বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালীন সময়ও থেমে নেই অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের নানা ধরনের প্রতারণা। করোনা রোধে নতুন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি চক্র। চক্রটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ভুয়া ‘ভাইরাস শাট আউট কার্ড’ (Virus_Shut_Out_Card) গলায় ঝুলালে এক মাস করোনা হবে না। এমনই অভিনব এক প্রতারণার খবর দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।
Advertisement
রাজধানী ঢাকায় চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রির সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে জেলা প্রশাসন ও ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর যৌথভাবে সোমবার (২৯ জুন) দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে।
পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিএমএ ভবন থেকে ‘ভাইরাস শাট আউট কার্ড’ জব্দসহ তিন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীকে এক লাখ ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহনাজ হোসেন ফারিবা জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি কার্ড ঘাড়ে রাখলে এক মাস করোনামুক্ত বা প্রতিরোধ করবে, এমন করোনা রোধক কার্ডের বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্ষতিকর চিকিৎসা সামগ্রী বিক্রির প্রমাণ মেলে। এটা এক ধরনের প্রতারণা।’
Advertisement
তিনি জানান, এ জন্য বায়োমেডিকস (Biomedics) নামে প্রতিষ্ঠানকে ভাইরাস শাট আউট কার্ড ও নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, বায়োনিডস (Bioneeds) প্রতিষ্ঠানকে ভাইরাস শাট আউট কার্ড রাখায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আজমেরী কমপ্লেক্সকে নকল ও অননুমোদিত KN95 মাস্ক মজুত ও বিক্রি করায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ সময় ভুয়া ভাইরাস শাট আউট কার্ড ছাড়াও নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার, নকল ও অননুমোদিত KN95 মাস্ক জব্দ এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়। একই সময় অরিজিনাল হেক্সিসলের খালি বোতল বিক্রয় করতে দেখা যায়। সেগুলোও ড্রাগ অ্যাক্ট ১৯৪০ এর আওতায় জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। অভিযানকালে এসব কারণে ৭টি মামলা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘প্রতিটি ভাইরাস শাট আউট কার্ড ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছিলেন তারা। অথচ এই কার্ড করোনা প্রতিরোধে সক্ষম নয় বরং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এতে এক ধরনের কেমিক্যাল উপাদান ক্লোরাইন ডাইঅক্সাইড আছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কয়েকজন ব্যক্তি বিএমএ ভবনে এসে তাদের কার্ড সরবরাহ করতেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা দোকান থেকে বিক্রির পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করছিলেন। আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি, কার্ড সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Advertisement
ম্যাজিস্ট্রেট ফারিবা আরও বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি, বিএমএ ভবনে এ ধরনের ভুয়া কার্ড বিক্রি হচ্ছে দেখে। বিএমএ ভবন মালিক সমিতির নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন, এ ঘটনায় তারা ব্যবস্থা নেবেন এবং এই কার্ড পরবর্তীতে আর বিক্রি করতে দেয়া হবে না।’
অন্যদিকে মঙ্গলবার (৩০ জুন) রাজধানীর উত্তরায় পৃথক অভিযানে ভাইরাস শাট আউট কার্ড জব্দ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত ২০ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাহনাজ হোসেন ফারিবা অভিযান চালিয়ে প্রথম ৫০ পিস ভাইরাস শাট আউট কার্ড জব্দ করেন।
জেইউ/এফআর/এমকেএইচ