বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশ মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মাত্র তিন মাসে পুলিশ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রশংসা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও প্রশংসা করেছেন। কিন্তু একসময় করোনা চলে যাবে, তখন কী হবে? আমরা কি আগের অবস্থায় ফিরে যাব? না, আমরা যেখানে গিয়েছি সেখান থেকে আর ফিরে আসব না। সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাব। মানুষের ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা কেনা যায় না, অর্জন করতে হয়।’
Advertisement
বাংলাদেশ পুলিশকে জনবান্ধব, আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্যে ইনোভেশন অ্যান্ড বেস্ট প্র্যাকটিস শাখা আয়োজিত পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মতামত গ্রহণ বিষয়ক পাঁচ দিনের কর্মশালার বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) শেষ দিন ছিল। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।
পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনীকে উন্নত দেশের উপযোগী আধুনিক ও জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে কাজ করছেন বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই কর্মশালায় কনস্টেবল থেকে শুরু করে সব পদমর্যাদার অফিসার ও ফোর্সের মতামত জানতে চান।
আইজিপি সবার মতামত নিয়ে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে পুলিশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চান, যাতে জনগণ পুলিশকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসে, সম্মান করে, শ্রদ্ধা জানায়; যাতে জনগণের হৃদয়ে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী আসন করে নিতে পারে বাংলাদেশ পুলিশ।
Advertisement
করোনাকালে পুলিশের ভূমিকা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম দিন থেকেই কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর জন্য অপেক্ষা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক পুলিশ সদস্য নিজের অজান্তেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন ৪৪ জন সম্মুখযোদ্ধা বীর পুলিশ সদস্য।’
বর্তমানে পুলিশ সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষা সামগ্রী রয়েছে উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘আমরা করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে মাত্র দুই সপ্তাহে ২৫০ থেকে ৫০০ বেডের কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় ঢাকায় আধুনিক চিকিৎসা সুবিধাসম্পন্ন একটি হাসপাতাল ভাড়া করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মাত্র ১২ দিনে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালেও কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের মতো একই প্রটোকলে করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ফলে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাদের মৃত্যুর হার কমছে।’
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে জনগণের সেবায় পুলিশের অনন্য অবদানের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘বর্তমান করোনাকালে পুলিশ যেভাবে জনগণের কাছে গেছে, তাদের পাশে থেকেছে, তাদের সুরক্ষা দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের প্রশংসা করছেন। পুলিশ প্রধান হিসেবে এ জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত।’
তিনি বলেন, ‘করোনায় পুলিশ শুধু কোয়ারেন্টাইন, লকডাউনই বাস্তবায়ন করেনি। অসহায় মানুষের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে যখন স্বজনরা কেউ এগিয়ে আসেনি, তখন পুলিশ সদস্যরা তাদের জানাজার আয়োজন, দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছেন। এসব দায়িত্ব পুলিশের নয়, পুলিশকে এ দায়িত্ব দেয়াও হয়নি। কিন্তু পুলিশ কেন এটা করেছে? পুলিশ কাজটি নিজেদের মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে করেছে। এজন্য মাত্র তিন মাসে পুলিশ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে।’
Advertisement
ড. বেনজীর বলেন, ‘৫০ বছর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ সেবায় পুলিশের জন্য একটা সুযোগ তৈরি করেছিল। ৫০ বছর পর করোনা আবার জনগণের কাছে যাওয়ার একটা সুযোগ নিয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের পুলিশ হতে হলে জনগণকে ভালোবাসতে হবে। তাদের জন্য কাজ করতে হবে, তাদের কাছে যেতে হবে। দমন-পীড়ন থেকে বেরিয়ে এসে আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। পুলিশকে সব ধরনের দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে না, মাদকমুক্ত পুলিশ তথা দেশ গড়ে তুলতে হবে।’
আইজিপি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুলিশ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে সাধারণ থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল দিয়ে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকহানাদার বাহিনীকে মোকাবিলা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের অন্যতম সারথি হিসেবে দেশের জন্য রক্ত দিয়ে গড়া এ বাহিনীকে উন্নত দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।’
আইজিপি তার বক্তব্যের শুরুতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে শহীদ পুলিশ সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি তাদের পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। যেসব পুলিশ সদস্য অসুস্থ রয়েছেন তাদের দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করেন।
বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিটকে পাঁচটি ক্লাস্টারে ভাগ করে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সব পদমর্যাদার পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য উত্তম চর্চা, ক্যারিয়ার, দুর্নীতি, ওয়েলফেয়ারসহ অন্যান্য বিষয়ে লিখিত মতামত দেন।
জেইউ/এফআর/এমকেএইচ