আন্তর্জাতিক

জি–ফোর ভাইরাসের মহামারির ‘শঙ্কা’ নিয়ে নতুন তথ্য দিল চীন

মহামারির শঙ্কা রয়েছে এমন একটি নতুন ধরনের সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস শূকরের দেহে শনাক্ত হয়েছে বলে বিশ্বকে সতর্ক করে দিয়েছেন চীনের একদল বিজ্ঞানী। এর একদিন পরই দেশটির সরকার বলছে, নতুন সোয়াইন ফ্লুর প্রজাতিটি নিয়ে যে গবেষণা হয়েছে তা প্রতিনিধিত্বশীল নয়।

Advertisement

গত বছরের ডিসেম্বরে এই চীনেরই উহান থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস। করোনা বিশ্বজুড়ে এক কোটির বেশি মানুষকে আক্রান্ত করে প্রাণ কেড়েছে ৫ লাখের বেশি মানুষের। বাদুড় থেকে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ অজ্ঞাত কোনও প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যদিও এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের উৎপত্তির ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি।

গত সোমবার মার্কিন বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী পিএনএএসে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, চীনে শূকরের দেহে সোয়াইন ফ্লুর নতুন একটি প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে। মানবদেহে সংক্রমণ ঘটানোর মতো সব ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে ভাইরাসটিতে। এই গবেষণায় আরেকটি মহামারির সম্ভাব্য শঙ্কার তথ্য জানানো হয়।

কিন্তু বুধবারই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জি–ফোর নামের নতুন এই ভাইরাসের ব্যাপারে উল্টো অবস্থান নিয়ে শঙ্কা নাকচ করে দিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝ্যাও লিজিয়ান বলেন, প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে জি-৪ ভাইরাসটি আসলে এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসের সাবটাইপ। গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, গবেষণার নমুনার পরিমাণ ছিল নগন্য; যা প্রতিনিধিত্বশীল নয়।

Advertisement

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বিশেষজ্ঞরা এই রোগটির ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করবেন। একই সঙ্গে তারা ঠিক সময়ে যথাযথ উপায়ে নিয়ন্ত্রণের জন্য করণীয় সম্পর্কেও সতর্ক করবেন।

২০০৯ সালে মহামারি প্রার্দুভাবের জন্য দায়ী এইচওয়ানএনওয়ান প্রজাতি থেকে জি–ফোর নামের এই ভাইরাস এসেছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয় এবং রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা নিবন্ধটি লিখেছেন। তারা বলছেন, মানুষকে সংক্রমিত করার মতো সব ধরনের বৈশিষ্ট্য নতুন জি–ফোর ভাইরাসে রয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, তারা জি–ফোর ভাইরাসকে উচ্চ সংক্রামক হিসেবে শনাক্ত করেছেন। যা মানবদেহে প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে এবং ভাইরাসজনিত অন্যান্য রোগের চেয়ে এটি বেশি গুরুতর উপসর্গ তৈরি করে।

গবেষকেরা ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চীনের ১০টি প্রদেশের কসাইখানা ও একটি পশু হাসপাতাল থেকে ৩০ হাজার শূকরের নাকের শ্লেষ্মা সংগ্রহ করেন। সেখান থেকে ১৭৯ সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস পান তারা। বেশির ভাগের মধ্যেই ২০১৬ সাল থেকে শূকরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের নতুন ধরন পাওয়া যায়।

Advertisement

গবেষণা অনুযায়ী, শূকরের খামারে কর্মরত প্রায় ১০ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মীর শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ পাওয়া যায়। এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে কিনা সেব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত কতসংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন সেব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি চীন।

গবেষকেরা বলছেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জি–ফোর ভাইরাস মানুষের শরীরে অভিযোজিত হতে পারে। এভাবে আরেকটি মহামারির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। শূকরের সংস্পর্শে থাকা লোকজনকে নজরদারি করতে জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সূত্র: এএফপি।

এসআইএস/এমএস