জাতীয়

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা

শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ কথা জানিয়েছেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সংস্কার ও আধুনিকায়নের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে।

মুখ্য সচিব বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন ও রিমডেলিংয়ের জন্য উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দেয়া হবে। শ্রমিকদের আরও দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। পরে এ কারখানাগুলো পুনরায় চালু হলে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের পাওনা সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে দেয়া হবে। এ জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

Advertisement

এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্য সচিব বলেন, পাটকল শ্রমিকরা এত দিন ঠিকমতো তাদের পাওনা পেতেন না। এখন তাদের সব পাওনা বুঝিয়ে দেয়া হবে। পাওনার ৫০ শতাংশ টাকা নগদ দেয়া হবে। বাকি ৫০ শতাংশ পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেয়া হবে।

তিনি বলেন, মূলত শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য ৫০ শতাংশ পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেয়া হবে। এতে শ্রমিকরা এখন যে অবস্থায় আছেন তার চেয়ে বেশি ভালো থাকবেন। এর আগে সকালে গণভবনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল রয়েছে।

উল্লেখ্য, ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারীর চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসায়নের সিদ্ধান্ত গত রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া সেদিন বলেছিলেন, শ্রমিকদের অবসায়নের পর আগামী ছয় মাসের মধ্যে পিপিপির (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) আওতায় আধুনিকায়ন করে এসব পাটকলকে উৎপাদনমুখী করা হবে। তখন এসব শ্রমিক সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন।

Advertisement

২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে আট হাজার ৯৫৪ পাটকল শ্রমিক অবসরে গেছেন, তাদের সব পাওনাও একসঙ্গে বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন পাটমন্ত্রী।

তবে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এর বিরোধিতায় মিছিল-সমাবেশের মত কর্মসূচি করেছে গত কয়েক দিন ধরে। বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা যেখানে বাড়ছে, সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন হলে শ্রমিক ছাঁটাই নয়, বরং নতুন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে যুক্তি দিয়ে আসছেন প্রতিবাদকারীরা।

এ পর্যন্ত এই পাটকলগুলোর পুঞ্জিভূত ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘এখানে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে তাদের অবসরে পাঠানো হচ্ছে।’

২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিক অবসরকালীন সুবিধাসহ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাবেন জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, সেজন্য আগামী তিন দিনের মধ্যে শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনে থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে মনোয়ার জুট মিল ছাড়া সবগুলোতেই উৎপাদন চলছে। এসব কারখানায় ২৪ হাজার ৮৬৬ স্থায়ী শ্রমিকের বাইরে তালিকাভুক্ত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক আছে প্রায় ২৬ হাজার।

বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো লাভ দেখাতে পারলেও বিজেএমসির আওতাধীন মিলগুলো বছরের পর বছর লোকসান করে যাচ্ছে, যার পেছনে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া এর আগে জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো গত ৪৪ বছরের মধ্যে মাত্র চার বছর লাভ করেছে। ৪৮ বছরে এই খাতে সরকারকে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। প্রতি বছর শ্রমিকের মজুরিসহ খরচ মেটাতে সরকারের উপর নির্ভর করতে হয়েছে।

এইউএ/এএইচ/এমকেএইচ