গত জুন মাসে দেশের ২৭ জেলায় খেলাধুলা করার সময় পুকুরে ও ডোবার পানিতে ডুবে ১০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসব শিশুর বয়স ৬ মাস থেকে ১০ বছরের মধ্যে। এছাড়া একই মাসে বন্ধুদের নিয়ে নদীতে গোসল করতে গিয়ে কয়েকজন কিশোরেরও মৃত্যু হয়েছে।
Advertisement
মৃত বেশিরভাগ শিশুর মা বাড়ির পাশে সন্তানকে খেলতে দিয়ে সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় এমন ঘটনা ঘটছে বলে জেলার সচেতন মহল মনে করছেন।
গত ১ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পঞ্চগড়ে ১০, ঠাকুরগাঁওয়ে ৪, নীলফামারীতে ১, লালমনিরহাটে ৩, কুড়িগ্রামে ৭, দিনাজপুরে ৯, রংপুরে ২, গাইবান্ধায় ৩, লক্ষ্মীপুরে ৮, নওগাঁয় ৪, সুনামগঞ্জে ৭, হবিগঞ্জে ৩, কুষ্টিয়ায় ৪, কুমিল্লায় ২, ভোলায় ৩, চুয়াডাঙ্গায় ১, খাগড়াছড়িতে ৩, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১, বরিশালে ২, ঝালকাঠি ১, মৌলভীবাজারে ২, জামালপুরে ১, মুন্সিগঞ্জে ২, নোয়াখালীতে ৫, নেত্রকোনায় ৮, বরগুনায় ২, সিলেট ১ ও টাঙ্গাইলে ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বিস্তারিত জাগো নিউজের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে-
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে গত এক মাসে পানিতে ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় নদী, নালা, খাল ও পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যুর এসব ঘটনা ঘটনা ঘটে। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে আশঙ্কাজনকভাবে এ মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
Advertisement
সর্বশেষ মঙ্গলবার বোদা উপজেলায় বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের সোনাচান্দী এলাকায় পৃথক ঘটনায় পুকুরের পানিতে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়।
এসব শিশুর বয়স মুূলত ৯ মাস থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এবং প্রত্যন্ত এলাকায় মায়েদের অসচেতনতার কারণে এমন দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত ১০ জুন তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝগ্রামে চার বছরের শিশু আরিফ হোসেন খেলার সময় পুকুরের পানিতে পড়ে মারা যায়। একই দিন আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া এলাকায় তিন বছরের সিয়াম হোসেনের নালার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।
১৩ জুন সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের ভান্ডারু গ্রামে তাবাসসুম জাহান মিম সাত বছরের আরেক শিশুর নালার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। ১৫ জুন উপজেলা সদরের চাকলাহাট ইউনিয়নের নুনিয়া পাড়ায় ৫ বছরের তুষার চন্দ্র রায়েরও নালার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।
Advertisement
১৭ জুন একই উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মিঠাপুকুর এলাকার ৯ মাস বয়সী শিশু নুরী আক্তারের বাড়ির বালতির পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়। ১৮ জুন উপজেলার সদরের মাহান পাড়ায় আড়াই বছরের শিশু আরাফাত ইসলাম রাফি খেলার সময় পুকুরের পানিতে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলে মারা যায়। ১৯ জুন তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের বিড়ালজোত এলাকার আড়াই বছরের মেয়ে লামিয়া আক্তারের পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।
২৪ জুন একই উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের সালাফীগছ এলাকার তিন বছরের রাজিয়া খাতুনও পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। সর্বশেষ ৩০ জুন বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের সোনাচান্দী এলাকায় দুই বছরের রাহাত আলী এবং আড়াই বছরের সৌরভ ইসলামের পৃথকভাবে পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।।
ঠাকুরগাঁও : গত জুন মাসে ঠাকুরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে ৪ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৯ জুন রোববার দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলো, রিপুর উপজেলার রণহাট্টা গ্রামের আলমের ছেলে হামিদুর রহমান (১৫)। সে এ বছর রণহাট্টা চৌরঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। একই উপজেলার নারগুন গ্রামের সোহাগের ছেলে ও একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রহিত (১২)।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ডাঙ্গীপাড়ায় শিহিপুর গন্দর সেতুর নিচ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
