আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে (নভেম্বর ৩) বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দেশটির জনগণের দ্বারা উপেক্ষিত হতে পারেন তার পক্ষে বার্তা দিচ্ছে নির্বাচনী জনমত জরিপগুলো। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মতো মারাত্মক মহামারি এবং অন্যান্য ইস্যু যে তার পুনর্নির্বাচনী লড়াইকে ডুবিয়ে দিয়েছে তা অনেকটা স্পষ্ট এসব জরিপে।

Advertisement

গত শুক্রবার (২৬ জুন) নির্দলীয় ‘কুক পলিটিক্যাল রিপোর্টের’ জাতীয় সম্পাদক অ্যামি ওয়াল্টার লিখেছেন, ‘বিগত দুই সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে হওয়া প্রতিটি জনমত জরিপ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনার মারাত্মক এক চিত্র তুলে ধরেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রতি সমর্থনের হার এখন ৪১ শতাংশ। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী এবং বারাক ওবামা প্রশাসনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে গড়ে ৯ থেকে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।’

এনপিআর/পিবিএস নিউজ আওয়ার/মেরিস্টের জনমত জরিপ অনুযায়ী ট্রাম্পকে জনগণের সমর্থন না দেওয়ার হার এখন রেকর্ড সর্বোচ্চ। গত ২২ থেকে ২৫ জুন দেড় সহস্রাধিক নিবন্ধিত ভোটারের অংশগ্রহণে ওই জরিপটি করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ।

Advertisement

এর আগে নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়ানা কলেজের জরিপে দেখা গেছে মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিনে ট্রাম্পের চেয়ে দুই অংকের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন বাইডেন। এছাড়া ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা ও উত্তর ক্যারোলিনায় তা যথাক্রমে ৬, ৭ ও ৯ শতাংশ। অথচ ২০১৬’র নির্বাচনে এসব রাজ্য ছিল ট্রাম্পের তীর্থভূমি।

ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং বারাক ওবামা প্রশাসনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

এছাড়া উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো বয়স্ক শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন কমে গেছে—অথচ পুনর্নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ভোটারের ভোটকেই তুরুপের তাস হিসেবে ভাবা হচ্ছিল। বলা হচ্ছে, মহামারি মোকাবিলা এবং বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ ও পুলিশি সহিংসতা নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত অবস্থান এর নেপথ্য কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. চার্লস বুলোক বলছেন, ‘ট্রাম্পের জন্য দুর্ভার্গজনক বিষয় হলো, কিছু সংখ্যক ভোটার বৈচিত্রপূর্ণ হওয়ায় এবং প্রজন্ম বদলের কারণেও প্রতি বছর পার হওয়ার সাথে সাথে তার শিবিরে থাকা লোকেদের তার প্রতি সমর্থন কমেছে।’

Advertisement

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘সাধারণত, যে ব্যক্তি কম ব্যবধানে নির্বাচিত হন তিনি তার সমর্থন আরও বাড়ানোর জন্য মানুষের আরও কাছাকাছি গিয়ে তাদের মন জয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু ট্রাম্প কখনও তা করেননি এবং তার শিবিরে নতুন লোকদের আনার লক্ষ্যে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তও তৈরি করা হয়নি।’

ওয়াল্টার লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের বড় চ্যালেঞ্জ দেশের বাইরে নয় অভ্যন্তরে। তিনি দায়িত্বে রয়েছেন এবং আপনি যখন দায়িত্বে থাকবেন তখন আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি দেশে মধ্যে বিরাজমান ইস্যুগুলো কার্যকরভাবে মোকাবিলা করছেন। এখন যা বর্ণবাদ ও করোনাভাইরাস। কিন্তু ভোটাররা তাকে উভয় ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে দেখছেন।’

জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর সৃষ্ট পরিস্থিতি সামলাতে ট্রাম্পকে ব্যর্থ মনে করছেন অনেকেই। এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ১০ জনে তিনজন ভোটার মনে করেন, ফ্লয়েড হত্যার পর ট্রাম্প সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন। অন্যদিকে তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে হওয়া আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৬১ শতাংশ ভোটার।

এছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোটার। আর এর বিরোধিতা করেছেন ৫২ শতাংশ ভোটার। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি থেকে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ মোকাবিলায় ট্রাম্পের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন আমেরিকনারা। এসব বিষয়ই তার জনপ্রিয়তা কমায় বড় ভূমিকা রাখছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, ‘আমাকে দেশের অনেক মানুষই ভালোবাসেন না। আর এ কারণেই হয়তো আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন ‘প্রেসিডেন্ট’ নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।’ ২৬ জুন ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা বলেছেন।

সূত্র: দ্য স্ট্রেইট টাইমস

এসএ