করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই মনগড়া রিপোর্ট সরবরাহ চক্রের মূলহোতা হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন ভার্চুয়াল আদালত।
Advertisement
রোববার (২৮ জুন) ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের (ভার্চুয়াল আদালত) আদালতে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এর আগে বুধবার (২৪ জুন) হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিমানবন্দর, আশকোনার বাড়ি ও গুলশান-২ এর কনফিডেন্স টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ।
Advertisement
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হুমায়ুন কবির এ চক্রের মূলহোতা। তানজীনা পাটোয়ারী তার স্ত্রী। তাদের নেতৃত্বে চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতেন এবং ভুয়া রিপোর্ট দিতেন। চক্রটি জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্যমতে, আটকরা করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দেয়। তবে নমুনা সংগ্রহ করার পর তা আর পরীক্ষা করা হয় না। তাদের নেই কোনো ল্যাব। কম্পিউটারে ফলাফল লিখে ই-মেইলে তা রোগীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই ইতোমধ্যে ৩৭ জনের ভুয়া কোভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা।
নমুনা সংগ্রহের সময় রোগীর বাহ্যিক উপসর্গ দেখে একটা ধারণা থেকে ফলাফল তৈরি করেছে তারা। করোনার বাহ্যিক উপসর্গ দেখা দিলে, সেক্ষেত্রে তার পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ উল্লেখ করা হয়। কোনো উপসর্গ না দেখা দিলে তার রিপোর্টে নেগেটিভ উল্লেখ করা হয়।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বলেন, ‘গুলশানের কনফিডেন্স টাওয়ারের অফিসে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা কম্পিউটারে জাল রিপোর্ট পাওয়া গেছে।’
Advertisement
জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তারা ৩৭ জনের করোনা নমুনা সংগ্রহ করে মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছেন। বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা তারা নিয়েছেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন উর রশিদ বলেন, ‘এই চক্রটি আগে জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নামের প্রতিষ্ঠানে বুথের মাধ্যমে করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন লোকের নমুনা সংগ্রহের চাকরি করতেন। প্রতিষ্ঠানটি আইইডিসিআর থেকে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুমোদিত।’
গত ১২ এপ্রিল তারা এই প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে তারা অনলাইনে ওই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করে বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়।
সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয়। তাদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন।
তেঁজগাও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল উদ্দীন বলেন, ‘বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে দু’টি প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই। তারপরও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে আসছিল। তারা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে।’
জেএ/এমএফ/এমএস