গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে চার সন্তান নিয়ে বসবাস করেন ইমান আলী ও জোসনা দম্পতি। ছয় সদস্যের পরিবার চালাতে ইমান আলীকে হিমশিম খেতে হয়।
Advertisement
সংসারে অভাব থাকায় সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারায় তিন ছেলে জসিম, আসিম উদ্দিন ও নাজিম উদ্দিনকে দিনমজুরের কাজে লাগান ইমান আলী। ১৪ বছরের একমাত্র মেয়ে আসমা আক্তারকে বছর খানেক আগে স্থানীয় ফারসিং নিট কম্পোজিট কারখানার মালিকের উত্তরার বাসায় গৃহকর্মীর কাজে দেন। বছর খানেক কাজ করার জন্য গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে অবশেষে সোমবার (২৯ জুন) বাড়ি ফেরে আসমা।
আসমার পরিবার জানায়, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৭/বি রোডের ৩১ নম্বর বাসায় কাজ করতো আসমা। ওই বাসার মালিক ফারসিং নিট কম্পোজিট কারখানার মালিক আবু তাহের। আসমাকে প্রতি মাসে আট হাজার টাকা বেতন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজে নেন আবু তাহের-শাহজাদী দম্পতি। কিন্তু প্রতি মাসে আসমাকে দেয়া হতো পাঁচ হাজার টাকা। কথা দিয়েছিলেন আসমাকে নিজের মেয়ের মতো করে রাখবেন। উল্টো আসমাকে শারীরিক ও মানসিক আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করেছেন তারা।
আসমার বলে, ‘প্রথম থেকে আমাকে দিনরাত একনাগাড়ে কাজ করতে হতো। ঘুমানোর সময় দিতো না। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়লে নির্যাতন করতো। কখনও দিনে এক ঘণ্টা ঘুমানোর জন্য সময় দিত না। বাড়ির মালিক আবু তাহের মাঝে মধ্যে কিল-ঘুষি মারতেন। কয়েকবার সিগারেটের ছেঁকা দিয়েছেন তিনি। মালিকের স্ত্রী শাহজাদীও শরীরে গরম তেলের ছিটা দিতেন। তারপর দগ্ধ শরীরে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিতেন। এভাবে দীর্ঘ চার মাস ধরে আমার ওপর চলে তাদের নির্যাতন। মাঝে মধ্যে নির্যাতনে অজ্ঞান হয়ে যেতাম। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়ির মালিক আবু তাহের গাড়িচালকের মাধ্যমে আমার হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে সোমবার বাড়ি পৌঁছে দেয়।’
Advertisement
আসমার মা জোসনা বলেন, সংসারে অভাব থাকায় সন্তানদের মুখে দু’মুঠো ভাত দিতে পারতাম না। লেখাপড়া করাতে পারিনি। এ অবস্থায় ফারসিং নিট কম্পোজিট কারখানার মহাব্যবস্থাপক বাবুল, ব্যবস্থাপক ইব্রাহিম, ব্যবস্থাপক আনোয়ার ও নিরাপত্তাকর্মী হেলালের মাধ্যমে কারখানার মালিক আবু তাহেরের বাসায় আসমাকে গৃহকর্মীর কাজে দিয়েছিলাম। আশা ছিল অন্তত খেয়ে-পরে বেঁচে থাকবে মেয়ে। কিন্তু এখন আমার মেয়েকে নির্যাতন করে শেষ করে দিয়েছে তারা। গত এক বছর আসমাকে একবারের জন্যও দেখতে দেয়নি আবু তাহের। এমনকি মুঠোফোনেও বাড়িতে যোগাযোগ করতে দেয়নি ওই শিল্পপতি পরিবার।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে বাড়ি আসার পর আবু তাহেরের স্ত্রী শাহজাদী ফোন করে বলেন, এসব বেশি বাড়াবাড়ি করিও না। ভালো হবে না। ঢাকা থেকে মাস্তান পাঠিয়ে আসমাকে হত্যা করা হবে। তার হুমকিতে আমরা এখন আতঙ্কে আছি। তাই মেয়েকে এক স্বজনের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছি। মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চাই।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান খান বলেন, কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে তার পরিবারের লোকজন থানায় অভিযোগ করতে এসেছিল। তবে ঘটনাস্থল রাজধানীর উত্তরা হওয়ায় ওই পরিবারকে উত্তরার থানায় অভিযোগের পরামর্শ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে শিল্পপতি আবু তাহের ও শাহজাদী আমিরির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। স্বামী-স্ত্রী দুজনের কেউই ফোন রিসিভ করেননি। কারখানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে মতামত জানতে ফারসিং নিট কম্পোজিট কারখানার প্রধান ফটকে গেলেও কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
Advertisement
এএম/এমএস