বিশ্বব্যাপী করোনা সংকটের মধ্যেই চীন-ভারত উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মহামারিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্য যখন বেড়ে চলেছে, অসহায় মানবতা যখন কাঁদছে; তখন দুর্গম উচ্চতায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা বা দখল নিয়ে হতাহতের যে ঘটনা ঘটেছে, তা আকস্মিক ও অনভিপ্রেত। প্রসঙ্গত, যুদ্ধে যখন নিজ দেশের হতাহতের কিংবা ভূখণ্ড দখলের ঘটনা ঘটে, তখন জাতির মনোবল ঠিক রাখার জন্য অনেক সময়েই হতাহতের সংখ্যা বা জমি দখল বিষয়ে বাড়িয়ে বা কমিয়ে কিছু বলা হয়। চীন দুটোই গোপন রেখেছে। চীনের কোনো সৈন্য যদি আহত বা নিহত হয়ে থাকে, সেই খবর পর্যন্ত বিশ্ববাসী কেন, দেশের মানুষকেও জানায়নি। কতটা অমানবিক হলে এমনটা হয়! ভারত মৃতদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেছে, জনগণসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে মৃতদের মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু নিজ ভূমি দখল হয়েছে কি না, তা সুস্পষ্ট নয়।
Advertisement
চীন থেকে করোনা রোগ বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপে ছড়ানোর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে বিশ্ববাসী যখন সব রাষ্ট্র ও জাতির কাছে রোগ থেকে অস্ত্র পরীক্ষা তথা সর্ববিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দাবি করছে, তখন রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনীতির নামে যদি কোনো দেশের সরকার তা না করে, তবে সেটা বেশ দুর্ভাগ্যজনক। কেননা যদি কোনো কারণে আণবিক ও মারণাস্ত্র সজ্জিত শক্তিধর এশিয়ার দুই বড় দেশ ভারত ও চীনের উত্তেজনা যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়, তবে পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ইচ্ছা না থাকলেও করোনাবিপর্যয়ের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। বড় ধরনের যুদ্ধ বাঁধলেও তো উপায়ই নেই। তাই অবিলম্বে এই উত্তেজনা প্রশমিত করা এবং শান্তিপূর্ণ সময়ের মতো পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়া কিংবা আলোচনার মাধ্যমে ফয়সলা করা হবে জাতি হিসেবে আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।
১৫ জুন রাতে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটার পর উত্তেজনা প্রশমনের তেমন কোনো সুলক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ঘটনার ৭ দিন পর ২২ জুন সীমান্তে লেফটেন্যান্ট পর্যায়ে আলোচনায় দুই দেশই সীমান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে সৈন্য ও স্থাপনা সরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু এখন স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী খবরে প্রকাশিত হচ্ছে, লাদাখ সীমান্তে লাইন অব কন্ট্রোলের পাশে তাঁবুর ছবি, যাতে বিতর্কিত এলাকায় চীনের অবস্থান সুস্পষ্ট। চীনের প্রেসিডেন্ট সেনাবহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কেবল চীনের সাথেই নয়, নেপালের সাথেও ভারতের সীমান্ত নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। নেপাল পার্লামেন্ট নতুন সীমানা দিয়ে নতুন মানচিত্র পাস করেছে। ইতোমধ্যে ভারত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি অভিযোগ করেছেন, সরকারের পতন ঘটাতে ভারত গোপন বৈঠক করছে।
এদিকে পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত এখন নিশ্চুপ থাকলেও করোনার মধ্যেই এপ্রিল-জুন মাসে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী উগ্রজঙ্গি তৎপরতা দমন করে চলেছে। গত শুক্রবারেও তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে। ওইদিনের খবরেই জানা গেছে, পাকিস্তান সীমান্তে সেনা সমাবেশ বৃদ্ধি এবং ভারত দ্রুত বাঙ্কার তৈরি করেছে। যেকোনো সময় পাক-ভারত সীমান্তেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। ধরেই নেয়া যায়, চীন-ভারত কিংবা পাকিস্তান-চীন উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়ে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়, তবে ভারতের উত্তর সীমানা-সংশ্লিষ্ট তিন দেশ চীন-পাকিস্তান-নেপাল একত্রে ভারতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে।
Advertisement
এদিকে ভারতও চীনের যোগ্য জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সীমান্তে সৈন্য ও অস্ত্র সরঞ্জাম বৃদ্ধি করেছে। ভারত রাশিয়া থেকে কিনছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম বিশেষ মিসাইল সিস্টেম। চীন যখন সীমান্তে প্রশিক্ষিত মার্শাল আর্ট সেনাবাহিনী নিয়োগ করছে, ভারত তখন ঘটক কমান্ডো বাহিনী সীমান্তে নিচ্ছে। সামরিক শক্তিতে ভারত যেহেতু চীন থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে, সেহেতু গ্যাপ কমানোর জন্য প্রচণ্ড উদ্যোগ লক্ষণীয় হচ্ছে। কাশ্মীরের সব হাসপাতালে ভারতীয় সেনাদের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ বেড খালি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে ভারতের অর্থনীতির খারাপ অবস্থা যখন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, তখন চীনা পণ্যবিরোধী আন্দোলন এবং আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার আওয়াজ জোরদার হচ্ছে। ভারত করোনা ইস্যুতে চীনের বেশ কিছুটা একঘরে অবস্থাকে ব্যবহার করে শক্তি সঞ্চয় করতে তৎপর।
