ফিচার

বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন অসহায় মানুষ

মোস্তাফিজ বুলবুল

Advertisement

করোনায় মৃত্যুর ঝুঁকি উপেক্ষা করে মানবতার কল্যাণে কাজ করছে ব্র্যাকের আইন সহায়তা কর্মসূচির মানবাধিকার কর্মীরা। দিন নেই, রাত নেই; যখন যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে, সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন তারা। আইনি সহায়তা দিয়ে অসহায় মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মুছে দিচ্ছেন মানবতার সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা। বিনামূল্যে অসহায় মানুষদের আইনি সেবা দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ব্র্যাক। দিনদিনই বাড়ছে এ কর্মসূচির সফলতা ভোগী মানুষের সংখ্যা। ফলে আইনি সহায়তা নিতে প্রতিদিন ভিড় জমে উঠছে ব্র্যাক কার্যালয়গুলোতে। গ্রামের অসহায় দরিদ্র নারীরা আইনি সহায়তা পেয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। অসহায় নারীরা পুনর্বাসিত হয়ে ফিরে পাচ্ছেন তাদের সুখের দাম্পত্য জীবন ও সংসার।

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার রেহেনা ব্র্যাকের আইনি সহায়তা পেয়ে ফিরে পেয়েছেন হারানো দাম্পত্য জীবন। টঙ্গীবাড়িতে নিয়োজিত এইচআরএলএস অফিসার মনোয়ারা বেগমের মাধ্যমে আইনি সহায়তা পেয়ে তিনি তার অধিকার ফিরে পেয়েছেন বলে জানান রেহানা। এমনিভাবে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার বিউটি বেগম পুনর্বাসিত হয়েছেন। হাসি ফুটেছে তার মুখে। নারায়ণগঞ্জের সদর অফিসের সিনিয়র এইচআরএলএস কর্মকর্তা খালেদা আক্তারের কাছে অভিযোগ দিয়ে তিনি স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে পেরে খুশি হয়েছেন বলে জানান বিউটি। তিনি আরও বলেন, ‘ব্র্যাকের আইনি সহায়তা পেয়ে ফিরে পেয়েছি স্বামীর সংসার। আমার দুঃখের জীবন থেকে সুখের জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে।’ এমনিভাবে সারাদেশে শতশত মানুষের ভাগ্য বদলে কাজ করছে বলে জানান খালেদা আক্তার।

কর্মসূচির নারায়ণগঞ্জের জেলা ব্যবস্থাপক মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের সুখে হাসি ফোটাতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার অসহায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে সব ধরনের আইনি সেবা দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের গ্রামের অসহায় মানুষ ব্র্যাকে আইনি সেবা নিতে এসে প্রতিদিন ভিড় করছে। আমরা এসব অসহায় মানুষের সেবা দিয়ে তাদের চোখের পানি মুছে দিয়ে মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করে যাচ্ছি।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘শুধু তা-ই নয়, দেশের প্রতিটি মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানব সেবায় কাজ করছি। করোনাকালে সচেতনতামূলক লিফলেট, স্টিকার ও মাস্ক বিতরণ, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট অধিকার সেবক-সেবিকা, আইনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা, লোকাল কমিউনিটি লিডারদের মধ্যে করোনা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, পারিবারিক সহিংসতা রোধ, লিগ্যাল এইড, বাল্যবিয়ে, যৌতুক, যৌন হয়রানি, অ্যাসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, হত্যা, হত্যার চেষ্টা, পারিবারিক সহিংসতা বন্ধ, মানবপাচারসহ নানা ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা রোধে কাজ করছে। এতে গ্রামের অসহায় মানুষ খুবই খুশি।’

মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘করোনাকালে নারায়ণগঞ্জে ৬৬ জনকে ১৫শ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে ব্র্যাকের ক্লায়েন্ট, অসহায় মানুষ, প্রতিবন্ধিদের এ টাকা দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় ব্র্যাকের ৯ জন আইনজীবী রয়েছেন। দুটি জেলায় অসহায় মানুষের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৮৩টি নানা ধরনের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫০টি মীমাংসা করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়া হয়েছে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪শ টাকা। এ ছাড়াও ব্র্যাকের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ৬ শিশুকে উদ্ধার করে অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার ও আইনি সুরক্ষায় নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের ১১ উপজেলায় টরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ১২,৮৯০ জনকে আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আইন সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ৫শ ২৭ জনকে। মুন্সীগঞ্জে আইন সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৩৫৮ জনকে।’

চট্টগ্রাম জোনাল ম্যানেজার মো. আকরামুল ইসলাম এ বিভাগের ৭টি জেলায় মোট ৬১টি ক্লিনিকের আইন সহায়তা কর্মসূচির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে আমাদের কাজের গতি থেমে নেই। এ সময়ে ২৮৯টি ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। তারমধ্যে ১৪৫টি মীমাংসা করা সম্ভব হয়েছে। এতে লোকজনকে ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭শ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। শুধু চট্টগ্রাম বিভাগের ৭ জেলায় এ পর্যন্ত যেসব মানুষের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ধর্ষণ ৪২৮টি, ধর্ষণের চেষ্টা ৮৫টি, গণধর্ষণ ৪৩টি, ধর্ষণের পর হত্যা ৯১ জন, হত্যা ২৬৪ জন, হত্যাচেষ্টা ১১ জন, অপহরণ ২৫ জন, পাচার ১ জন, ১৯ জনকে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ বিভাগে আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৯০ জনকে। অভিযোগ এসেছে ৪০২৪২টি। ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫৬ কোটি ৩৩ লাখ ৯১ হাজার ৯৭২ টাকা আদায় করে দেওয়া হয়েছে।’

লেখক: সাংবাদিক, গুলশান, ঢাকা।

Advertisement

এসইউ/এএ/জেআইএম