আজ ৩ নভেম্বর। ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস। বাঙালির শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে রাতের অন্ধকারে জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে খুনি মোশতাক চক্র। ৩ নভেম্বর শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও কলঙ্কময় একটি দিন। ইতিহাসে দিনটির স্থান হয়েছে জেলহত্যা দিবস হিসেবে। এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের স্থপতিদের মধ্যে প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, প্রথম বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী (অর্থ) এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে (খাদ্য ও ত্রাণ) জেলখানার ভেতরে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা পরিচালনা করে। একই রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীকালে তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। রহিমুদ্দিন খান সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়, তবে তা কার্যকর করা হয়নি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে একসঙ্গে কাজ করে গেছেন।সফল নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশবাসীকে এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা। বহু বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে মুজিবনগর সরকার গঠন, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাসহ ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনে যে ভূমিকা রেখে গেছেন, তা অবিস্মরণীয়।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার তিন মাসের মধ্যে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ৩ নভেম্বরের পর বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণের নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়। এর পর টানা দেড় দশক সামরিক চক্রের হাতে বন্দি থাকে বাংলাদেশ, দেশের রাজনীতি ও মানুষ।দিবসটি উপলক্ষে শোককে শক্তিতে পরিণত করে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, ‘ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থানের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা। তাই আমাদের জাতীয় ইতিহাসে জেলহত্যা দিবস এক কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকবে।’জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছেন, ‘কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা। এর মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।’৩ নভেম্বর উপলক্ষে প্রতিবছর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। গণমাধ্যমগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ৩ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের সংগঠনের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ ও জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিল। একই সঙ্গে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামরুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।বিকেল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য রাখবেন।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশবাসীকে নিয়ে জেলহত্যা দিবস পালনের জন্য আওয়ামী লীগের সকল শাখা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
Advertisement