অপর দিকে ১ জুন সোমবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জের আত্রাই নদীর জয়গঞ্জ খেয়াঘাটে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলো, মো. রায়িম ইসলাম (১৭) ও সৌরভ (১৮) ইসলাম। তাদের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।
নীলফামারী : নীলফামারী : নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বোড়াগাড়ী গ্রামেগত ১৬ জুন পুকুরের পানিতে ডুবে ফারিয়া আক্তার নামে তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই গ্রামের রিপন ইসলামের মেয়ে।
জানা যায়, শিশুটি বাড়ির পাশে পুকুরের পাশে খেলা করছিল। একপর্যায়ে শিশুটির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বিকেলে পুকুরে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোড়াগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিমন।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে গত এক মাসে পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে গত ১৬ জুন পাটগ্রাম উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের পানবাড়ি এলাকায় খেলতে গিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে মোছা. রুমানা আক্তার (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই এলাকার মো. সুমন মিয়ার মেয়ে।
২৮ জুন আদিতমারী উপজেলায় একই পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। তারা হলো, উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের গিলাবাড়ি গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব (৬) ও একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের নাতি জামাল উদ্দিন (৫)। বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে খেলার সময় পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে জুন মাসে সাত শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। এদের মধ্যে গত ২৮ জুন চিলমারী উপজেলায় সদর ইউনিয়নের কড়াই বরিশাল গ্রামে শান্ত ইসলাম (৭) নামে এক শিশু কলার ভেলায় ঘুরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। সে ওই গ্রামের জাহেদুল ইসলামের ছেলে।
২৯ জুন নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামে বেলাল হোসেন (৮) নামে এক শিশু বাড়ির পাশে দোকান থেকে বিস্কুট কিনতে গিয়ে রাস্তার পাশে বন্যার কারণে ভেঙে যাওয়া গর্তে পড়ে মারা যায়। সে ওই গ্রামের আমীর হোসেনের ছেলে।
৩০ জুন উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের জানজায়গীর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মোস্তাকিম (১৪ মাস) মারা যায়। নিজেদের ঘরে বন্যার পানিতে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়।
এছাড়াও ১৩ জুন ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভোটহাট গ্রামের শামসুল হকের ১৪ মাসের ছেলে সন্তান ফাহাদ হোসেন বাড়ির পুকুরের পানিতে পড়ে মারা যায়। একই দিনে উপজেলার সোনাহাট ইউনিয়নের সোনাহাট গ্রামের বাসিন্দা খয়বর আলীর ছেলে টুটুল মিয়া (১০) বেড়াতে গিয়ে পুকুরের পানিতে পড়ে মারা যায়।
৬ জুন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদে পড়ে গিয়ে খাদিমুল ইসলাম (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে নয়ানীপাড়ার বাসিন্দার জব্বার আলীর ছেলে।
৭ জুন উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ খাদিজা খাতুন (১২) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। সে হাতিয়া ইউনিয়নের চরগুজিমারী গ্রামের জয়নাল হোসেনের মেয়ে।
সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বন্যার পানিতে ডুবে তিনদিনে তিন শিশুর মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দিনাজপুর : গত এক মাসে দিনাজপুরে পানিতে ডুবে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১ জুন বুধবার বাড়ির পাশে খেলা করার সময় নিজ পুকুরের পানিতে ডুবে মো. জিহাদ হোসেন (২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের দক্ষিণ দামোদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিশু জিহাদ হোসেন বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের দক্ষিণ দামোদপুর গ্রামে মো. নুর ইসলামের (হিরু) ছেলে।
