করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ হকের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
Advertisement
শুক্রবার (৩ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরের মানিকপীর টিলা এলাকায় তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের ঢল নামে।
জানাজায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকী, সহসভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীসহ রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এরপর এম এ হকের মরদেহ বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের কুলুমা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ৮টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।
Advertisement
নিউমোনিয়াসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সিলেটের নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এম এ হক। সেখানে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি করোনায় আক্রান্ত কি-না, তা জানতে বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এখনও আসেনি।
এম এ হকের মৃত্যুতে সাবেক বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোক প্রকাশ করেছেন।
পৃথক শোক বার্তায় তারা বলেন, এম এ হক একজন নিবেদিত জাতীয়তাবাদী আর্দশের মানবতাবাদী রাজনৈতিক ছিলেন। তার মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়েছে তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
Advertisement
বর্ণাঢ্য রাজনীতিকের প্রস্থান এম এ হক। পুরো নাম মোহাম্মদ আব্দুল হক। সিলেটের মানুষের কাছে তিনি ‘হক ভাই’ নামেই পরিচিত। যেমন তার দল, তেমন অন্য যেকোনো দল কিংবা সাধারণ মানুষের মাঝে তিনি ছিলেন বেশ সমাদৃত। সিলেটের যে কোনো সমস্যা মীমাংসা করতে যে কয়জন রাজনীতিবিদ এগিয়ে আসতেন সবার আগেই পাওয়া যেত তাকে। কোনো জনপ্রতিনিধি না হয়েও মানুষের বিপদে-আপদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যেত প্রবীণ এই রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীকে।
১৯৫৪ সালের ১ জুলাই সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজারের কুলুমা গ্রামে জন্ম এম এ হকের। বড় হয়ে সমাজসেবামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি যোগ দেন রাজনীতিতে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জন্মলগ্ন থেকেই জড়িত ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালে থেকে দলও তাকে মূল্যায়ন করতে শুরু করে। দায়িত্ব দেয়া হয় সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতির। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও অর্পিত হয় এমএ হকের কাঁধে। একাধারে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০০২ সালে বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে অর্থমন্ত্রী হন সিলেটের কৃতি সন্তান মরহুম এম সাইফুর রহমান। সাইফুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্টজন ছিলেন তিনি। বিএনপিতে তার অবদানের জন্য ২০০৩ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন তিনি। যদিও তিনি হেরে যান প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের কাছে।
সেই সময়ে নির্বাচনে বিএনপির আরও দুইজন প্রার্থী হয়েছিলেন। সিলেট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আ.ফ.ম কামাল ও বিএনপির বর্তমান কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এম এ হক সেসময় মেয়র পদে জয় লাভ করতে পারেননি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পুনরায় মেয়র পদে নির্বাচন করেও ফের কামরানের কাছে পরাজিত হন তিনি।
২০১২ সালে সিলেট মহানগর বিএনপির কোন্দল মেটাতে তার ওপর অর্পিত হয় দায়িত্ব। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রবীণ এই নেতার কাঁধে তুলে দেন মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব। আন্দোলন সংগ্রামে বলিষ্ট ভূমিকা রাখার জন্য পরবর্তীতে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার মত গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদেই দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত করেন। নিজের নামে গড়ে তুলেন হক ফাউন্ডেশন। দাতব্য এই সংস্থার মাধ্যমে সিলেটের অসহায় অভাবগ্রস্ত অসংখ্য মানুষকে সহায়তা করেছেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে এম এ হক দুই সন্তানের জনক। তার বড় ছেলে ব্যারিস্টার রিয়াশাত আজিম আদনান যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
ছামির মাহমুদ/আরএআর/এমএস