বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বিজেএমসি বা পাট মন্ত্রণালয় থেকে না হয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কাম কার্যালয় থেকে পাটকল বন্ধের ঘোষণা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও শ্রমিক-জনতার সঙ্গে প্রতারণা করা। শুক্রবার (৩ জুলাই) বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
Advertisement
বিবৃতিতে তারা বেলন, একদিকে গত ২৯ জুন শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পাটকলের সিবিএ, নন-সিবিএ শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মিল চালু রেখে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে মর্মে আলোচনার পর যখন শ্রমিকরা আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করে কাজে যোগ দিলো তার দুই দিন পরেই প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে পাটকল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হলো। এ ঘটনা সরকারের কূটকৌশল ছাড়া অন্য কিছু নয়।
বিবৃতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মূখ্য সচিব সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রীয় ২৫টি পাটকলে ১ জুলাই থেকে উৎপাদন বন্ধের ঘোষণার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাম জোটের নেতারা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন- বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ ও জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সিপিবি সভাপতি মুজাদিুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।
Advertisement
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রম প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে শ্রমিকেরা আন্দোলন প্রত্যাহার করল আর প্রধানমন্ত্রী বন্ধের ঘোষণা দিল যাতে শ্রমিকেরা পুনরায় সংঘটিত হওয়া ও আন্দোলনের সুযোগ না পায়। তাছাড়া তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের সরকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েই এবারে পাটকল বন্ধ করছে। আদমজী ৭ দিনের নোটিশে বন্ধ করেছিল এবারে কোনো সময় না দিয়ে বিনা নোটিশে কারখানা বন্ধ হলো। আসলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তারা উভয়েই লুটেরা ধনিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী দল।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করতে হলে ২ মাস পূর্বে নোটিশ দিতে হয়। রাষ্ট্রীয় ২৫টি পাটকল বন্ধে এ নিয়ম মানা হলো না। পাট মন্ত্রণালয় বন্ধ করলে এ নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা ছিল তাই চালাকি করে প্রধানমন্ত্রী বন্ধ করে দিল। কারণ অলিখিতভাবে আছে আইনে যাই থাকুক প্রধানমন্ত্রী কোনো ঘোষণা দিলে সেটাই আইনে পরিণত হবে। রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধে ভোট ডাকাত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সেই সুযোগ কাজে লাগাল।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এমনিতেই আমাদের দেশ থেকে কাঁচা পাট ভারতে পাচার হয়ে যায়, এখন রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ করে পাচারের পথকেই আরও সুগম করে দিল এবং ভারতের পাটকলকে উজ্জীবিত করতেই কী বাংলাদেশের পাটকল বন্ধ করার দেশি-বিদেশি চক্রান্তের অংশ হিসেবে আওয়ামী সরকার এ কাজ করলো তা দেশবাসীর কাছে এক বিরাট প্রশ্ন।
নেতৃবৃন্দ গণদাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে অবিলম্বে পাটকল বন্ধের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। একই সঙ্গে সকল বাম-প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
Advertisement
এফএইচএস/এমএফ/জেআইএম