৯ জুন দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে আনিকা (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দুপুর আড়াইটার দিকে চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের হাজীপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। আনিকা চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের হাজীপাড়ায় মো. আনিছুর রহমানের মেয়ে।
একই দিন জেলার বিরামপুর শাখা যমুনা নদীতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয় শিশু যুথী আক্তার (৯)। পরদিন ১০ জুন সকাল ৯টায় বিরামপুর পৌরশহরের পশ্চিমে মেয়র আজাদ ফুট ব্রিজের নিচে পিলারের সঙ্গে আটকা অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। যুথী আক্তার ওই এলাকার কবির হোসেনের মেয়ে।
১৩ জুন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে পুকুরে ডুবে সাব্বির (৭) ও দেড় বছরের শিশু কন্যা আছিয়া নামের দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরে বাড়ি থেকে খেলার জন্য বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিল সাব্বির। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রাত ১১টায় পুকুরের পানিতে শিশু সাব্বিরের মরদেহ ভাসতে দেখে এলাকাবাসী।
এর আগে সন্ধ্যায় উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর তেলিপাড়া গ্রামের বাদশাহ মিয়ার দেড় বছর বয়সী কন্যা আছিয়াকে ঘরে রেখে তার মা খাদিজা বেগম সাংসারিক কাজে বাইরে যান। ঘরে ফিরে শিশুটিকে না পেয়ে স্বজনদের নিয়ে খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির পাশের পুকুর থেকে সন্ধ্যার আগে লাশটি পাওয়া যায়।
১৪ জুন দিনাজপুরের বিরল ও হাকিমপুর উপজেলায় পৃথক ঘটনায় পুকুরের পানিতে ডুবে ৩ শিশুর মৃত্যু হয়। জেলার বিরল উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের ভান্ডারা সুইহারা গ্রাম ও বেলা ১১টায় হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের কাদিরপুর গ্রামে পৃথক দুটি ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলো, বিরল উপজেলার ১০নং রানীপুর ইউনিয়নের কাজীপাড়ার গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে মোমিতা আক্তার (৭), একই ইউনিয়নের রানীপুকুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের মেয়ে সুলতানা (৯) এবং হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের কাদিরপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে হুমাইরা (৭)।
একই দিনে হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের কাদিরপুর গ্রামে বেলা ১১টায় বাড়ির পাশে হিমু ও হুমাইরা বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে খেলা করার সময় পানিতে পড়ে যায়। বিষয়টি এলাকাবাসী দেখে পানি থেকে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক হুমাইরাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
রংপুর : রংপুরের পীরগাছায় ডোবার পানিতে ডুবে সুবর্ণা খাতুন (৯) ও কাইফা খাতুন (৮) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত ১৪ জুন (রোববার) বিকেলে বাড়ির পাশে ডোবার পানি থেকে ওই দুই শিশুর উদ্ধার করা হয়।
সুবর্ণা পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের রহমতের চর গ্রামের আব্দুল খালেকের এবং কাইফা পাশ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর গ্রামের বাবলু মিয়ার মেয়ে। তারা সম্পর্কে খালাতো বোন।
জানা গেছে, সুবর্ণা ও কাইফা ওইদিন দুপুরে খাওয়ার পর বাড়ির পাশে খেলা করছিল। এর কিছুক্ষণ পর তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিকেল ৪টার দিকে বাড়ির পাশের ডোবায় তাদের মরদেহ ভাসতে দেখেন সুবর্ণার মা।
এর আগে ১১ জুন (বৃহস্পতিবার) মায়ের সাথে রহমতের চর গ্রামে খালার বাড়িতে বেড়াতে আসে কাইফা। ধারণা করা হচ্ছে খেলার একপর্যায়ে অসাবধানতাবশত ডোবার পানিতে পড়ে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে।
গাইবান্ধা : গত জুন মাসে গাইবান্ধা সদর, সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলায় পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জুন রোববার বিকেলে শিশু নাফিজ নিজ বাড়ির উঠানে খেলছিল। এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন দেখেন উঠানে নাফিজ নেই। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে বাড়ির পাশে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পান। নাফিজ সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের তরফপাহাড়ী গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে।
সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুর জামান রিংকু জানান, ২২ জুন সোমবার সকালে সিহা বাড়ির সামনে পুকুরের ধারে একা খেলছিল। পরে বাড়ির লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর বেলা ১১টার দিকে পুকুর থেকে সিহার লাশ উদ্ধার করে। মৃত সিহা খাতুন গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের কাটিহারা গ্রামের শামীম মিয়ার মেয়ে।
পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম জানান, গত ২৫ জুন বৃহস্পতিবার এ ইউনিয়নের সাঁতারপাড়া গ্রামে কয়েকজন শিশুদের সাথে খেলছিল নাহিদ। হঠাৎ সবার অজান্তে পার্শ্ববর্তী ছোট একটি পুকুরে পড়ে যায় শিশু নাহিদ। অনেক খোঁজাখুঁজির পর পুকুর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। নাহিদ বেতকাপা ইউনিয়নের ডাকঘর এলাকার সাঁতারপাড়া গ্রামে স্বপন মিয়ার ছেলে।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে গত একমাসে পানিতে ডুবে আট শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের অগোচরে খেলতে গিয়ে পুকুর ও নদীতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়।
এদের মধ্যে ২৬ জুন সকালে রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল গ্রামে খেলতে গিয়ে সাইয়্যেদ আরিয়া (৩) ও সাইয়্যেদ ফাইয়াজ (৪) বাড়ির পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। আরিয়া সাইয়্যেদ মো. তাহের জাবেরী আল মাদানীর মেয়ে এবং ফাইয়াজ সাইয়্যেদ ফয়সাল জাবেরী আল মাদানীর ছেলে। তারা সর্ম্পকে চাচাতো ভাই-বোন।
১৫ জুন সকালে কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের আইয়ুবনগর গ্রামের অহনা আক্তার (৬) পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। সে ওই গ্রামের মো. হামিদ মিয়ার মেয়ে।
৯ জুন দুপুরে রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামে কলা গাছের ভেলায় ডাকাতিয়া নদী পার হতে গিয়ে দুইছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো, ওই গ্রামের হারুন সর্দারের মেয়ে হালিমা আক্তার (১০) ও আবদুল কাদের আখনের মেয়ে লামিয়া আক্তার (৫)।
৭ জুন দুপুরে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডারের চর ডাক্তার গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে নাইমা আক্তার রহিমা (৬) ও নুহা আক্তারের (৫) মৃত্যু হয়। নাইমা চরডাক্তার গ্রামের সিরাজের মেয়ে ও নুহা মো. আউদ্দিনের মেয়ে। তারা স্থানীয় দারুল আরকাম স্বতন্ত্র এবতেদায়ি মাদরাসার শিশু শ্রেণির ছাত্র।
৬ জুন সকালে কমলনগর উপজেলার আল আমিন (২) নামে এক শিশু পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। সে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোমিনুর রহমানের ছেলে।
জানতে চাইলে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম এ রহিম বলেন, প্রতিটি মৃত্যুই পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক। আর শিশুদের মৃত্যু পরিবারের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার গতি যেন থামিয়ে দেয়। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুরোধে অভিভাবকদের অধিক সচেতন হতে হবে। সার্বক্ষণিক নজরে রাখার পাশাপাশি বয়স অনুযায়ী প্রতিটি শিশুকে সাঁতার কাটার চর্চা করাতে হবে।
নওগাঁ : জুন মাসে নওগাঁর তিন উপজেলায় পানিতে ডুবে চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের বয়স দেড় থেকে ১০ বছরের মধ্যে।
এদের মধ্যে ১৫ জুন নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় সহপাঠীর সঙ্গে নদীতে গোসল করতে নেমে সাঁতার কাটার একপর্যায়ে পানিতে ডুবে নীতি আক্তার (১০) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। সে উপজেলার আটগ্রামের প্রবাসী ফজলুর রহমানের মেয়ে এবং কলকাকলি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী।
গত ১৯ জুন পোরশা উপজেলায় রাফিয়া সুলতানা নামে দেড় বছর বয়সী এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে উপজেলার নিতপুর দুয়াপালের শহিদুলের মেয়ে। রাফিয়া বাড়ির পাশের পুকুরে নেমে ডুবে যায়।
২০ জুন উপজেলার নিতপুর পূর্ব দিয়াড়াপাড়া গ্রামে তামিম মাহমুদ নামে আড়াই বছর বয়সী এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে নিতপুর পূর্ব দিয়াড়াপাড়া গ্রামে সাদ্দামের ছেলে।