ইতোমধ্যে প্রচার চলছে, আমেরিকার সুস্পষ্ট বার্তা নাকি ভারত পেয়েছে। পর্যবেক্ষণে এই বিষয়ে কিছু লক্ষণও সুস্পষ্ট। অমেরিকা দেশের ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট সংশোধন করে ভারত-জাপান-অস্ট্রেলিয়াকে ফাইটার জেট প্রশিক্ষণ এবং চীনবিরোধী চর্তুর্দেশীয় অক্ষশক্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে। ইউরোপ থেকে আমেরিকা সেনা সরিয়ে ভারতীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ চীন সাগরে মোতায়েন করা হবে। হংকং, তাইওয়ান ও উইঘুর মুসলিম প্রভৃতি নিয়ে চীন রয়েছে বিপাকে। হংকংয়ের নাগরিকদের স্বাধীনতা খর্ব করায় আমেরিকা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের ভিসা দেবে না বলে ঘোষণা করেছে। করোনাভাইরাসকে আমেরিকার ‘চীনা ভাইরাস’ বা ‘উহান ভাইরাস’ বলা আর চীনের ‘আমেরিকার সৈন্যরা ভাইরাস আমদানি করেছে’ বলা নিয়ে তর্কবিতর্কে উত্তেজনা বিষয়ে সকলেই অবগত। করোনার আগেই বাণিজ্যযুদ্ধ তো চলছিলই। বলাই বাহুল্য, নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের আমেরিকা বিশ্ব বিশেষভাবে এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার ইস্যুতে চীনের প্রতি কূটনৈতিক-রাজনৈতিক-সামরিক আক্রমণাত্মক ভূমিকা জোরদার করবে। তাতে ভারত-চীন উত্তেজনা বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে।
সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার পতন তথা ঠান্ডাযুদ্ধ যুগের পর আমেরিকাভিত্তিক এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার পরিকল্পনা বাধ্য হয়ে ত্যাগ করে আমেরিকা যখন ‘আমেরিকা ফাস্ট’ নীতি নিয়ে আমেরিকামুখী হচ্ছে, তখন বিশ্বে বহু শক্তিকেন্দ্র দাঁড়াচ্ছে। বিশেষভাবে অর্থনৈতিক বিশ্বপরিমণ্ডলে চীন আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করছে। শক্তিধর দেশগুলো আঞ্চলিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠছে। যত মরিয়া হচ্ছে, ততই ওই অঞ্চলের ছোট ও কম শক্তিসম্পন্ন দেশগুলোর বিরাগভাজন হচ্ছে। এটা এশিয়ার দুই শক্তিধর দেশ চীন ও ভারতের জন্যও প্রযোগ্য। চীন সাগরে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে চীন ওই এলাকার দেশগুলোর সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে। ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়াসহ ওই অঞ্চলের ১০টি দেশের আশিয়ান জোট চীন-ভারত উত্তেজনার পর নামোল্লেখ না করে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘১৯৮২ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সমুদ্র চুক্তিকেই দক্ষিণ চীন সাগরের ন্যায্য অধিকার, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তি করা উচিত।’ অস্ট্রেলিয়ার সাথে করোনা সময়কালে চীনের সংঘাত বেড়েছে। উত্তর কোরিয়া ছাড়া ওই অঞ্চলে কারও সাথেই চীনের সম্পর্ক ভালো নেই। ইরান নিয়ে চীন ও রাশিয়া কাছাকাছি এলেও ভারতের সাথে রাশিয়ার রয়েছে ঐতিহ্যগত সম্পর্ক।
এদিকে পাকিস্তান ও নেপাল বাদ দিলে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্কের নানা হেরফের রয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সাথে রয়েছে টানাপোড়েন। ভূটানের সাথে ঐতিহ্যগত সম্পর্ক অটুট থাকলেও সম্প্রতি পানিছাড় নিয়ে সমস্যা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সম্পর্কে নানা চড়াই-উৎরাই পার হওয়ার পর বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক উষ্ণ। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মুজিব-ইন্দিরা সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়িত হওয়ায় সীমান্ত সমস্যার সমাধান বিশ্বে উদাহরণযোগ্য। উত্তরপূর্ব ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’ সংশ্লিষ্ট জঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশের ওপর ভারতের অভিযোগ বিদূরিত হয়েছে। তবে পানিবণ্টন বিশেষত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে একমত হওয়ার পরও ঝুলে থাকা এবং সীমান্তে গোলাগুলি প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন মানুষেরও এক ধরনের ক্ষোভ বা অভিমান রয়েছে। সর্বোপরি ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী দল-গোষ্ঠী-গ্রুপ এবং প্রচার তো রয়েছেই। ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বাড়াবাড়ি যত হবে, ততই ভারতবিরোধিতা বাড়বে বৈ কমবে না।
Advertisement
