জয়পুরহাট জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখনো সবুজ শ্যামল ধান ক্ষেতের সমারোহ। এই ধান পাকার পর তা কাটা-মাড়াই করতে আরো সময় লাগবে প্রায় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে এই সবুজ ক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে দেখা মিলেছে সোনালী রঙের পাকা ধান ক্ষেত। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জানা গেছে, এ মৌসুমে ৭০ হাজারেরও বেশি হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে আমন ধান। এসব আমন ধানের মধ্যে কিছু নতুন জাতের ধান চাষ করছেন জেলার বেশ কিছু সংখ্যক আগ্রহী কৃষক। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর ও আক্কেলপুর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে বেশ কয়েকটি নতুন জাতের ধান দেখা গেছে জেলার অন্যান্য এলাকার তুলনায় বেশি পরিমেণে। এখন ধান-চালের দাম বেশ চড়া হওয়ায় এই নতুন জাতের ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে তাই হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। জয়পুরহাট সদরের মধ্য দাদড়া-জৈন্তিগ্রামের বেলাল হোসেন, হেলকুণ্ডা গ্রামের ফজের আলী আগাম জাতের ধান চাষিরা জানান, কৃষি বিভাগের পরাামর্শ নিয়ে ধানি গোল্ড, বিনা-৭ জাতের ধান বীজ সংগ্রহ করে সেগুলো বীজতলা থেকে চারা করার পর অন্যান্য আমন ধানের মত করেই রোপণ করেছিলাম। সদরের পুরানাপৈল গ্রামের ময়েজ উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, এ জাতের ধান চাষ করে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে মাত্র দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা, আর বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ১৭ থেকে ২০ মণ হারে। এতো কম খরচে অন্য কোনো ফসলই চাষ করা সম্ভব নয় বলে কৃষকরা জানান।কাটা-মাড়াই শেষে আশানুরূপ উৎপাদন, অসময়ে ঘরে নতুন ধান লাভের আমেজ আর ভালো বাজার মূল্য পেয়ে এ জাতের ধান চাষিদের ঘরে ঘরে বইছে খুশির বন্যা। সদরের কাদোয়া গ্রামের মতিয়র রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এই ধান চাষে উৎপাদন খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি সময়ও কম লাগে। ফলে একই জমিতে বছরে চারটি ফসল আবাদ করা যাবে। আক্কেলপুর উপজেলার কাশিরা গ্রামের মকবুল ও সুলতান হাবিব জাগো নিউজকে জানান, নতুন জাতের ধান চাষ করেছিলেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পােকামাকড় বা রোগ বালাইয়ের আক্রমণ না হওয়ায় বেশ ভালো ফলন হয়েছে বলে তারা বিঘা প্রতি ১৮/১৯ মণ ধান পেয়েছেন। বর্তমানে এ জাতের ধানের বাজার মূল্য ৫৫০ থেকে ৬২০ টাকা পর্যন্ত। একই সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, এখন কৃষকদের ঘরে ধান থাকে না। বাজারে চালের দামও অনেক চড়া। তাই আগাম জাতের ধান আগেই ঘরে তুলতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আগাম জাতের আমন ধান চাষিদের ঈর্ষণীয় সাফল্য পাওয়ায় আগামীতে অনেক কৃষক এই জাতের ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। জেলার কালাই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের আনোয়ার পাশা, পাঁচবিবি উপজেলার কড়িয়া গ্রামের দুলাল হোসেনসহ অনেক কৃষক জানান, অসময়ে ধান লাভের জন্য আগামীতে তাদের আমন ধানের জমিগুলোর মধ্যে কিছু জমিতে নতুন জাতের এই ধান রোপণ করবেন। জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এ জেড এম ছাব্বির ইবনে জাহান জাগো নিউজকে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উফসি জাতের ৪৯, ৩৩, বিনা-৭ সহ বেশ কিছু নতুন জাতের ধান বীজ এ বছর আমন ধান চাষ মৌসুমে আগ্রহী কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এসব ধান চাষ করে বেশ সাফল্য পাওয়অ আগ্রহী চাষিরা দাবি করছেন। ইতোমধ্যে আগাম জাতের ধান চাষ করতে জেলার কৃষকদের মাঝে অনেকটায় সাড়া পরেছে বলেও তিনি দাবি করেন। জয়পুরহাটে পরীক্ষামূলকভাবে আগাম জাতের ধান চাষ করে ঈর্ষণীয় সাফল্যে অন্যান্য চাষিরা স্বাভাবিক কারণে ঝুঁকে পড়ছে এ ধান চাষে। জয়পুরহাটের কৃষকদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আগাম জাতের ধান চাষ করে দেশকে শষ্য ভাণ্ডারে পরিণত করা হবে, এমন আশা করছেন এ জেলার সাধারণ মানুষ।রাশেদুজ্জামান/এমজেড/আরআইপি
Advertisement