স্বাস্থ্য অধিদফতরে শীর্ষপদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের জোর গুঞ্জন চলছে। বেশ কিছুদিন ধরে মুখে মুখে এ কথা চাউর হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানের দেয়া এক স্ট্যাটাস নিয়ে সারাদেশের চিকিৎসক সমাজ বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে।
Advertisement
গতকাল শনিবার (২৭ জুন) দুপুরে দেয়া স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘আমরা অবগত হয়েছি, প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরে সিএমএসডির মতো আমলা পদায়নের পাঁয়তারা চলছে। আপনারা ইতোমধ্যে গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আর তার সরকারকে অনেক বিব্রত করেছেন, আপনাদের ব্যর্থতার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাবেন না, বেশি ধৃষ্টতা দেখাবেন না। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ এ দেশের চিকিৎসক সমাজ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। যারা এই ষড়যন্ত্র করছেন তাদের হুঁশিয়ার করছি, আমাদের এই করোনাকালে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামতে বাধ্য করবেন না।’
তার এমন স্ট্যাটাসের পর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশের চিকিৎসকরা বিক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন এবং বিএমএ ও স্বাচিপ নেতাদের কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি দেয়ার অনুরোধ জানাতে থাকেন।
স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানের কাছে স্ট্যাটাস দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল সূত্রে আমাদের কানে স্বাস্থ্য অধিদফতরে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বেশকিছু পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের জোর চিন্তাভাবনা নেয়া হচ্ছে— এমন তথ্য জেনে স্ট্যাটাস দেই। প্রশাসক নিয়োগের এ ধরনের সিদ্ধান্ত হবে ধৃষ্টতার শামিল। এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তাৎক্ষণিকভাবে, বর্তমান করোনাকালেও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো এবং সিদ্ধান্ত বাতিল না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচি চলানো হবে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও শীর্ষপদে নিয়োগের সুযোগ এমনিতেই খুবই সীমিত। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য সেক্টরের উন্নয়নে বছরের পর বছর চাকরি করেও পদোন্নতি পান না।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একই সঙ্গে বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা সচিব হয়ে অবসরে যান। তার সঙ্গে যোগ দেয়া স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা হয়তো উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা হিসেবেই চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে হতাশা বিরাজ করছে।
স্বাচিপ সভাপতি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা পদে এখন চিকিৎসক শিক্ষকদের সংখ্যাই বেশি। ফলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির কোনো জায়গা এখানে নেই। এ অবস্থায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আরও হতাশ হয়ে পড়বেন।
অধ্যাপক আর্সলান বলেন, হতাশাগ্রস্ত সৈন্য দিয়ে যেমন যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় না তেমনি পদোন্নতিবঞ্চিত মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে স্বাস্থ্য কর্মসূচির সঠিক বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
Advertisement
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার বদলির পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। সাধারণ এ পদে সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের কর্মকর্তারাই দীর্ঘদিন নিয়োগ পেয়ে আসছেন। এবার তার ব্যতিক্রম হলো।
সিএমএসডির পরিচালক পদে কেন একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার নিয়োগ মেনে নিলেন, তখন কেন নিয়োগের বিরোধিতা কিংবা কোনো আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা করলেন না— এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘প্রতিবাদ তখন করেছি। তবে তখনকার করোনা পরিস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আন্দোলনে যায়নি। করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে আন্দোলনে যাবেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়ে রেখেছি।’
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষপদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত— এমন সিদ্ধান্তের খবরে গতকাল রাতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা জরুরি বৈঠকে বসেন।
বৈঠকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হলে কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে হবে—সে বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি বিএমএ মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য নয়।’
এমইউ/এমএআর/এমএস