চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের ৩০ লাখ বাসিন্দাকে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেছেন, ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস করা এবং ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে হংকংয়ের বাসিন্দাদের।
Advertisement
মঙ্গলবার চীনের পার্লামেন্টে হংকং নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে। পরবর্তীতে এতে স্বাক্ষর করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই আইনের কারণে স্বায়ত্তশাসিত হংকংয়ের ওপর চীনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং ওই নগরীর স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চীনের পাস করা নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের প্রতিবাদে প্রবল বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে উঠেছে হংকং। এই অবস্থায় হংকং নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হংকং ইস্যুতে বেশ চাপে পড়ল চীন।
বুধবার হাউস অব কমন্সে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘(চীনের) নতুন নিরাপত্তা আইনের কারণে হংকংবাসীর স্বায়ত্তশাসন লঙ্ঘন হচ্ছে এবং ভুক্তভোগীরা চাইলে আগের এই ব্রিটিশ উপনিবেশ ছেড়ে ব্রিটেনে চলে আসতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাড়ে তিন লাখ ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী এবং আরও ২৬ লাখ যোগ্য আবেদনকারীকে আগামী পাঁচ বছর ব্রিটেনে গিয়ে বসবাসের সুযোগ দেয়া হবে। তার এক বছর পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ব্রিটেনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন।’
Advertisement
এর আগে হংকংয়ের যেসব বাসিন্দাদের কাছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ওভারসিজ পাসপোর্ট রয়েছে, ’৮০-এর দশকে তাদের বিশেষ কিছু সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে তা কাটছাঁট করা হয়েছে। তারপরও এই পাসপোর্ট যাদের রয়েছে, তারা এখনও ভিসা ছাড়াই ছয় মাসের জন্য ব্রিটেনে কাটাতে পারেন।
বরিস জনসন ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন নিয়মে অনাবাসী ব্রিটিশ নাগরিক এবং তাদের ওপরে নির্ভরশীলরা পাঁচ বছরের জন্য ব্রিটেনে গিয়ে বসবাসের পাশাপাশি কর্মসংস্থান এবং পড়াশোনার সুযোগ পাবেন। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তারা স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তার একবছর পরই নাগরিকত্বের আবেদন করা যাবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, হংকংয়ের স্থানীয় প্রশাসন মঙ্গলবার যে নতুন আইন পাস করার কথা জানিয়েছে, তা ১৯৮৫ সালে ব্রিটেন এবং চীনের মধ্যে হওয়া যৌথ ঘোষণার পরিপন্থী। নতুন এই আইন স্পষ্টতই দুই দেশের আইনি চুক্তির খেলাপ করেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বরিস জনসন।
ওই চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৯৭ সালে হংকংয়ের হস্তান্তর হওয়ার পর ৫০ বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে হংকং এবং সেখানকার বাসিন্দাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না চীন। বরিস জনসন বলেন, যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে হংকংকে দেয়া স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে এই নতুন আইন।
Advertisement
চীনে পাস হওয়া বিতর্কিত এই আইনে কর্তৃপক্ষকে অবমাননা, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন ও বিচ্ছিন্নতাবাদে বিদেশিদের সঙ্গে সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, কেউ এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলেও জানানো হয়েছে।
তবে চীন দাবি করেছে, আইনটি হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনের জন্য হুমকি নয়। পশ্চিমারা বলছেন, হংকং এতদিন যে বিশেষ মর্যাদা পেয়ে আসছে, নতুন নিরাপত্তা আইনের কারণে তা আর পাবে না। ফলে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে হংকংয়ে।
১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন থেকেই ‘এক দেশ, দুই নীতি’ পদ্ধতির আওতায় স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ভোগ করে আসছে হংকং।
সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা
এসআর/পিআর