনিবার (৪ জুলাই) ভোর ৬টা থেকে ২১ দিনের জন্য রাজধানী ওয়ারী এলাকার কিছু সড়কসহ একাংশ লকডাউন করা হচ্ছে।

Advertisement

গত ৩০ জুন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আগামী ৪ জুলাই ভোর ৬টা থেকে রাজধানীর ওয়ারী এলাকায় ২১ দিনের লকডাউন কার্যকর হবে।’

জানা গেছে, ওয়ারী এলাকার তিনটি রোড ও পাঁচটি গলি এই লকডাউনের অধীনে থাকবে। রোডগুলো হলো- টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন) পর্যন্ত। গলিগুলোর মধ্যে লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট লকডাউনের আওতায় থাকবে।

লকডাউন কার্যকর করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রতিটি রাস্তা ও গলির মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিগত তিন দিন মাইকিং করে লকডাউনের প্রস্তুতিগুলো, সচেতনতা এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। ওয়ারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে লকডাউন এলাকার নাম ও কট্রোল রুমের জরুরি ফোন নম্বর উল্লেখ করে ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়েছে।

Advertisement

জানা গেছে, ওয়ারীর লকডাউন এলাকায় গত ১৪ দিনে করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪৬ জন। আশঙ্কা করা হচ্ছে- আরও অনেকে সংক্রমিত হতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। লকডাউন এলাকায় সার্বিকভাবে সব কিছুই বন্ধ থাকবে, শুধু ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনীয় যাতায়াত সুবিধার জন্য ওয়ারী এলাকার দুটি পথ খোলা থাকবে। বাকি পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। এ এলাকায় একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে। নমুনা সংগ্রহ করার জন্য বুথ থাকবে এবং সিটি করপোরেশনের মহানগর জেনারেল হাসপাতালে আক্রান্তদের জন্য আইসোলেশন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সরবরাহের জন্য মীনাবাজার ও স্বপ্নসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যেসব স্বাস্থ্যবিধি (এসওপি) দেয়া হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা হবে।

এর আগে ওয়ারী এলাকা নিয়ে বিশ্লেষণের পাশাপাশি এটিকে লকডাউন করার বিষয়ে প্রস্তুতি নেয় ডিএসসিসি। এছাড়া লকডাউন এলাকায় মানুষের খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ, নমুনা সংগ্রহ, হোম কোয়ারেন্টাইন, লকডাউনের কারণে কর্মহীনদের খাদ্য ব্যবস্থাপনা, টেলিমেডিসিন সার্ভিস, রোগী পরিবহন, প্রয়োজনীয় পণ্য হোম ডেলিভারি ও মনিটরিং কমিটিসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হবে এসব বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়।

গত ৩০ জুন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ বিষয়ে বলেন, ‘লকডাউন এলাকায় নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেটা দেয়া হবে। শুধুমাত্র ওষুধ ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। তাছাড়া দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রী ই-কমার্সের মাধ্যমে মীনাবাজার, স্বপ্নসহ অন্যান্যরা সরবরাহ করবে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া হবে। সেখানে করোনার নমুনা সংগ্রহ বুথ থাকবে। তাছাড়া ডিএসসিসির মহানগর জেনারেল হাসপাতালকে কার্যকর করে আইসোলেশন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ সময় সমস্ত কিছু বন্ধ থাকবে। তবে চলাচলের জন্য দুটি সড়ক খোলা থাকবে। লকডাউন এলাকায় করোনা নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া অন্যান্য জরুরি সেবাগুলো দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’

এর আগে গত ১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা এক সভায় বসেন। ওই সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনা সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার কথা জানান। সংক্রমণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোন করে লকডাউন ঘোষণা সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Advertisement

এরপর ১০ জুন রাত ১২টা থেকে রাজধানীর পূর্ব রাজারবাজার এলাকা লকডাউন করা হয়। যদিও ২১ দিন শেষ কিছুটা কড়াকড়ি রেখে তুলে নেয়া হয়েছে পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন

এএস/এফআর/এমএস