২৪ জুন রানীনগর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর এলাকার হঠাৎপাড়া গ্রামে বিলের পানিতে ডুবে মরিয়ম আক্তার (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে ওই গ্রামের বাবু মিয়ার মেয়ে।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে গত এক মাসে পানিতে ডুবে সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে গত ৮ জুন দোয়ারাবাজার উপজেলায় আশরাফুল ইসলাম নামের দুই বছরের এক শিশু পুকুরে ডুবে মারা যায়। সে দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের লামা সানিয়া গ্রামের প্রবাসী মানিক মিয়ার ছেলে।
১৪ জুন জামালগঞ্জ উপজেলায় হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মুসলিমা খাতুন (৪) ও রহিমা খাতুন (৫) নামে আপন দুই বোনের মৃত্যু হয়। তারা উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের কলকখতা গ্রামের সুরুজ আলীর মেয়ে।
২০ জুন জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের চিলাউড়া মাঝপাড়া গ্রামে পুকুরে ডুবে মারিয়া বেগম (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে মাঝপাড়া গ্রামের দোলন মিয়ার মেয়ে।
২২ জুন বিদ্যালয় থেকে বিস্কুট আনতে গিয়ে ধর্মপাশায় ঝড়ো বাতাসের কবলে পড়ে হাওরে নৌকা ডুবে সুমাইয়া আক্তার (৬) নামের প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়। সে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের চকিয়াচাপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
২৪ জুন ডোবার পানিতে ডুবে তাকমিদ মিয়া (১০) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের সুনই গ্রামের নাজমুল হুদার ছেলে। ২৭ জুন দিরাই উপজেলায় কালনী নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে যাত্রীবাহী একটি ইঞ্জিনের নৌকা ডুবে গেলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর মাটিয়াখাড়া গ্রামের জয়সুন্দর দাস (৫৫) ও তার নাতি দিরাই উপজেলার জারলিয়া গ্রামের রঞ্জিত দাসের ছেলে পৃথম দাস (৯) নৌকার ভেতরে আটকা পড়ে সেখানেই মারা যান।
হবিগঞ্জ : গত একমাসে হবিগঞ্জে পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হচ্ছে মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের তুলশীপুর গ্রামের মিশু মিয়ার মেয়ে তানহা (৫), বানিয়াচং উপজেলার তোপখানা মহল্লার এনামুল হক বাবুলের ১৭ মাস বয়সী মেয়ে সাবা আক্তার ও উপজেলার ব্রাক্ষণডুরা ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের অর্জন সুত্রধরের মেয়ে প্রিয়া সুত্রধর (৩)।
স্থানীয়রা জানায়, তানহা গত ১৮ জুন সকালে বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুরে পরে নিখোঁজ হয়। সকাল ৯টার দিকে পরিবারের লোকজন তার লাশ পুকুরে ভেসে থাকতে দেখেন। চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আপন মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
১০ জুন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা ইউনিয়নের আটপাড়া গ্রামে সাবা আক্তার নামে ১৭ মাস বয়সী এক শিশু খেলাধুলা করার সময় পাশের ডোবায় পড়ে মারা যায়। সে মায়ের সঙ্গে আটপাড়া গ্রামে নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশেরর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন তরফদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২ জুন শায়েস্তাগঞ্জের ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে খেলা করার সময় পুকুরের পানিতে ডুবে প্রিয়া সুত্রধর (৩) নামে এক শিশুর মুত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ আদিল জজ।
কুষ্টিয়া : জুন মাসে কুষ্টিয়া জেলায় পানিতে ডুবে আপন দুই চাচাতো ভাইসহ চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে গত ২৩ জুন খেলতে গিয়ে বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে গিয়ে কুষ্টিয়ার গোস্বামীদূর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর মাগুরার ১নং ওয়ার্ডের মুদি দোকানদার মানোয়ার ইসলামের একমাত্র ছেলে ফরহাদ (৭) পানিতে ডুবে মারা যায়।
২৮ জুন দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের বাহিরমাদী সদরঘাট এলাকায় বাড়ির পাশের খালের পানিতে ডুবে সামিউল ইসলাম (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। সে ওই এলাকার টুটুন সর্দারের ছেলে ।
২৭ জুন ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ক্ষেমিরদিয়ার গ্রামে ক্ষেমিড়দিয়ার-মওলাহাবাসপুর ব্রিজ সংলগ্ন হিসনা নদীতে পড়ে আপন দুই চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যু হয়। নিহত দুই শিশু হচ্ছে ক্ষেমিরদিয়াড় বিলপাড়া গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে মুরসালিন (৭) এবং তারই আপন চাচাতো ভাই সুজন ইসলামের ছেলে আবরার আরাফাত (৫)।