বিশ্ব, এশিয়া ও উপমহাদেশ এই বাস্তবতায় চীন-ভারত উত্তেজনা যদি ছোট কিংবা বড় যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়, তবে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বাংলদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন এবং নানা ধরনের চিন্তাও প্রকাশ পাচ্ছে। ভারত ও চীন আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশ। এই দুই দেশের সাথে সম্পর্কের প্রশ্ন আসলেই সোভিয়েত-আমেরিকা ঠান্ডাযুদ্ধ যুগে বাংলাদেশের জন্মলগ্নের কথা স্মরণে আসে। ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া আমরা নয় মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারতাম না। অপরদিকে পাকিস্তান গণহত্যার পক্ষে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়েই দূতালির মাধ্যমে এবং পিংপং রাজনীতির সুবাদে আমেরিকা-চীন সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই সময় থেকেই আমেরিকান ধনতন্ত্র ও ‘চীনা সমাজতন্ত্র’-এর রাজজোটক সৃষ্টি হয় এবং অর্থনীতি ও বাণিজ্যে চীনের রমরমা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে থাকে। কাল পরিক্রমায় চীন এখন আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে।
সেই ঠান্ডাযুদ্ধ যুগ আর নেই। বিশ্ব ও উপমহাদেশীয় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি-কূটনীতিতে বন্ধু কিংবা শত্রু চিরস্থায়ী নয়। ভারত-আমেরিকা বন্ধুত্ব এখন বাস্তব। এদিকে জন্মলগ্নের পর বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই বাংলাদেশ ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতিতে বিশ্বাসী। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই পাকিস্তান ও আমেরিকার সাথে আমরা সম্পর্ক স্থাপন করেছি। চীনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনেও আমাদের প্রচেষ্টা ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ইউরোপের সুইজারল্যান্ড হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ এই নীতিতে অটল। মিয়ানমার অন্যায়ভাবে লাখ লাখ শরণার্থী পাঠালেও আমরা যুদ্ধোন্মাদনা সৃষ্টি করতে যাইনি। অর্থনৈতিক কূটনীতিকে অগ্রধিকার দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পরস্পরের স্বার্থ ও মর্যাদা সমুন্নত রেখে সব দেশের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে বাংলাদেশ বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে তৎপর। সময়ের গতিপথে এই নীতি সমুন্নত রেখেই আওয়ামী লীগ সরকার দুই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্ক অগ্রসর করছে।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন ঘোষিত ইশতেহারে বলা হয়েছিল যে, ভারতের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক বজায় রেখে বহুমুখী সহযোগিতা জোরদার করা হবে।’ আর চীন সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ‘বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা হবে।’ দশ বছর পর ২০১৮ সালে ভারত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’ ভারত-ভূটান-নেপাল ‘উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার’ কথাও সেখানে রয়েছে। আর চীন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে।’ দুই সময়ের পার্থক্য যেমন এখানে সুস্পষ্ট, তেমনি দুই দেশের ক্ষেত্রে অবস্থানের পার্থক্যও সুস্পষ্ট। ভারত ও চীনের সাথে এই পার্থক্যের কারণ ঐতিহ্যগত হলেও মূলত ও প্রধানত ভৌগোলিক। বাংলাদেশের সীমানার তিন দিকেই ভারত। রয়েছে পানিবণ্টনের সমস্যা। এদিকে এনআরসি রয়েছে অনেকটাই ঝুলে, পুশইন তো সাম্প্রতিক সময়েও হয়েছে। তাই দেশের স্বার্থেই ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্ক একরকম হতে পারে না।
এমনকি বিএনপি-জামায়াতও কূটনীতি পুবমুখী করার অভিজ্ঞতা থেকে এখন ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিতে চাইছে। মিয়ানমার ইস্যুতেও ভারতের সাথে চীনের অবস্থানের পার্থক্য রয়েছে। সার্বিক বিচারে ভারতের সাথে পারস্পরিক মর্যাদা ও স্বার্থ সমুন্নত করে সম্পর্ক রাখা বেশি প্রয়োজন ও গভীর। অপরদিকে চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক মূলত ও প্রধানত অর্থনৈতিক। সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। করোনাদুর্যোগে চিকিৎসার ক্ষেত্রে চীন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং কতকপণ্যে শুল্কছাড় দিয়েছে। সার্বিক বিচারে জাতি হিসেবে আমাদের কর্তব্য হবে, এই উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে ভারত বা চীন কারও স্পর্শকাতর স্থানেই আঘাত না করে দুই দেশের সাথে ভারসাম্যমূলক শান্তি ও সৌহাদ্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখা। সবশেষে বলতে হয়, বিশ্বশান্তি সুরক্ষায় ‘আন্তর্জাতিক যে কোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে’ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পথে যদি আওয়ামী লীগ সরকার সম্ভবমতো অবদান রাখতে পারে, তবে বাংলাদেশ তার ঘোষিত নীতিকে আরও ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বিশ্বে আরও মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা পেতে পারবে।
লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট
এইচআর/বিএ/জেআইএম