করোনাভাইরাস মানুষের মন-মানসিকতায় কতটা পরিবর্তন নিয়ে আসে, তার অন্যতম বড় উদাহরণ জাপানের রাজধানী টোকিও। যে শহরের বাসিন্দারা ২০১৩ সালে অলিম্পিক আয়োজকের মর্যাদা অর্জন করার পর খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছিল, চার বছর আগে রিও ডি জেনিরোর মেয়রের হাত থেকে অলিম্পিকের পতাকা গ্রহণ করার পর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল, কখন তারা আয়োজন করবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অলিম্পিক গেমসের।
Advertisement
সেই টোকিওর বাসিন্দারাই এখন আর চায় না তাদের শহরে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হোক। করোনা এতটাই মন-মানসিকতায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এখন শুধু অনেকের খেয়ে-পরে বেঁচে থাবার স্বপ্নটাই অনেক বড়। দুনিয়াজোড়া বিলাসিতা প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা তাদের নেই। যে কারণে এক জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেক টোকিওবাসীই চায় না, তাদের শহরে আর অলিম্পিক হেমন আয়োজন হোক।
এ বছর অলিম্পিক ছিল সারা বিশ্বের কাছে জাপানের অন্যতম আকর্ষণ। ২৪ জুলাই শুরু হওয়ার কথা ছিল, দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আয়োজকরা এক বছর পিছিয়ে দিয়েছেন এবারের আসর। এরপরও কি ২০২১ সালে টোকিওয় অলিম্পিক আয়োজন করা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে ঘোর সংশয়।
গত সপ্তাহান্তে টোকিওর দুটি মিডিয়া- কিয়োদো নিউজ এবং টোকিও এমএক্স টেলিভিশন একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল জাপানের রাজধানীবাসীর মধ্যে। তাদের সে সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫১.৭ শতাংশ টোকিওবাসী চান না আগামী বছরেও (২০২১ সালে) অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হোক। আর অলিম্পিক আয়োজনের পক্ষে সায় দিয়েছেন ৪৬.৩ শতাংশ মানুষ।
Advertisement
এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১০৩০ জন। গ্রেটার টোকিওর জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৭৪ লক্ষ। এ কারণে মাত্র ১০৩০ জনের সমীক্ষা হয়তো পুরো চিত্র তুলে ধরে না। তবু হাজার জনের মধ্যে যে ৫১.৭ শতাংশ মানুষ আগামী বছর অলিম্পিক চান না, তা আয়োজকদের জন্য খুব স্বস্তির খবর নয়।
এই ৫১.৭ শতাংশের মধ্যে ২৭.৭ শতাংশ মানুষ আবার একেবারেই চান না টোকিও’য় আর অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হোক। বাকি ২৪ শতাংশ চান, অলিম্পিক আরও পিছিয়ে দেওয়া হোক। টোকিও শহরবাসীর মধ্যে এখনও করোনা আতঙ্ক কাজ করছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার অ্যাথলেট, কোচ, দর্শক, কর্মকর্তাদের আনাগোনায় না আবার করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে, তা নিয়ে তারা প্রচন্ড ভয়ের মধ্যে আছেন।
অলিম্পিক পেছানো হলেও বাতিলের ভাবনা আপাতত নেই আয়োজকদের। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছিলেন, ‘অলিম্পিক এমনভাবে আয়োজন করতে হবে, যাতে বোঝানো যায়, সারা বিশ্ব এই মহামারি কাটিয়ে উঠেছে।’
জুনের শুরুতে আয়োজক কমিটির সভাপতি ইয়োশিরো মোরি এড়িয়ে গিয়েছিলেন অলিম্পিক পুরোপুরি বাতিলের সম্ভাবনার কথা। বলেছিলেন, ‘সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। এখনই গেমস বাতিল নিয়ে কিছু বলা ঠিক নয়।’
Advertisement
তবে দু’মাস আগে যখন অলিম্পিক পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তখন মোরি নিজেই অন্য কথা বলেছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে মোরি বলেছিলেন, ‘এক বছর পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে গেমস বাতিল করা হবে।’
আইএইচএস/