কুমিল্লা : গত মাসে কুমিল্লা পানিতে ডুবে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার লাকসামে বাড়ির পাশে ডোবার পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো, আবু বোরহান (৭) ও আবু রায়হান (৪)। গত ২০ জুন পৌর শহরের পশ্চিমগাঁও সোয়াছয়আনী পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ওই দুই শিশু পশ্চিমগাঁও সোয়াছয়আনী জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মাজহারুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুরে আবু বোরহান ও আবু রায়হান বাড়ির উঠানে খেলছিল। পরে সবার অগোচরে শিশু দুটি ডোবার পানিতে পড়ে যায়। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লাকসাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন।
ভোলা : ভোলায় গত এক মাসে পানিতে ডুবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে গত ১৪ জুন ভোলার দৌলতখানে পানিতে ডুবে মো. হাবিব (০৮) ও মো. নিহাদ (০৬) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাবিব দৌলতখান উপজেলার চর খলিফা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দিদারুল্লাহ গ্রামের নুরুউদ্দিনের ছেলে ও নিহাদ একই গ্রামের নুরুন্নবীর ছেলে। তারা সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই।
অন্যদিকে ২৩ জুন দৌলতখানে খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে তাহমিদ (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার শরীফ হোসেনের ছেলে।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় নদীতে ডুবে সুরাইয়া খাতুন (৭) নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গত ১৪ জুন উপজেলার পারকৃঞ্চপুর গ্রামের মাথাভাঙ্গা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সুরাইয়া খাতুন উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়ানের পারকৃঞ্চ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে ও মাজদাহ সারকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী।
খাগড়াছড়ি : পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে গত এক মাসে পানিতে ডুবে মারা গেছে তিন শিশু। সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে প্রাণ হারায় এ তিন শিশু।
এদের মধ্যে দুইজন পানছড়িতে বাড়ির পাশে পুকুরে ডুবে ও অন্যজন খাগড়াছড়ি জেলা সদরের চেঙ্গী নদীতে ডুবে পানির নিচে তলিয়ে যায়।
গত ৬ জুন খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি গ্রামের গ্রামের মো. সেলিমের মেয়ে তৃষা (৮) ও মো. আল আমিনের মেয়ে আফরোজা (৬) পানিতে ডুবে মারা যায়। তারা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো বোন। বাড়ির অদূরে পুকুর পাড়ে অন্যদের সঙ্গে খেলতে খেলতে পুকুরে ডুবে মারা যায় তারা।
২৬ জুন খাগড়াছড়ির আনন্দ অফিস সংলগ্ন দক্ষিণ গঞ্জপাড়া এলাকায় চেঙ্গী নদীতে আজাদ হোসেন (৭) ডুবে মারা যায়। সে খাগড়াছড়ির গোলাবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ গঞ্জপাড়া এলাকার মো. নুরুল হকের ছেলে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলার নাচোল উপজেলার নেজামপুরে পানিতে ডুবে আঁখি খাতুন নামে দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার নেজামপুর রেলপাড়ার মো. লিটন আলীর মেয়ে।
নেজামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল হক জানান, গত ৯ জুন (মঙ্গলবার) সকাল ৯টার দিকে বাড়ির সামনে বসে খেলছিল আঁখি। এক পর্যায়ে পানির ট্যাপের পাশে গর্তে জমে থাকা পানিতে পড়ে মারা যায় সে। পরে জানতে পেরে পরিবারের লোকজন তার মরদেহ উদ্ধার কর।
বরিশাল : বরিশাল জেলায় গত জুন মাসে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মুলাদী উপজেলায় গত ২২ জুন পানিতে ডুবে মো. আব্দুল্লাহ (২) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এর আগে গত ১৪ জুন উজিরপুর উপজেলায় সুমাইয়া আক্তার নামে (১০) এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
মো. আব্দুল্লাহ মুলাদী উপজেলার চরকালেখান ইউনিয়নের পূর্ব ষোলঘর গ্রামের আনোয়ার হোসেন মৃধার ছেলে। ২২ জুন সকালে বাড়ির উঠানে পাশের পুকুরের পাড়ে আব্দুল্লাহ খেলতে গিয়ে সবার অগোচরে পুকুরের পানিতে পড়ে ডুবে মারা যায়।
অন্যদিকে, গত ১৪ জুন উজিরপুর উপজেলায় পানিতে ডুবে বাবুগঞ্জ উপজেলার রমজানকাঠী গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের মৃত্যু হয়। উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের সাকরাল গ্রামে মায়ের সঙ্গে নানা বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল সুমাইয়া। সবার অজান্তে ১৪ জুন দুপুরে কোনো এক সময় সুমাইয়া বাড়ির পাশের পুকুরে পড়ে মারা যায়।
