জাতীয়

করোনার মৃতদেহ দাফনের সৈনিক পাথওয়ের শাহিনও আক্রান্ত

বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটকালে ভিন্ন এক পৃথিবীর দেখা মিলেছে। অর্থনীতির ক্রান্তিকাল যাচ্ছে এখন। এতে অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। আয়-রোজগার বন্ধ হওয়ার কারণে অনেক পরিবারে দু’বেলা খাবার জুটছে না। এমন পরিস্থিতিতে অসহায়দের দু’বেলা খাবার তুলে দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পাথওয়ে। আবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন কেউ মারা যাচ্ছে, স্বজনদের কেউ যখন মরদেহ স্পর্শ করার সাহস পাচ্ছেন না, তখন খবর পেয়ে দাফন করতে নিয়ে যাচ্ছে পাথওয়ের দাফন টিম। এসব করতে গিয়ে পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহিন সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত।

Advertisement

পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহীন নিজেই জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রোববার (২৮ জুন) রাতে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘করোনাকালে ব্যস্ত সময় পার করছিলাম। রাত নেই দিন নেই যখন যেখানে প্রয়োজন পড়েছে, ডাক এসেছে ছুটে গেছি। কখনো করোনা আক্রান্ত মরদেহ দাফন করেছি, কখনো বা করোনা আক্রান্ত গণমাধ্যমকর্মীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিতে ছুটেছি। আবার নিয়মিত অসহায়-দুস্থ ও হিজড়াদের মাঝে দু’বেলা খাবার বিতরণের চেষ্টা করেছি। এসব করতে গিয়ে গত সপ্তাহে শারীরিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়ি। ডাক্তারের পরামর্শে বাসায় রেস্ট নিই। স্ত্রীও অসুস্থ হয়ে পড়েন।’

শাহিন বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হবো ধরে নিয়েই কাজে নেমে পড়েছিলাম। সেটাই শেষমেশ সত্যি হলো। গত ২৪ জুন আমারসহ স্ত্রী সুখী আক্তারের করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে দেই। পরদিনই রিপোর্ট পাই করোনা পজিটিভ। সঙ্গত কারণে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

Advertisement

তবে সপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় চিন্তিত পাথওয়ের নির্বাহী পরিচালক। তিনি করে বলেন, ‘আমার একটু খারাপই লাগছে যে স্ত্রীসহ আক্রান্ত হয়েছি। পাঁচ বছরের ও ছয় মাসের আমার দুটো শিশুসন্তান রয়েছে। ওদের খেয়াল রাখাটা বিশেষ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

মো. শাহিন বলেন, ‘নিজে অসুস্থ হলেও পাথওয়ে টিম থেমে নেই। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ দাফনের ডাক পড়ছে। আবার কখনো বা গণামাধ্যমকর্মীদের। তবে যত কষ্টই হোক পাথওয়ে টিম সচল থাকবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৈশ্বিক মহামানি করোনায় ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিন শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। অসুস্থ গণমাধ্যমকর্মীদের হাসপাতালে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিচ্ছে পাথওয়ে। ২৪ ঘণ্টা ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে এ সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা। এ পর্যন্ত ৪৮ গণমাধ্যমকর্মীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে পাথওয়ে টিম।

এ সামাজিক সংগঠনটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির সৎকার, দাফন কাজ ছাড়াও মানবিকতার তাগিদে গত রমজানে মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেছে। এছাড়া সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ‘হ্যালো ডক্টর’ নামে টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছে এবং লকডাউনে কর্মহীন মানুষের পাশাপাশি পথচারী ও তৃতীয় লিঙ্গের ১০ হাজারেও বেশি মানুষের মাঝে নিয়মিত বিনামূল্যে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে পাথওয়ে।

Advertisement

পাথওয়ের পরিচালক ইমারত হোসেন ইমু বলেন, আমাদের কাছে এখন চ্যালেঞ্জিং কাজ হচ্ছে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

তিনি বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে নেয়া কিংবা করোনায় মৃতদের দাফনের জন্য প্রচুর সুরক্ষাসামগ্রীর প্রয়োজন হয় পাথওয়ে টিমের। এই বিনামূল্যের সার্ভিসটি দিতে গিয়ে আমাদের খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।

নিবন্ধনের জন্য জনস্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান পাথওয়ের পরিচালক। করোনায় দাফনকার্য ও আক্রান্ত গণমাধ্যমকর্মীদের হাসপাতালে আনা-নেয়ার জন্য পাথওয়েকে নিবন্ধন দেয়ার মাধ্যমে লজিস্টিক সাপোর্ট দিলে পাথওয়ে সব ধরনের মানুষের কল্যাণে উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন পাথওয়ে পরিচালক ইমু।

জেইউ/এসআর/পিআর