আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে গবাদিপশুর হাট বসলে এবং ঈদুল ফিতরের মতো এবার ঈদের আগে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগ থেকে লোকজনের অবাধ যাতায়াত নতুন করে সারাদেশে করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা চীনা বিশেষজ্ঞ দলও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। কোরবানি উপলক্ষে পশুর হাট বসলে এবং এই ঈদকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেলে আরও এক দফা দাবানলের মতো করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন তারা। তাই জীবন ও জীবিকা ঠিক রেখে এ দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর করণীয় সম্পর্কে নানা চিন্তাভাবনা চলছে।
জানা গেছে, ঈদের সময় দেশের কোনো কোনো রেড জোনভুক্ত বিভাগ বা জেলা পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক লকডাউন হতে পারে।
এদিকে গত একমাসেরও বেশি সময়ের করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, এখন করোনার পিক আওয়ার (চূড়ান্ত সংক্রমণ) চলছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, আমরা ধীরে ধীরে পিকের দিকে যাচ্ছি। তবে তারা সকলেই কোরবানির পশুর হাট বসা ও ঈদের সময় মানুষের গ্রামে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এটা ঠেকানো না গেলে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
Advertisement
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ঈদের সময় গবাদিপশুর হাট বসলে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে।
এ সমস্যার সমাধান কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার কৃষকদের পণ্যের সঠিক দাম পেতে সাহায্য করতে সরাসরি ধানচাল কিনে থাকে। ঠিক তেমনিভাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারিভাবে গবাদিপশু কিনে নিয়ে তা অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। এক্ষেত্রে গবাদিপশু কিনে বিক্রি করলে সরকারের কিছু আর্থিক ক্ষতি হলেও করোনা ঝুঁকি থাকবে না।
ঈদে মানুষের যাতায়াত সম্পূর্ণরুপে বন্ধের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, এ ব্যাপারে আগে থেকেই সরকারিভাবে ঘোষণা দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, রমজানের ঈদের মতো এবারও ঈদের সময় লাখ লাখ মানুষ বাসে ও লঞ্চে গাদাগাদি করে শহর ছেড়ে গ্রামে গেলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কিছুতেই সম্ভব হয় না। এ কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক।তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশুর হাট বসানোর কথা শোনা যাচ্ছে। তবে গবাদিপশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি কিছুতেই রক্ষা করা যাবে না। ফলে সংক্রমণ বাড়বে।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা চীনা বিশেষজ্ঞ দলও বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাকালে গত দু-তিন মাসের আক্রান্ত, মৃত্যু এবং সুস্থতা ইত্যাদির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঈদের সময় লাখ লাখ মানুষের যাতায়াত চরম ঝুঁকি তৈরি করবে বলে অভিমত দিয়ে গেছেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঈদে মানুষের যাতায়াত ও গবাদিপশুর হাট-এ দুটি চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে নানা পরিকল্পনা চলছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। গতকাল পর্যন্ত ৭ লাখ ৩০ হাজার ১৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করে দেশে মোট এক লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জন রোগী শনাক্ত করা গেছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৭৩৮ জনের। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫৫ হাজার ৭২৭ জন।
এমইউ/এসআর/পিআর