ঝালকাঠি : জেলার রাজাপুর উপজেলার বাইপাস সংলগ্ন এলাকার খলিফা বাড়ির পুকুরের পানিতে ডুবে ফাহিম খলিফা নামে দেড় বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জুন) সকালে এ ঘটনা ঘটে। ফাহিম আসলাম খলিফার একমাত্র ছেলে।
ফাহিমের দাদা তাজুল ইসলাম খলিফা বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে ফাহিম বাড়ির উঠানে খেলা করছিল। ফাহিম ঘরের পাশেই পুকুরে পড়ে যায়। পরে ফাহিমকে পুকুরে ভাসতে দেখে উদ্ধার করে রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
মৌলভীবাজার : জেলার রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায় পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা একে অপরের খালাতো বোন।
তারা হলো, কদমহাটা এলাকার দেলওয়ার হেসেনের মেয়ে শামিমা আক্তার (৯) ও সদর উপজেলার বর্ষিজোড়া এলাকার সানু মিয়ার মেয়ে সানজিদা আক্তার (৮)।
রোববার (২১ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি ক্যানেলে গোসল করতে নামে ওই দুই শিশু। পরিবারের সদস্যরা কিছু সময় তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে ক্যানেলের পানিতে ভাসতে দেখে দুই শিশুকে।
তাদের উদ্ধার করে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
জামালপুর : জেলার মেলান্দহ উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে সানি (১০) নামে এক শিশু মারা গেছে। সে উপজেলার দুরমুঠ ইউনিয়নের রোকনাই গ্রামের রেহান আলী ছেলে। সোমবার (২৯ জুন) সকালে সানি ইসলামপুরে দাদার বাড়িতে যাওয়ার পথে মেলান্দহ উপজেলার রোকনাই গ্রামের সড়কের শেষ সিমানায় বন্যার পানি উঠলে সেখানে পারাপার হওয়ার সময় প্রবল স্রোতে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তার মরদেহ উদ্ধার করে।
মুন্সিগঞ্জ : মুন্সিগঞ্জে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো মো. সাফায়েত (২) ও মো: ফাহাদ (৭)।
এর মধ্যে গত ১২ জুন শ্রীনগর উপজেলার সিংপাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে মো. সাফায়েতের মৃত্যু হয়েছে। সে ওই এলাকার মো.আব্দুল্লাহর ছেলে। সাফায়েত খেলার সময় সকলের অজান্তে বাড়ির পাশের পুকুরে পরে পানিতে ডুবে মারা যায়।
গত ৩০ জুন সদর উপজেলার মিরকাদিম এলাকায় খেলতে গিয়ে পানিতে ডুবে শিশু ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে। সে পৌরসভার কমলাঘাট এলাকার সালেহ মামুদ অ্যান্থনীর ছেলে। বিকেল সাড়ে ৩টায় খেলা করতে বের হলে পাশের ইছামতি খালে পড়ে ফাহাদের মৃত্যু হয়।
নোয়াখালী : গত জুন মাসে নোয়াখালীতে পানিতে ডুবে পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত ২৬ জুন জেলার সেনবাগের কাদরা ইউনিয়নের কাদরা গ্রামের শহিদ উল্যার মেয়ে খাদিজা আক্তার (৪) ও একই উপজেলার অর্জুনতলা ইউনিয়নের উত্তর মানিকপুর গ্রামের আইয়ুবের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস রুপা (২) পানিতে ডুবে মারা যায়। একই দিন সুবর্ণণচর উপজেলার চরনঙ্গোলিয়ার ভুমিহীন বাজারে মিমি (৪) বছরের শিশু পানিতে ডুৃবে মারা যায়।
এর আগে ৩ জুন একই উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিন রাজাপুর গ্রামে ফরায়েজি বাড়ির মাইন উদ্দিনের মেয়ে নাছিফা আক্তার (৪) ও কাজের মেয়ে ইয়াসমিন (১০) পানিতে ডুবে মারা যায়। সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা পানিতে ডুবে ৫ শিশু মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেন।
নেত্রকোনা : জুন মাসে নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলায় ৮ শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। জেলার পূর্বধলায় ১ জুন পৃথক স্থানে পনিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
পূর্বধলা সদর ইউনিয়নের ছোচাউড়া গ্রামের মো. আমিনুল ইসলামের ছেলে মাজহারুল ইসলাম (৪) ওইদিন দুপুরে ভাত খেয়ে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে আম গাছের নিচে খেলা করছিল। হঠাৎ সে পাশের পুকুরে পড়ে যায়। এ সময় তার সঙ্গীদের চিৎকারে পুকুর মাজহারুলকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিনের গিরিয়াসা গ্রামে দুপুরে কংশ নদীর পানিতে ডুবে সিয়াম (৯) নামক এক মাদরাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
