করোনা মহামারির কারণে বাবা সবাইকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, বাড়ি ফিরে বাজার-সদাই থেকে শুরু করে যা যা কাজ আছে, সব করে দেব। কই, বাবা তো আর ফিরে এলেন না।
Advertisement
এসব কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঢাকার বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির ঘটনায় নিহত সত্তরঞ্জন বণিকের (৬৫) ছোট মেয়ে জয়া বণিক। নিহত সত্তরঞ্জন বণিকের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার রামগোপালপুর গ্রামে। সত্তরঞ্জন বণিক রাজধানীর পুরান ঢাকার নলগোলায় পাইকারি প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবসা করতেন।
তার বড় মেয়ে দোলা বণিক স্বামীসহ রাজধানীর ওয়ারিতে থাকেন। বাবার মৃত্যুর খবরে ছুটে এসেছেন মুন্সিগঞ্জে। বাবার বাড়ির আঙিনায় বিলাপ করতে করতে দোলা বলেন, করোনার মধ্যে বাবা প্রতিদিন ঢাকায় আসা-যাওয়া করতেন। বাবাকে আমার বাসায় থেকে ব্যবসা করতে বলেছিলাম। বাবা থাকতে রাজি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার আমার বাড়িতে ছিলেন বাবা। ছোট ভাইটা অসুস্থ থাকায় বাবা মুন্সিগঞ্জের বাড়ি চলে যান।
কাঁদতে কাঁদতে দোলা বণিক বলেন, সাধারণ ছুটির পর থেকে প্রতিদিন পৌনে ৮টার লঞ্চে ঢাকা যেতেন বাবা। বাবার সঙ্গে প্রতিদিন কথা হতো আমার। রাগ করে রোববার কথা বলিনি। ভেবেছিলাম সোমবার দুপুরে ফোন দেব। বাবাকে ফোন দিলাম। কিন্তু আর কথা হলো না।
Advertisement
স্বামীর কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী রত্না বণিক। তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে বাড়ি থেকে বের হতে না করেছিল। তিনিই যে আর বাড়ি ফিরবেন না, কে জানতো। ঝড়-তুফান আসতো, তখন লঞ্চটা ডুবে যেতো। তখন যদি মারা যেতো তাহলে মনকে বুঝাইতে পারতাম। এমন কইরা চইলা গেল, মানতে পারি না।’
সোমবার (২৯ জুন) রাজধানীর শ্যামবাজার এলাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীতে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় অনেকের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত ৩৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম লঞ্চঘাট থেকে মর্নিং বার্ড লঞ্চ ঢাকায় যাচ্ছিল। সোমবার সকাল ৯টার দিকে ময়ূর-২ নামে যাত্রীবাহী লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কায় মর্নিং বার্ড লঞ্চ ডুবে যায়।
এএম/এমকেএইচ
Advertisement