সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাগামছাড়া ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ বিভাগে প্রথম এক হাজার রোগী আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫৭ দিনে। আর সর্বশেষ এক হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন মাত্র এক সপ্তাহে। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনায় নিহতের সংখ্যাও। গত ৪৮ ঘণ্টায় শুধু সিলেট জেলায়ই মারা গেছেন ৭ জন। সিলেট বিভাগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে।
Advertisement
সিলেটে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী হিসেবে চিকিৎসক মঈন উদ্দিনের মৃত্যু হয় গত ১৫ এপ্রিল। মৃত্যু ও আক্রান্তের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি সিলেট জেলায়। আর সর্বনিম্ন মৃত্যু ও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যায় আছে মৌলভীবাজার জেলা।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে চার হাজার ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিভাগের চার জেলায় গত সাত দিনে এক হাজার ১৫৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সিলেট বিভাগে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় সিলেট জেলায় গত ৫ এপ্রিল। এরপর শনাক্তের সংখ্যা এক হাজারে পৌঁছাতে সময় লাগে ৫৭ দিন। গত ১ জুন বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়ায়। গত ১২ জুন বিভাগের পরের এক হাজার শনাক্ত হয়। দ্বিতীয় এক হাজার রোগী শনাক্ত হতে সময় লাগে মাত্র ১২ দিন। আর তৃতীয় এক হাজার শনাক্ত হয় ২১ জুন। এতে সময় লাগে মাত্র ৯ দিন। আর সর্বশেষ ২৮ জুন সকাল আটটা পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ১৫৩ জন। এই শেষ ১ হাজার শনাক্ত হতে সময় লেগেছে মাত্র সাত দিন। এই সাত দিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৫৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে আক্রান্ত ও মৃতে শীর্ষে রয়েছে সিলেট। জেলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৫০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫৫ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১০১ জন, পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন ২৪৫ জন। এছাড়া জেলায় এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল ৩ হাজার ৩৩৯ জনকে। ১৪ দিন মেয়াদ পার হওয়ায় ২ হাজার ৮৭৩ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকিরা এখনও কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে আছেন।
Advertisement
আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সুনামগঞ্জ। এ পর্যন্ত সেখানে ৯৫১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১০০ জন। পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন ৩৭৪ জন। আর মারা গেছেন পাঁচজন। এছাড়া জেলায় এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় ৬ হাজার ৩৩ জনকে। এরমধ্যে ৫ হাজার ৬৭৭ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকিরা এখনও কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে আছেন।
আক্রান্তের সংখ্যায় তৃতীয় অবস্থানে আছে হবিগঞ্জ। এ পর্যন্ত সেখানে ৫৩৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৩ জন। পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন ১৯১ জন। মারা গেছেন ছয়জন। এছাড়া জেলায় এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় ২ হাজার ৮৯০ জনকে। ২ হাজার ৮২০ জনকে কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকিরা এখনও কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে আছেন।
অন্যদিকে আক্রান্তের সংখ্যায় নিচে অবস্থান করছে মৌলভীবাজার জেলা। এ জেলায় ৪১৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মাত্র ৬ জন, পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন ১৭৩ জন। আর মারা গেছেন চারজন।
এছাড়া জেলায় এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় ২ হাজার ৯৪৯ জনকে। মেয়াদপূর্ণ হওয়ায় ২ হাজার ৭২৫ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকিরা এখনও কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে আছেন।
Advertisement
পুরো বিভাগে এ পর্যন্ত এক হাজার ৮৩ জন সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট জেলার তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রক) ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, সিলেট বিভাগের প্রত্যেক জেলায় করোনা মোকাবিলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। আক্রান্তদের উপসর্গের মাত্রা কম থাকলে তাদের বাড়িতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আর উপসর্গ বেশি হলে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তাদের বাড়িতে আরও ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে বলে দেয়া হচ্ছে। এরপরও তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
ছামির মাহমুদ/এফএ/এমকেএইচ