৮ জুন কলমাকান্দায় মাহমুদুল্লাহ নামে দেড় বছর বয়সী এক শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন দুপুর ২টার দিকে উপজেলার পোগলা ইউনিয়নের কুতিগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সে ওই এলাকার বিল্লাল মিয়ার ছেলে।
১৪ জুন কেন্দুয়ায় পানিতে ডুবে সুমাইয়া (৩) এবং শোভা আক্তার (৬) নামে ২ শিশু মারা গেছে। সুমাইয়া বালিকান্দি গ্রামের কামাল মিয়ার মেয়ে। সে উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের পুরাবাড়ী গ্রামে নানা শান্তু মিয়ার বাড়িতে এসে ১৩ জুন সকালে বাড়ির পাশের ডোবাতে পড়ে মারা যায়। অপরদিকে, শোভা আক্তার একই উপজেলার জাফরপুর ইউনিয়নের গগডা গ্রামের সামছু মিয়ার মেয়ে।
এদিকে নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বিশিউড়া গ্রামে ১৪ জুন শুক্রবার দুপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই খালাতো বোনের মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলো, দাপুনিয়া গ্রামের জামরুল মিয়া কন্যা মাইসা আক্তার (৭) ও দক্ষিণ বিশিউড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের কন্যা রাইসা আক্তার (৭)।
সর্বশেষ ২৭ জুন কলমাকান্দায় বাড়ির সামনের ডোবায় জাল দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে নুরুজ্জামান (১৭) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলা সদর ইউনিয়নের খাসপাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
বরগুনা : ব্যবহৃত স্যালাইনের পাইপ দিয়ে খেলতে গিয়ে ডোবায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে বরগুনায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত ১৫ জুন সোমবার বিকেলে বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। মৃত্যুবরণ করা দুই শিশু একে অপরের মামাতো ফুফাতো ভাই।
পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করা এই দুই শিশু হলো, পাথরঘাটা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওমান প্রবাসী শাহিন মিয়ার ছেলে ওবায়েদুল্লাহ (৫) ও তার প্রতিবেশি হারুন বাদশাহর ছেলে রিহান (৫)।
স্বজনরা জানায়, ওবায়েদুল্লাহ ও রিহানকে বাড়ির সামনে খেলতে দেখে ওবায়েদুল্লাহ মা আছরের নামাজ পড়তে যান। নামাজ পড়ে এসে তাদের খুঁজে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে বাড়ির সামনে বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বরু একটি ডোবায় তাদের দুজনকে ডুবে থাকা অবস্থায় দেখে তিনি চিৎকার দেন। এসময় আশেপাশের লোকজন এসে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দু'জনকেই মৃত্য ঘোষণা করেন।
স্থানীয় বশির আহমেদ জানান, রিহান ও ওবায়েদুল্লাহ সম্পর্কে মামাতো ফুফাতো ভাই। তারা বাড়ির সামনে ব্যবহৃত স্যালাইনের পাইপ দিয়ে খেলতে গিয়ে বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া একটি ডোবায় পড়ে মৃত্যুবরণ করে।
সিলেট : জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে সাদিক আহমদ (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় উপজেলার ৫নং ফতেপুর ইউনিয়নের হেমু পূর্ব মাঝপাড়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত সাদিক আহমদ একই গ্রামের জুনেদ আহমদের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, বন্যার পানি বসত ঘরের পিছনের দরজা পর্যন্ত হওয়ায় পরিবারের অজান্তে সাদিক আহমদ সন্ধ্যায় বন্যার পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। বন্যার পানিতে অনেক খোঁজা খুঁজির পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল : জেলার ঘাটাইল আর কালিহাতী উপজেলায় গত জুনে পানিতে ডুবে শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঘাটাইল উপজেলা ও সদর ইউনিয়নের শিমলা পূর্বপাড়ায় বাড়ীর পাশের ডোবায় পরে মারা যায় চার বছরের এক শিশু।
জেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের মানিকপুর আঙ্গার এলাকার বংশাই নদীতে মারা যান বিশ আর পঁচিশ বছরের দুই যুবক। অপরদিকে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের নিউ ধলেশ^রী নদীতে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাতনামা (১৭) এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এটি নদীতে ডুবে মৃত্যু, হত্যা নাকি আত্মহত্যা বিষয়টিও নিশ্চিত নন উপজেলা থানা পুলিশ।
৩ জুন বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ২নং ঘাটাইল ইউনিয়নের শিমলা পূর্বপাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে রাফি (৪) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। শিশু রাফি শাহ আলমের ছেলে।
আরএআর/এমএএস/এমএস