ইতালীয়দের মধ্যে করোনাভাইরাসে উচ্চ-আয়ের মানুষদের চেয়ে দরিদ্রদের মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। দেশটিতে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এর সামাজিক প্রভাব সংক্রান্ত প্রথম এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
Advertisement
করোনাভাইরাসে বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি ইউরোপের এই দেশ। গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো দেশটিতে শনাক্ত হওয়ার পর কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে করোনার ব্যাপক সংক্রমণ প্রথম শুরু হয়েছিল ইতালিতে।
দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো আইএসটিএটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে গত বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের মৃত্যুর হার বিশ্লেষণ করেছে। এই সময়ের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য দক্ষতার স্তরও আলোচনায় এনেছে আইএসটিএটি। ফেব্রুয়ারিতে প্রথম শনাক্ত হলেও দেশটিতে করোনার প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মার্চে।
আইএসটিএটি বলেছে, যেসব ইতালীয়দের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম অর্থাৎ প্রথম দিকেই স্কুল ছেড়ে গেছেন তাদের আয়ু কম। অন্যদিকে, তাদের তুলনায় যারা দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা করেছেন অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা যাদের বেশি তাদের আয়ুও বেশি।
Advertisement
মার্চ মাসে দেশটির করোনাভাইরাস আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে কম শিক্ষিত পুরুষদের অতিরিক্ত মৃত্যুর অনুপাত গত বছরের একই সময়ের ১ দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। নারীদের ক্ষেত্রে গত বছরের মার্চের চেয়ে চলতি বছরের মার্চে মৃত্যুর হার বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ০৮ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশে।
ইতালির জাতীয় পরিসংখ্যা ব্যুরোর পরিসংখ্যানবিদ লিন্ডা সাব্বাদিনি বলেন, দেশটিতে অন্যান্য সামাজিক সূচকের চেয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য-উপাত্ত সহজেই পাওয়া যায় এবং এসব তথ্য-উপাত্ত ইতালিতে আয় এবং শ্রেণি বিভাজনের চমৎকার প্রতিনিধিত্ব করে।
আইএসটিএটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুবিধাবঞ্চিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার ফলে মানুষের ছোট অথবা অত্যন্ত জনাকীর্ণ বাসা-বাড়িতে বসবাস করার ঝুঁকি বেড়ে যায়। একই সঙ্গে তাদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
এমনকি লকডাউনের সময় নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠী কৃষি, গণপরিবহন এবং প্রবীণদের সহায়তা করার মতো বিভিন্ন খাতে কাজ করতে বাধ্য হয়। করোনাভাইরাস সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যব্যবস্থা উন্মোচন করেছে বলে আইএসটিএটির গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
Advertisement
আইএসটিএটি বলেছে, ৬৫ থেকে ৭৯ বছর বয়সী কম-যোগ্যতাসম্পন্ন পুরুষদের মৃত্যু হার আগের বছরে ১ দশমিক ২৮ শতাংশ থাকলেও চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৫৮ শতাংশে। নারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর এই হার গত বছরের মার্চের ১ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে চলতি বছরের একই সময়ে ১ দশমিক ৬৮ শতাংশে পৌঁছায়।
কম-যোগ্যতাসম্পন্ন ৩৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম নারীদের অতিরিক্ত মৃত্যুর হার গত বছরের মার্চে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ থাকলেও ২০২০ সালের একই সময়ে তা ১ দশমিক ৭৬ শতাংশে দাঁড়ায়।
এসআইএস/এমএস